অনলাইনে তিন মাসের অগ্রিম বাড়িভাড়া দিয়েছিলেন পাইকপাড়ার মানব চক্রবর্তী। কিন্তু সে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে কি না, জানা নেই তাঁর। নিয়ম অনুযায়ী, টাকা জমা দেওয়ার প্রমাণ স্বরূপ তাঁর মোবাইলে এসএমএস আসার কথা। কিন্তু দু’মাস হতে চলল, এখনও তা আসেনি। একই হাল হাওড়ার রিমা হালদার, পম্পা সর্দার, বেলগাছিয়া ভিলার সরকারি আবাসনের বাসিন্দা সুখরঞ্জন সেনগুপ্তরও। ভাড়া জমা দেওয়ার লাইন এড়াতে তাঁরাও অনলাইনেই টাকা জমা দিয়েছিলেন।
আবাসন দফতর সূত্রে খবর, জুলাই মাসেই ঘটা করে ঘোষণা হয়েছিল এই পরিষেবার কথা। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তাই এই বিভ্রাট। অনলাইনে টাকা জমা দেওয়ার বিষয়ে আবাসন দফতরে খোঁজ নিতে গেলে বরং কর্মীরাই বলছেন, গোলমাল এড়াতে অনলাইন এড়িয়ে চলাই ভাল। কবে থেকে ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হবে, তা-ও বলতে পারেননি দফতরের কর্তারা।
দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের অনলাইন পরিষেবা চালু হতে ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টারের (এনআইসি) অনুমোদন লাগে। তারাই ‘এসএসএল’ (সিকিওর সকেট্স লেয়ার) সার্টিফিকেট দেয়, যা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আবাসন দফতরের ওয়েবসাইট (http://www.wbhousing.gov.in) এখনও ‘এসএসএল’ সার্টিফিকেট পায়নি। বিশেষ়জ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এসএসএল সার্টিফিকেট না থাকলে সাইট নিরাপদ নয়। যে কোনও মুহূর্তে ওয়েবপেজ হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
দফতরের এক আধিকারিক জানান, রাজ্য আবাসন দফতরের এসএসএল সার্টিফিকেট মিলতে হায়দরাবাদ থেকে একটি সফ্টওয়্যার আনা হবে। তবে তা কবে এসে পৌঁছবে, বলতে পারেননি তিনি। এখন যে ব্যবস্থায় আবাসিকেরা অনলাইনে বাড়িভাড়া দিচ্ছেন তা হল ‘গ্রিপস’ (গভর্নমেন্ট রিসিপ্ট পোর্টাল সিস্টেম)। কিন্তু এর মাধ্যমে টাকা জমা দিতে গিয়েই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের। আবাসন দফতরের আধিকারিকেরাই বলছেন, গ্রিপস-এর মাধ্যমে আবাসিকেরা অনলাইনে ভাড়া দিলেও দফতরে তার কোনও তথ্য মজুত থাকছে না। ভাড়াটেরা ভাড়া জমা দেওয়ার পরে কেন এসএমএস আসছে না, সে বিষয়েও কোনও সদুত্তর মেলেনি ওই দফতরের কর্মীদের কাছে। বিভাগের এক কর্মীর কথায়, ‘‘আমরা ভাড়াটেদের এই মুহূর্তে অনলাইনে টাকা জমা দিতে নিষেধ করছি। দিল্লি থেকে অনুমোদন না মিললে অনলাইন পরিষেবার সুবিধা পাবেন না সাধারণ মানুষ।’’ এ প্রসঙ্গে রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আবাসন দফতরের বিশেষ সচিব আশিস চক্রবর্তী আবার বলেন, ‘‘ভা়ড়াটেরা অনলাইনে ‘গ্রিপস’-এর মাধ্যমে ভাড়া দিচ্ছেন। এতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
আবাসন দফতর বলছে, রাজ্যে মোট ৯২টি আবাসন কমপ্লেক্স রয়েছে। ফ্ল্যাটের সংখ্যা ২০ হাজার ৬৬৫টি। আর ভাড়াটেদের থেকে সরকারের বছরে আয় হয় প্রায় ৪ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই যাঁরা অনলাইনে টাকা জমা দিয়েছেন, তাঁদের টাকা সত্যিই সরকারি খাতায় জমা হয়েছে কি না জানতে নব মহাকরণের আবাসন দফতরে হাজির হচ্ছেন বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও। বিষয়টি নিয়ে দফতরের কর্তাদেরও দ্বারস্থ হয়েছেন অনেকে। বেলগাছিয়া ভিলা সরকারি আবাসনের টেন্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘‘অনলাইন প্রযুক্তির কাজ আগে শেষ করে তবেই আমাদের নোটিস পাঠানো উচিত ছিল সরকারের। এখন ভাড়া জমা দিয়েও আদৌ তা সরকারি কোষাগারে পৌঁছচ্ছে কি না, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।’’ অনেক আবাসিক আবার অভিযোগ করেছেন, অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া নিয়ে সমস্যার কথা জানাতে এসে দফতরের অফিসারদের দুর্ব্যবহারের শিকারও হয়েছেন তাঁরা। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আবাসন দফতরের শীর্ষকর্তারা।
এ সবের বাইরেও প্রশ্ন তুলেছেন আবাসন দফতরের ভাড়াটেরা। তাঁরা বলছেন, অনলাইন প্রযুক্তিতে খামতি থাকার ফলে অনেকেরই হয়তো ভাড়া ঠিক মতো জমা পড়েনি। অনেকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেও ভাড়া দিতে পারছেন না। ‘‘এর ফলে জরিমানা বাবদ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে আমাদের। সরকার কি তা মকুব করবে?’’— প্রশ্ন এক বৃদ্ধের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy