প্রতীকী ছবি।
বাড়ির চৌহদ্দিতে পড়ে থাকা একটি লাইটারের সূত্র ধরে এক ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনার কিনারা করল পুলিশ। খুনের অভিযোগে নিহতেরই দুই নাতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) সূর্যপ্রকাশ যাদব।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম করণ বিশ্বাস ও মনোহরণ মণ্ডল। গত শনিবার রাতে বাগুইআটির অশ্বিনীনগরের বাসিন্দা জগদীশ মল্লিকের (৭২) দেহ তাঁর বাড়ির শৌচাগারে মিলেছিল। ধৃত দু’জন তাঁরই দুই মেয়ের সন্তান। সোমবার বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, চালের ব্যবসায়ী জগদীশবাবু একা থাকতেন। ওই দুই নাতিই তাঁর দেখাশোনা করত। তারা জেনেছিল, রাজারহাট এবং অশ্বিনীনগরের দু’টি জমি বিক্রি করে ১৭ লক্ষ টাকা পেয়েছেন বৃদ্ধ। সেই টাকা হাতাতেই দাদুকে তারা খুন করে বলে অভিযোগ।
ঘটনার রাতে জগদীশবাবুর দোকানে চাল আসার কথা ছিল। তাই লরির খালাসি তাঁকে ফোন করে দোকানে আসতে বলেছিলেন। জগদীশবাবু খালাসিকে জানান, খেয়ে নিয়ে দোকানে পৌঁছবেন। কিন্তু আর তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। পুলিশ জানায়, জগদীশবাবু দোকানে না যাওয়ায় খালাসি যখন চাল নিয়ে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে ডাকাডাকি শুরু করেছেন, তত ক্ষণে খুন হয়ে গিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। খালাসির গলা শুনেই দুই নাতি দোতলার জানলার পাল্লা খুলে গাছ বেয়ে নেমে চম্পট দেয়। জগদীশবাবুর ফোনটিও ভেঙে দেয় তারা।
তদন্তকারীরা জানান, খুনের পরে দোতলার যে জানলার পাল্লা খুলে অভিযুক্তেরা পালিয়েছিল, সন্ধ্যায় সেই জানলা ভেঙেই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল তারা। কিন্তু সে সময়ে জগদীশবাবু বাড়িতে ছিলেন না। তিনি বাড়িতে ফেরার পরে বাইরের দরজা খোলা পেয়ে দুই নাতি গোপনে ভিতরে ঢোকে। জগদীশবাবু শৌচাগার থেকে বেরোনোর সময়েই করণ পিছন থেকে তাঁর মুখ ঢেকে দেয় মোটরবাইকের ঢাকা দিয়ে। মনোহরণ গামছা দিয়ে শক্ত করে তাঁর হাত বাঁধে। তার পরে দুই নাতি মিলে দাদুকে শৌচাগারের ভিতরে ফেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তাতে কপালে আঘাত পান ওই ব্যবসায়ী। মুখ এমন ভাবে বাঁধা হয়েছিল যে, সেই ফাঁস জগদীশবাবুর গলায় বসে যায়। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
পুলিশের দাবি, খুনের পরে জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে করণ নিজের ঘর, আলমারি তছনছ করে দিয়ে যায়, যাতে পুলিশ সন্দেহ না করে। দাদুর বাড়িতে এসে মাঝেমধ্যেই থাকত সে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাড়ির আশপাশে বাগুইআটি থানার আইসি কল্লোল ঘোষ একটি লাইটার কুড়িয়ে পান। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘ওই লাইটার মোক্ষম একটি সূত্র ছিল। লাইটারটি কার, তা
জানতে সেটি ইচ্ছে করে সকলের সামনে রেখে দেওয়া হয়েছিল। দুই নাতি সে সময়ে কান্নাকাটি করে শোক প্রকাশের অভিনয় করছিল। এরই মধ্যে করণ এসে লাইটারটি তুলে নেয়। জানায়, লাইটারটি তার। তাকে জেরা করার
পাশাপাশি চিংড়িঘাটায় তাদের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে সদ্য কাচা জামাকাপড়ের খোঁজ মেলে। তাতে সন্দেহ আরও বাড়ে। দেখা যায়, ঘটনার সময়ে দুই নাতির মোবাইল টাওয়ারের অবস্থানও ছিল জগদীশবাবুর বাড়ির আশপাশেই।’’ এই ধরনের নানা সূত্র পুলিশ ধৃতদের সামনে উত্থাপন করতেই এক সময়ে ভেঙে পড়ে তারা সব স্বীকার করে নেয় বলে তদন্তকারীদের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy