Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিয়ম মানা হলে কি মৃত্যু এড়ানো যেত বিমানকর্মীর

কলকাতায় প্রথম হলেও একই ধরনের একটি ঘটনা ১৯৯৭ সালে ঘটেছিল মুম্বইয়ে।

মৃত রোহিত বীরেন্দ্র পাণ্ডের পরিচয়পত্র।

মৃত রোহিত বীরেন্দ্র পাণ্ডের পরিচয়পত্র।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৪
Share: Save:

নিয়ম ঠিকমতো মানা হলে মঙ্গলবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে টেকনিশিয়ান রোহিত বীরেন্দ্র পাণ্ডেকে (২২) বেঘোরে মারা যেতে হত না বলেই মনে করছেন ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ।

ওই রাতে স্পাইসজেটের সিআরজে বিমানে কাজ করার সময়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা যান রোহিত। ছোট ওই বিমানের পিছনের ডান দিকের চাকার কাছে কাজ করছিলেন তিনি। বিমানের পেটে যে খোপের মধ্যে চাকা ঢুকে যায়, সেই খোপে মাথা ঢুকিয়ে কাজ করার সময়ে আচমকা ওই খোপের দু’দিকের পাল্লা বন্ধ হয়ে যায়। অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশ্ন, ‘‘দরজা যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, তার জন্য লক ব্যবহার করা হয়। সেটা কেন ব্যবহার করা হয়নি?’’

কলকাতায় প্রথম হলেও একই ধরনের একটি ঘটনা ১৯৯৭ সালে ঘটেছিল মুম্বইয়ে। সেই ঘটনা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘সে বারেও এক টেকনিশিয়ান মারা গিয়েছিলেন এবং তার জন্য সে দিনের শিফটের দায়িত্বে থাকা এক ইঞ্জিনিয়ারকে বহু দিন ধরে মামলায় জড়িয়ে থাকতে হয়েছিল।’’

বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও সারানোর জন্য উড়ান সংস্থায় দু’ধরনের কর্মী-অফিসার থাকেন। ইঞ্জিনিয়ার এবং তাঁদের অধীনে কাজ করা টেকনিশিয়ান। রোহিত ছিলেন টেকনিশিয়ান। বিমান সারানো বা রক্ষণাবেক্ষণের সময়ে কী ধরনের আগাম সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন, তা গোটা গোটা অক্ষরে ‘এয়ারক্র্যাফ্ট মেনটেন্যান্স ম্যানুয়াল’-এ লেখা রয়েছে। সেই ম্যানুয়াল অনুযায়ী, পিছনের চাকার (যাকে ল্যান্ডিং গিয়ারও বলা হয়) কাছে কাজ করার সময়ে দরজা লক করে রাখার কথা।

এক অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘আসলে এই ম্যানুয়ালের নিয়ম মেনে সব কিছু করতে গেলে অনেক সময় খরচ হয়। কম সময়ের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ করার জন্য আমাদের উপরে কর্তৃপক্ষের চাপ থাকে। ধরুন, একটি বিমান মুম্বই থেকে কলকাতায় নামার পরে এখান থেকে আবার অন্য শহরে উড়ে যাওয়ার ফাঁকে বড়জোর ৪০ মিনিট পাওয়া যায়। যত তাড়াতাড়ি বিমান উড়ে যাবে, সে সারা দিনে তত বেশি শহরে উড়ে বেড়াতে পারবে। এ বার আপনি প্রতিটি কাজ ম্যানুয়াল মেনে করতে গেলে সেটা ওই সময়ের মধ্যে শেষ করা যাবে না।’’

অভিযোগ উঠেছে লোকবল কম থাকারও। ইঞ্জিনিয়ারদের যুক্তি, ম্যানুয়াল মেনে ঠিকমতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে সমস্ত কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করতে গেলে যে লোকবলের প্রয়োজন, তা থাকে না। ফলে তাড়াহুড়ো করে কম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হয়। অভিযোগ উঠেছে, ইদানীং টেকনিশিয়ান পদে অনেক প্রশিক্ষণহীন কর্মী উড়ান সংস্থার চাকরিতে ঢুকছেন। তাঁদের দক্ষতা নিয়েও স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। নিজেদের ‘গা-ছাড়া’ মনোভাবকেও দুষেছেন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফলে এটা হয়।’’

ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আর একটি ঘটনায় মুম্বই বিমানবন্দরে ওই ম্যানুয়াল না মেনে ইঞ্জিনের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার টেকনিশিয়ান রবি সুব্রহ্মণ্যমের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE