Advertisement
০২ মে ২০২৪
Durga Puja 2023

পুজো-মানচিত্রে উদয় নব্য তারকাদের

কলকাতার পুজোর নব্য তারকা চোরবাগান বা বাগুইআটির অর্জুনপুর আমরা সবাই-ও ২০১৭-’১৮ থেকে টানা বড় পুরস্কার পাচ্ছে। ভবতোষ সুতারের কাজ দেখার জন্য অখ্যাত অর্জুনপুর পুজো-রসিকদের অবশ্য গন্তব্য।

An image of Tala Pratya

২০২৩-এ টালা প্রত্যয়ে ৩৩ হাজার বর্গফুটের মণ্ডপে শুধু থিমের বাজেটই দু’কোটি ছুঁইছুঁই। —ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৪৩
Share: Save:

বছর ২৫ আগে বেহালার ‘সহযাত্রী’র ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার পুজোয় প্রতিমাকে সাজিয়েছিলেন সুশান্ত পাল। ২০২৩-এ টালা প্রত্যয়ে ৩৩ হাজার বর্গফুটের মণ্ডপে শুধু থিমের বাজেটই দু’কোটি ছুঁইছুঁই। স্থানীয় সূত্রের মতে, পুজোর মোট খরচের অঙ্ক আরও বেশি হবে।

সাবেক ঘরানার পুজো সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের একডালিয়া এভারগ্রিনের গরিমা এখনও ফিকে নয়। সেখানকার উদ্যোক্তা স্বপন মহাপাত্র বলছেন, “কর্পোরেট ও অনুদান সমান সমান পাই। ৪০ লক্ষেই দিব্যি পুজো হয়!” একদা কম বাজেটে নজর কাড়ত থিমের পুজো। এখন থিম বা শিল্পের কৌলীন্যেই পুজো ওজনদার। তবে সুশান্তের মতে, এখনও ছোট জায়গায় কম বাজেটের থিম পুজো সম্ভব। “কিন্তু পুজোর এলাকা, বাজেট বাড়লে ক্ষতি কী? ১০ কোটির পুজোয় কর্মসংস্থানও বিপুল হবে,”— হাসছেন তিনি! ত্রিধারা-র পুজোর কর্ণধার, পুরকর্তা দেবাশিস কুমারের ব্যাখ্যা, পুজো বাড়লে রাজ্যের জিডিপি বাড়বে।

কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে? বছর দশেক আগে উত্তর কলকাতার একটি পুজো ৭৫ লক্ষ বাজেটে ৭৫ বছর উদ্‌যাপনের পরে খানিক নিষ্প্রভ। দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির বা বেহালার নূতন দলও ইদানীং নামী শিল্পীর খরচ বাঁচিয়ে বাজেটে রাশ টানছে। “শুধু থিম নয়, ভোগ এবং নবরাত্রি জুড়ে আনুষ্ঠানিকতাতেও আমাদের ভালই খরচ। তবে ধারধোর করে জাঁকের পুজো নামিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে চাই না”, বললেন কাশী বোস লেনের পুজোকর্তা লোকেশ চৌধুরী। মন্ত্রীর ‘আশীর্বাদধন্য’ সুরুচি সঙ্ঘের মতো কোটি ক্লাবের পুজোও খরচের বিষয়ে সাবধানী। “টাকার সংস্থান থাকলেও অপচয় ভাল নয়”, বলছেন পুজোকর্তা কিংশুক মৈত্র।

পুজো-মানচিত্রের কোথাও না-থাকা কয়েকটি পুজো সম্প্রতি উল্কার গতিতে উঠে এসেছে। ২০১৭ সালে প্রথম বার বড় পুরস্কার জেতে অজ্ঞাতকুলশীল টালা প্রত্যয়। এখন থিমের পিছনে এত খরচ কলকাতায় কোনও পুজোর নেই। এ পুজোর অধিনায়ক ধ্রুবজ্যোতি বসু (শুভ) বলছেন, “আমাদের প্রধান জোর কর্পোরেট-লগ্নি। প্রায় সবটা খরচ থিম বা পুজো-শিল্পে। গোড়া থেকে এক্সেল শিট পরিকল্পনায় কাকে কী ভাবে ধরতে হবে ঠিক করি। শহরের সব পুজোর ব্র্যান্ডিংয়ে নজর রাখি। তাই কলকাতার প্রাণকেন্দ্র থেকে দূরে টালাতেও কর্পোরেট আনুকূল্য পাচ্ছি।” নিজের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজের সুবাদে শাসক দলেরও ‘ঘনিষ্ঠ’ শুভ। পুজো ঘিরে নানা ধরনের পরিকল্পনা, বিদেশিদের শহরে আনার উদ্যোগের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে। শুভর কথায়, “আমি বিশ্বাস করি, গোটা কলকাতার পুজো আরও বড় হলে আমার পুজোও বাড়বে। বা কলকাতার পুজোর প্রসারেই আমায় বড় মাপের পুজো করতে হবে।”

কলকাতার পুজোর নব্য তারকা চোরবাগান বা বাগুইআটির অর্জুনপুর আমরা সবাই-ও ২০১৭-’১৮ থেকে টানা বড় পুরস্কার পাচ্ছে। ভবতোষ সুতারের কাজ দেখার জন্য অখ্যাত অর্জুনপুর পুজো-রসিকদের অবশ্য গন্তব্য। পাড়ার মহিলাদের ক্লাবের সক্রিয়তা অর্জুনপুরের পুজোর শক্তি। তবে কামারহাটির এক পুর আধিকারিক, এ পুজোর অন্যতম প্রাণপুরুষ। সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে ইডি-র অভিযানের ফলে তিনি কিছুটা নেপথ্যচারী। বিদেশে সি-ফুড ব্যবসায় যুক্ত জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও চোরবাগানে একাই ১০০! তিনি বলছেন, ‘‘যতটুকু সাধ্য, লড়ছি। আমাদের কর্পোরেট পুঁজি ৩০ শতাংশের বেশি নয়।” ভবতোষ সুতার, পার্থ দাশগুপ্তের কাজের সুবাদে পরিচিতি তৈরি হয়েছে ঠাকুরপুকুরের স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক সর্বজনীনেরও। কোটি না-ছুঁলেও তাদেরও বাজেট বেড়েছে। “অনুদান এবং কর্পোরেট লগ্নি দুটোই গুরুত্বপূর্ণ”, বলছেন পুজোকর্তা অজয় মজুমদার। কারণ, ঠাকুরপুকুর আর বালিগঞ্জে হোর্ডিংয়ের দর এখনও এক নয়!

শিল্পের ধার ধারে না, পুজো প্রতিযোগিতায় যায় না। কিন্তু বড় মাপের চমকে ধারাবাহিক ভাবে ভিড় টানে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারও। পুজোকর্তা বিজেপি নেতা সজল ঘোষও তাঁর রামমন্দির থিম, আশপাশের স্টল মিলিয়ে ১০০০ লোকের কর্মসংস্থানের কথা বলছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE