Advertisement
E-Paper

দিনভর ভিড়ের স্রোতে জমজমাট সাগরের মিলনভূমি

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভিড়ের চলাচল যেখানে শেষ হয়েছিল, শুক্রবার ভোরে কার্যত সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। ৫ তারিখ থেকে এ দিন বিকেল পর্যন্ত ৩১ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে সাগরে।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৩
বৃহস্পতিবার, গঙ্গাসাগরে বিনামূল্যে খাবার নিতে লাইন পুণ্যার্থীদের।

বৃহস্পতিবার, গঙ্গাসাগরে বিনামূল্যে খাবার নিতে লাইন পুণ্যার্থীদের। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

সূর্য অস্ত গিয়েছে বেশ কিছু ক্ষণ আগে। কপিলমুনির মন্দিরের সামনে থেকে সমুদ্র পর্যন্ত দু’নম্বর রাস্তায় ভিড় তখনও কমেনি। আলোয় সেজেছে গোটা রাস্তা। সেখান দিয়ে মন্দিরের দিকে এগোতে থাকা ভিড় সামলাতে গিয়ে ভরা শীতেও ঘাম ঝরছে পুলিশকর্মীদের। ক্লান্ত এক পুলিশকর্মী সহকর্মীর উদ্দেশে বললেন, ‘‘এখনও তো শুনছি, কচুবেড়িয়া দিয়ে কাতারে কাতারে লোক আসছে! সংক্রান্তির স্নানের দিন যে কী হবে!’’

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভিড়ের চলাচল যেখানে শেষ হয়েছিল, শুক্রবার ভোরে কার্যত সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। যা চলেছে মধ্যরাত পর্যন্ত। এ দিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়, ৫ তারিখ থেকে এ দিন বিকেল পর্যন্ত ৩১ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে সাগরে। রবিবারে সংখ্যাটা ৫০ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের অনুমান যে সত্যি হতে চলেছে, গোটা দিনের ভিড়ই তার আভাস দিয়েছে।

মকর সংক্রান্তির আগে শুক্রবার ভোর থেকেই কার্যত পুণ্যার্থীদের দখলে চলে গিয়েছে গোটা সাগরতট। জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গানবাজনার সঙ্গেই প্রার্থনা করতে দেখা গিয়েছে অসংখ্য মানুষকে। ভোর থেকেই ভক্তিমূলক গান বেজেছে সাগরতট সংলগ্ন অস্থায়ী মঞ্চে। এ দিন সূর্য ওঠার আগেই গোটা সমুদ্রতটের দখল নেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা ভক্তেরা। ভিড় এড়াতে ভোর ভোর স্নান সেরে কেউ মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। কেউ আবার সাগরে দাঁড়িয়ে সেরেছেন সূর্যপ্রণাম।

ভোরে সমুদ্রতটে পুজোয় ব্যস্ত বীণা পাসোয়ান বললেন, ‘‘পুজো দিতেই তো বিহার থেকে এখানে আসা! মকর সংক্রান্তিতে ভালয় ভালয় পুজো দিতে পারলেই শান্তি।’’ এ দিন সকালে মাথায় কপিলমুনির মন্দিরের প্রতিকৃতি নিয়ে ঘুরছিলেন কুলপির বাসিন্দা গোপাল মণ্ডল। ভিড়ে তাঁকে দেখে দেদার ছবি তুলতে দেখা গিয়েছে পুণ্যার্থীদের। স্নান ও পুজোর পাশাপাশি অনেকে আবার আলাদা করে ঢুঁ মেরেছেন বাংলার পাঁচ মন্দিরে। গোটা দিন সেখানেও ভিড় ছিল। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে এসেছেন বিশাল কুমার। বললেন, ‘‘প্রতি বার তো বাবুঘাট হয়ে সোজা সাগরে চলে আসি। এ বার এসে আগে ওই মন্দিরগুলো দেখে ফেললাম। এটা একটা বড় পাওনা।’’ শুক্রবার রাত পর্যন্ত সাগরে এসেছেন পুণ্যার্থীরা। কাকদ্বীপ পেরিয়ে কচুবেড়িয়ায় আসার ভেসেলে ওঠার দীর্ঘ লাইন দেখা গিয়েছে এ দিন। দুর্ঘটনা এড়াতে সেখানেও ছিল কড়া পুলিশি ব্যবস্থা।

এ দিন স্নান ঘিরে সব রকম দুর্ঘটনা এড়াতে সাগরে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করার পাশাপাশি স্পিড বোট নামিয়ে নজরদারি চালানো হয়েছে। নজরদারিতে ছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরাও। দেখা গিয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরও। বেশ কয়েক জনের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে এ দিন।

বৃহস্পতিবারের মতো এ দিন বিকেলেও সাগর আরতির আয়োজন করা হয়েছিল জেলা প্রশাসনের তরফে। মন্দিরের সামনে থেকে শুরু হওয়া এ দিনের মিছিলে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ওদমকলমন্ত্রী সুজিত বসু কয়েক হাজার ভক্তের সঙ্গে পা মেলান। ছিলেন মন্ত্রী পুলক রায়ও। এ দিন তাঁরা সাংবাদিক বৈঠকও করেন। সাগরে আরতি দেখতে সন্ধ্যায় ভিড় করেন অসংখ্য পুণ্যার্থী। সব মিলিয়ে মকর সংক্রান্তির স্নানের আগে ভিড়ে জমজমাট গোটা সাগর।

Gangasagr Mela overcrowded
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy