ভস্মীভূত: নিউ টাউনের জ্যোতিনগরে পুড়ছে ঝুপড়ি। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
আগুন লাগার খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছেছিল দমকল। কিন্তু, অপ্রশস্ত রাস্তার কারণে ঘটনাস্থলে ঢুকতেই পারল না তারা! অগত্যা সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে জলাজমি থেকে জল তুলে বস্তির আগুন নেভালেন বাসিন্দারা এবং স্থানীয় লোকজনই।
সোমবার বিধাননগর পুর এলাকার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিনগরে একটি বস্তিতে আগুন লাগে। ঘটনার পরে সমালোচনার মুখে পড়েন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি। তবে, রাস্তা উপযুক্ত না থাকায় দমকলের কাজ করতে না পারার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
জ্যোতিনগর জায়গাটি উদ্বাস্তুদের। এক সময়ে রাজ্য সরকার সেখানে কয়েকটি পরিবারকে পুনর্বাসন দিয়েছিল। পরবর্তী কালে সেখানে কলোনি তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই সব কলোনির অনেক ঘর রয়েছে নিচু জমির উপরে। ওই সব জমিতে এলাকার জল এসে জমে থাকে। তার উপরে মাচা তৈরি করে বসবাস করেন বহু মানুষ। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে পৌঁছতে হলে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হয়।
সুমিত্রা দাস নামে বস্তির এক বাসিন্দা জানান, এ দিন যখন আগুন লাগে, তখন তাঁর ঘরে কেউ ছিলেন না। স্থানীয় লোকজনই দেখতে পান, বস্তিতে আগুন লেগেছে। এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। বস্তির লোকজনকে বার করে আনা হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও দমকলে। কিন্তু দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গেলেও রাস্তা সঙ্কীর্ণ এবং চলার অনুপযোগী হওয়ায় অকুস্থল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। শেষে বস্তির ঘর বাঁচাতে নেমে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারাই। তাঁরা জানান, আগুনের তাপে সিলিন্ডারও ফেটেছে। দু’টি ঘর পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে।
দমকল কোনও ভাবেই আগুনের উৎসস্থল পর্যন্ত পৌঁছতে না পারায় এলাকার যুবকেরা জলাজমির জল ও আশপাশের বাড়ি থেকে জল এনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। কিছু ক্ষণ বাদে তাঁরা সাবমার্সিবল পাম্প ব্যবহার করে জলা থেকে পাইপের মাধ্যমে জল তুলে আগুনের মধ্যে দিতে থাকেন। তাতে ধীরে ধীরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই ঘটনার পরে পুর প্রশাসনের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তা ঠিক না থাকায় দমকল ঘটনাস্থল অবধি পৌঁছতে পারেনি। এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে আগুন নেভাতে বাধ্য হয়েছেন।
যদিও স্থানীয় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি মনোরঞ্জন ঘোষের দাবি, ওই জায়গায় রাস্তা খানিকটা করা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের একাংশের কারণে সেখানে গাড়ি চলাচল করতে পারে না। তিনি বলেন, ‘‘যেখান দিয়ে দমকলের যাওয়ার কথা ছিল, সেই রাস্তাটি পুরোটা করা যায়নি। এ দিনের ঘটনার পরে রাস্তা তৈরির জন্য এলাকার মানুষের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এ দিন দমকল এলেও আমাদেরই ভুলে তারা কাজ করার সুযোগ পায়নি।’’
মনোরঞ্জন নিজেই জানিয়েছেন, জ্যোতিনগরে তা-ও রাস্তা থাকলেও পার্শ্ববর্তী প্রমোদনগরে রাস্তা প্রায় নেই বললেই চলে।
এমতাবস্থায় এ দিন আগুনের ভয়াবহতা বেশি হলে কী হত? পুরপ্রতিনিধি বলেন, ‘‘খুবই সঙ্গত প্রশ্ন। এলাকা উন্নয়নের কাজ চলছে। তবে এ দিনের ঘটনার পরে পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy