Advertisement
০২ মে ২০২৪
Dhapa Ground

Dhapa: ধাপার জল, স্থল ও বাতাসের দূষণে মাসিক ক্ষতি আট লক্ষ টাকা

এমনিতে বায়ুদূষণ নিয়ে মূল মামলাটি পরিবেশ আদালতে দায়ের হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। মামলাটি গত বছরে নিষ্পত্তিও করেছিল আদালত।

ধাপার আবর্জনা।

ধাপার আবর্জনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৮
Share: Save:

বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, মাটি, জলাশয় অথবা ভূগর্ভের জলে মেশা ধাতব পদার্থের কারণে ধাপা এলাকায় পরিবেশগত আর্থিক ক্ষতি মাসে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা।

যার মধ্যে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) জন্য আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মাসে ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা। ওই এলাকার প্রায় ২৪ হেক্টর জায়গা জুড়ে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নির্ধারিত মাত্রার থেকে প্রায় চার গুণ বেশি! এলাকার ভূগর্ভস্থ জল, জলাশয়ে ধাতব পদার্থ মেশার কারণে ক্ষতি মাসে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। গত সোমবার জাতীয় পরিবেশ আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় এমনটাই জানিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘এই হিসাবে ধাপা এলাকায় বছরে পরিবেশগত আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ১ কোটি টাকার মতো! এখনও সচেতন না হলে, আর কবে হবে?’’ ওই হলফনামার পরিপ্রেক্ষিতে দূষণ রোধের ‘অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট’ আগামী জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ আদালত।

এমনিতে বায়ুদূষণ নিয়ে মূল মামলাটি পরিবেশ আদালতে দায়ের হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। মামলাটি গত বছরে নিষ্পত্তিও করেছিল আদালত। তখন নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠন করে রিপোর্ট জমা দিতে। যে কমিটিতে থাকবেন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি) এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য। মাসকয়েক আগে বায়ুদূষণের মামলা ফের দায়ের হলে দেখা যায়, পরিবেশগত ক্ষতি সংক্রান্ত রিপোর্ট তখনও পরিবেশ আদালতে জমা পড়েনি। যে কারণে আদালত সংশ্লিষ্ট রিপোর্টটি জমা দিতে নির্দেশ দেয়।

সেই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, পিএম১০-এর পরিমাণ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্ধারিত মাত্রা অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা। সেখানে ওই এলাকায় তার পরিমাণ হল ৪৩৯.৬৬ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। যা বাতাসে নির্ধারিত মাত্রার থেকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ২৯.৩৫ কিলোগ্রাম ভাসমান ধূলিকণা জমা করছে।

আবার স্তূপীকৃত বর্জ্য নিঃসৃত তরলে মিশে থাকা ভারী ধাতুর কারণে ওই অঞ্চলের মাটি, ভূগর্ভ বা জলাশয়ের জল ক্রমাগত দূষিত হয়ে চলেছে। যার মধ্যে মাটি ও জল দূষণের পরিমাণ যথাক্রমে ৯৯.৮ এবং ০.২ শতাংশ। পর্ষদের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ভারী ধাতুর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতি করছে ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি। শতাংশের হারে যার পরিমাণ ৭৭.৯। এর পরেই আছে পর্যায়ক্রমে তামা, সীসা, ক্যাডমিয়াম-সহ একাধিক ধাতু।’’

এ বার এক্সটার্নই বা ‘এক্সটার্নাল কস্ট অব এনার্জি’-র সূত্র ধরে এই পরিমাণ দূষকের কারণে পরিবেশগত ক্ষতির আর্থিক হিসাব করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, দূষকের উপস্থিতির কারণে পরিবেশগত ক্ষতিকে আর্থিক হিসাবে প্রকাশের জন্যই ইউরোপিয়ান কমিশন অধীনস্থ ‘এক্সটার্নই’ প্রকল্পের সূত্রপাত হয়েছিল। সেই সূত্রেই ওই এলাকায় মাসিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা এসেছে (এক্সটার্নই প্রকল্পে ক্ষতির হিসাব ইউরোয় থাকে। হলফনামায় ইউরোকে ভারতীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)। নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলছেন, ‘‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি ও ধাপা এলাকা পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাটির নীচের জলদূষণ বিপন্ন করতে পারে কলকাতা ও আশপাশের জনজীবন। বাঁচার একমাত্র উপায় হল দূষণ নিয়ন্ত্রণ।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘শুধু ধাপা এলাকার দূষণের কারণেই যদি এই পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তা হলে সারা শহরের কী অবস্থা সহজেই অনুমেয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhapa Ground Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE