প্রেরণা: ইস্টবেঙ্গল মাঠে অর্ণব মণ্ডলের সঙ্গে অনিকেত। নিজস্ব চিত্র
রক্তের জটিল রোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার অভ্যাস ছোট থেকেই ছিল। কিন্তু পাশে ছিলেন মা। কিছু দিন আগে হঠাৎ মা মারা যান। তার পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত পার্কসার্কাসের অনিকেত ধরের মানসিক জোর যেন কিছুটা কমে গিয়েছিল।
কিন্তু বছর ষোলোর অনিকেতকে ভাল রাখতে ইচ্ছেপূরণকেই হাতিয়ার করল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
অনিকেতের পছন্দের খেলা ফুটবল। ফুটবল এবং ইস্টবেঙ্গল তাঁর কাছে যেন সমার্থক। লাল-হলুদ রঙের জার্সি পরে কে কবে-কেমন খেলেছে, তা এক বারে বলে ফেলে ক্লাস টেনের পড়ুয়া। তাই এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তার ইচ্ছে জানতে চাইলে এক বাক্যে অনিকেত বলেছিল, ‘‘এক বার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবটা দেখতে চাই। প্রিয় খেলোয়াড় অর্ণব মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলতে পারল আর কিছু চাই না।’’
অনিকেতের ইচ্ছের কথা জানার পরে সংস্থার কর্তারা ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যোগাযোগ করা হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের খেলোয়াড়় অর্ণব মণ্ডলের সঙ্গেও। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁরা অনিকেতকে ক্লাবে নিয়ে যেতে বলেন।
এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে অনিকেত তাঁর প্রিয় ক্লাবে হাজির হয়। পছন্দের খেলোয়াড় অর্ণব মণ্ডল তাকে ক্লাব ও খেলার মাঠ ঘুরিয়ে দেখান। অল্প সময়ের মধ্যেই ফুটবলপ্রেমী ও ফুটবলারের বন্ধুত্বও হয়ে যায়। তারকাকে সামনে পেয়ে তখন অনিকেতের মনে হাজার প্রশ্ন। ঘণ্টা খানেক ধরে দু’জনের আড্ডা চলে।
ক্লাব থেকে বেরিয়ে উজ্জ্বল চোখ দু’টি যেন আনন্দে ভরে যায় অনিকেতের। তার কথায়, ‘‘স্বপ্নের মানুষগুলিকে দূর থেকে দেখে এসেছি। এতক্ষণ তাঁর সামনে বসে আড্ডা দেব ভাবতেই পারিনি।’’ ছেলেকে হাসতে দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না অনিকেতের বাবা নতুন ধর। তাঁর কথায়, ‘‘কতদিন পরে ছেলেটা প্রাণভরে হাসছে, কথা বলছে। দেখে ভাল লাগছে।’’
অনিকেতের ইচ্ছেপূরণ করতে পেরে খুশি ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তারাও। সংগঠনের তরফ থেকে সাহানা সেন বলেন, ‘‘জটিল, মারাত্মক রোগে আক্রান্ত বাচ্চাদের ইচ্ছেপূরণ করাই আমাদের উদ্দেশ্য। ওদের সুস্থ করে তোলার ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। কিন্তু ওদের মন ভাল রাখার চেষ্টা করতেই পারি। অনিকেতের ইচ্ছেপূরণ করতে পেরে ভাল লাগছে। ও ভাল থাকলে আমাদের চেষ্টা সফল হবে।’’
চিকিৎসকদের একাংশ আশা করছেন, এই আনন্দ অনিকেতকে সুস্থ করতে অনেকটা সাহায্য করব। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, থ্যালাসেমিয়া রক্তের রোগ। হিমোগ্লোবিন প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কম মাত্রায় থাকলে এই সমস্যা দেখা যায়। বারবার রক্ত নিয়ে জীবনযাপন করতে হয় এই রোগে আক্রান্তদের। ওষুধ, সুচিকিৎসার পাশাপাশি সুস্থ থাকার জন্য মন ভাল থাকা খুব জরুরি। ছোটবেলা থেকে অনিকেত শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। মা মারা যাওয়ার পরে মানসিক ভাবেও সে ভেঙে পড়েছিল। এই আনন্দ সাময়িক হলেও ওর ভাল থাকার রসদ জোগাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy