Advertisement
E-Paper

Schools reopening: আমরা আর শূন্য ক্লাসরুম দেখতে চাই না

করোনা-কালে এর আগেও দু’বার স্কুল খুলেছিল, তবে তার স্থায়িত্ব বেশি দিন ছিল না। এখন শুধু একটাই প্রার্থনা, ফের যেন স্কুলের দরজা আর বন্ধ না হয়।

বিভাস সান্যাল

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:১৫
(উপরে) দীর্ঘ দিন পরে ফের বাজল স্কুল শুরুর ঘণ্টা। উত্তর কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে। (নীচে) মধ্য কলকাতার হিন্দু স্কুলে দূরত্ব-বিধি মেনে ক্লাসে বসেছে পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার।

(উপরে) দীর্ঘ দিন পরে ফের বাজল স্কুল শুরুর ঘণ্টা। উত্তর কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে। (নীচে) মধ্য কলকাতার হিন্দু স্কুলে দূরত্ব-বিধি মেনে ক্লাসে বসেছে পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।

পড়ুয়া ছাড়া শিক্ষকদের কোনও অস্তিত্ব আছে? পড়ুয়া ব্যতীত স্কুলের কোনও গুরুত্ব আছে? সেই পড়ুয়ারা আবার ফিরেছে স্কুলে, এর চেয়ে আনন্দের আর কী-ই বা হতে পারে? এত দিন পড়ুয়াহীন ফাঁকা স্কুলে নিজেকে কেমন গুরুত্বহীন বলে মনে হত। এ বার ফের স্কুলে

পড়ুয়াদের কোলাহল শুনতে পাচ্ছি। এত দিন এই আওয়াজটা না থাকায় কোথায় যেন একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। জীবনটাই যেন অর্থহীন মনে হচ্ছিল। আজ মনে হল, স্কুলের ছন্দ ফিরে এসেছে। আমরা নিজেদের অস্তিত্বও টের পাচ্ছি।

সমাজের প্রতি আমাদের অবদান কী— যখন এই প্রশ্নটা করি, তখন উত্তর দেয় প্রাক্তন ছাত্রেরা। তারা যখন স্কুল থেকে বেরিয়ে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে হঠাৎ এক দিন স্কুলে এসে আমাদের কুশল জিজ্ঞাসা করে বা ফোনে খবর নেয়, তখন খুব ভাল লাগে। ওদের সাফল্যের কথা শুনে মনে হয়, সমাজ তৈরির পিছনে আমাদেরও অবদান রয়েছে। অতিমারি আবহে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় এই বিশ্বাসটাই নড়ে গিয়েছিল। অনলাইন ক্লাসে যে পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি, তা নয়। কিন্তু মুখোমুখি দেখা হয়ে কথা বলা, পড়ানো, বকুনি দেওয়ার বিকল্প যে কোনও দিন অনলাইন ক্লাস হতে পারে না! স্কুলের দরজা খোলায় তাই এ বার স্বস্তি পেলাম।

করোনা-কালে এর আগেও দু’বার স্কুল খুলেছিল, তবে তার স্থায়িত্ব বেশি দিন ছিল না। এখন শুধু একটাই প্রার্থনা, ফের যেন স্কুলের দরজা আর বন্ধ না হয়। স্কুলের ঘণ্টার আওয়াজ যে কতটা প্রিয়, তা আজ যেন আরও এক বার উপলব্ধি করলাম।

এত দিন স্কুলের ছাত্রদের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা না হলেও ফোনে কথা হয়েছে। অনেকেই ফোনে জিজ্ঞাসা করেছে, ‘স্কুল কবে খুলবে স্যর?’ রাস্তাঘাটে কোনও ছাত্র বা তার অভিভাবকের সঙ্গে দেখা হলেও সেই একই প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। পুত্রসম ছাত্রদের কোনও নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারিনি। শুধু বলেছি, করোনা-কালে সাবধানে থাকতে। পরিস্থিতি ভাল হলে নিশ্চয়ই একদিন স্কুল খুলবে। তত দিন সবাইকে ভাল থাকতে হবে, সুস্থ থাকতে হবে।

এত দিন পরে ওদের সঙ্গে স্কুলে দেখা। অনেকেই কত বড় হয়ে গিয়েছে! বিশেষত ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ারা, যারা এখন অষ্টম শ্রেণিতে উঠে গিয়েছে, তারা লম্বায় বেড়েছে অনেকটাই। তবে ওদের চিনতে কোনও অসুবিধা হয়নি। এটাই তো ওদের দ্বিতীয় বাড়ি।

করোনা-কালে নানা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা সকলে গিয়েছি। আমাদের স্কুলের দু’জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর প্রাণ কেড়েছে কোভিড। সেই প্রিয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে ফের আজ স্কুল শুরু হল। প্রথম দিন পড়ুয়াদের বললাম, এখনও করোনা চলে যায়নি। তাই স্বাস্থ্য-বিধি মেনে স্কুলে আসতে হবে। হয়তো এখনই করোনা পুরোপুরি চলে যাবে না। তাই এই ‘নিউ নর্মাল’কে মেনে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।

তবে এই ‘নিউ নর্মালে’ কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে যেন সুচিকিৎসাটাও হয়, সেই আশা করব। সেই সঙ্গে আমাদের সাবধানে থাকতে হবে। অসতর্ক হলেই ফের বাড়বে সংক্রমণ, তখন ফের স্কুল বন্ধের উপক্রম হবে। আমরা কেউই আর শূন্য ক্লাসরুম দেখতে চাই না।

প্রধান শিক্ষক, স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল

School Reopening Students coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy