কান্নায় ভেঙে পড়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। —নিজস্ব চিত্র।
বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক নাবালক ছাত্রের। সেই ঘটনার চার দিন পর অবশেষে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। যাদবপুরে এই মুহূর্তে কোনও উপাচার্য না থাকায় রেজিস্ট্রারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই সোমবার তিনি ক্যাম্পাসে আসতেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এতদিন কোথায় ছিলেন? ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না কেন? সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েই কেঁদে ফেললেন রেজিস্ট্রার।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য-রাজনীতি সরগরম। গত চার দিনে গ্রেফতার হয়েছেন যাদবপুরের দুই ছাত্র। গ্রেফতার হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্রও। এঁদের এক জনের বিরুদ্ধে এফআইআরে অভিযোগ করেছিলেন মৃত ছাত্রের বাবা। কিন্তু রাজ্য জুড়ে যখন এ নিয়ে হই চই পড়ে গিয়েছে, তখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই সোমবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছনোর পর তাঁকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। জবাবে, রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ ছিলাম। তাই মঙ্গলবারই মেডিক্যাল লিভ নিয়েছিলাম। চিকিৎসকের কথায় বিশ্রাম নিচ্ছিলাম বলেই ফোন বন্ধ ছিল।’’ এর পর স্নেহমঞ্জু দৃশ্যত কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘আমি মর্মাহত। কোনও মায়ের কোল খালি হোক চাই না।’’
কিন্তু যেখানে টিভি, সংবাদ মাধ্যম সর্বত্র যাদবপুর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সে খানে তিনি কি বিষয়টি জানতেও পারেননি? জবাবে স্নেহ মঞ্জু বলেন, ‘‘হাঁটুর ব্যথা। তাই আসতে পারিনি। আজও কষ্ট করেই আসতে হয়েছে। তা ছাড়া আমার হাই প্রেসার। এই বিষয়গুলো একদম নিতে পারি না। আভ্যন্তরীণ কমিটিও তদন্ত করছে। পুলিশও তদন্ত করছে। আমি চাই, দোষীরা শাস্তি পাক।’’
যাদবপুরের ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসি। মুহুর্মুহু ফোন আসছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির কাছেও। এ সপ্তাহেই ইউজিসির তরফে প্রতিনিধি দল আসার কথা যাদবপুরে। তার আগে যাদবপুরের রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে তাঁর লেটার হেডে গোটা ঘটনাটির বিশদ রিপোর্ট জানাতে বলা হয়েছে। ইউজিসির তরফে সোমবারই এ ব্যাপারে ফোন আসে যাদবপুরের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জুর কাছে। তার আগে সোমবারই অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠক বসছে যাদবপুরের ঘটনাটি নিয়ে। আর সোমবারই যাদবপুরের রেজিস্ট্রার এসে পৌঁছন যাদবপুর ক্যাম্পাসে।
যাদবপুরের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জুকে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু স্নেহমঞ্জু বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত মর্মাহত। এ আমার সন্তান চলে যাওয়ার মতো দুঃখ। আমি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। মঙ্গলবার থেকে মেডিক্যাল লিভের জন্য আবেদন করেছিলাম। বুধবার এই ঘটনা ঘটে। আমার ফোন বন্ধ ছিল। আমি জয়েন্ট রেজিস্ট্রার সঞ্জয় গোপাল সরকারকে সমস্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম। আমি বাড়ি থেকে সমস্ত রিপোর্ট নিয়েছি। এই ঘটনার পর যা যা করার সব রেজিস্ট্রারের অফিস থেকেই করা হয়েছে। আপনারা আপনাকে মাফ করুন, আমরা প্রাণ পণ চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy