পথ দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পেয়েছিলেন এক যুবক। উন্নত চিকিৎসা পেতে গ্রাম থেকে শহরের বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন বাবা। কিন্তু এক দিন পরেই ছেলের ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেও পরক্ষণেই ওই ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নেন অঙ্গদানের। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি জানিয়ে দেন, ‘‘আমার ছেলে তো চলেই গেল। ওর অঙ্গ পেয়ে বরং অন্য ছেলেমেয়েরা বাঁচুক। ওদের মধ্যেই আমার ছেলে বেঁচে থাকবে।’’ এর পরেই ওই যুবকের হৃৎপিণ্ড, লিভার, কিডনি দানের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের নাসরা গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় চাষি শুকদেব দাস অধিকারীর একমাত্র ছেলে বাসুদেব দাস অধিকারী (২২)। পড়াশোনা শেষ করে বাবার সঙ্গেই চাষের কাজ করতেন। তাঁর পরিজনেরা জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে পাশের এলাকাতেই জলসা দেখতে গিয়েছিলেন বাসুদেব। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ সেখান থেকে বাইক চালিয়ে ফেরার পথে বাড়ি থেকে কিছু দূরে দুর্ঘটনা ঘটে। মাথায় চোট লাগে যুবকের। তাঁর জেঠতুতো দাদা নন্দ বলেন, ‘‘রাতেই ভাইকে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরদিন সকালে মেদিনীপুরে নিয়ে ওঁর মাথার সিটি স্ক্যান করা হয়। আরও ভাল চিকিৎসার জন্য কলকাতার অ্যাপোলোয় নিয়ে যাই।’’
২৮ ফেব্রুয়ারি বাইপাসের ধারের ওই হাসপাতালে ভর্তি হন বাসুদেব। ১ মার্চ চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, তাঁর ব্রেন ডেথ হয়েছে। নন্দ বলেন, ‘‘ভাইয়ের ব্রেন ডেথ হয়েছে শুনেই বুঝতে পারি ও আর বাঁচবে না। তখন ভাবি, ওর শরীরে যে অঙ্গগুলি সতেজ রয়েছে, সেগুলি যদি অন্যদের কাজে লাগে। কাকাকে বলতে তিনিও সম্মতি দেন।’’ পরিজনদের থেকে সম্মতি মেলার পরেই ওই হাসপাতালের তরফে বিষয়টি জানানো হয় ‘রিজিয়োনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন’-এ (রোটো)।