প্রতীকী ছবি।
আমলাগিরির পরে এ বার প্রধান শিক্ষকদের নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী করে তুলতে প্রশিক্ষণ শুরু হল। কলকাতার স্কুলগুলি থেকে সেই কাজ শুরু করল রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর।
এমনিতেই প্রশাসনিক কাজের চাপে শিক্ষকতা করার সুযোগ পান না তাঁরা। এ বার তার শেষ সম্ভাবনাটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ অধিকাংশ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের। তবে এই ঘটনার পরে প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষকদের সংগঠন দাবি তুলল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের আদলে প্রশাসনিক, শিক্ষকতা এবং অর্থ বিভাগের জন্য সহ-প্রধান শিক্ষকের পদ তৈরি করা হোক। কারণ, এই চাপের জেরে প্রধান শিক্ষক আসলে যে এক জন শিক্ষক, সেই ভাবনাটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে স্কুলের মাধ্যমে সরকারের একাধিক প্রকল্পের কাজ চলে। কোন পড়ুয়ারা কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবে, সেই তালিকা তৈরির দায়িত্ব থাকে প্রধান শিক্ষকদের উপরে। স্কুলে বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানও আয়োজন করতে হয়। সে সব সামলে শিক্ষকতার সুযোগ প্রায় হারাতেই বসেছেন তাঁরা। এ বার নতুন করে নেতা হওয়ার পাঠ দেওয়ায় বেড়েছে অস্বস্তি।
শিক্ষা ভবন সূত্রের খবর, ‘স্টেট কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’ (এসসিইআরটি) রাজ্যের বাছাই করা কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নেতা হওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। কলকাতার মধ্যে এমন চারটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এ বার তাঁদের মাধ্যমেই শহরের স্কুলে প্রশিক্ষণ (স্কুল লিডারশিপ প্রোগ্রাম) ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা ভবনে ১৮টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে চার দিন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ওই চারটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু অনেকেরই ক্ষোভ, সে সবের ফাঁকে হারিয়ে গেল শিক্ষকতার মন্ত্র।
এক প্রধান শিক্ষক জানান, প্রকল্পের সুফল কী ভাবে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় এবং সেই কাজে শিক্ষক ও গোটা সমাজকে কী ভাবে যুক্ত করা যায়, প্রশিক্ষণ-পর্বে তা বারবার শেখানো হয়েছে। অথচ শিক্ষকতার মাধ্যমে কী ভাবে পড়ুয়াদের আরও কাছে টানা যায়, সেটা এক বারের জন্যও উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের প্রধান কাজ শিক্ষকতা করা। সেই দিকটিকেই পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক সমিতির তরফে অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকদের কাজ ভাগ করে নেওয়ার জন্য স্কুলে বিভাগীয় সহ-প্রধান শিক্ষকেরা থাকেন না। বহু দিন ধরে সেই দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। এ ভাবে চলতে থাকলে স্কুলের পঠনপাঠনের মান আরও কমে যাবে বলে মত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরীর। তাঁর কথায়, ‘‘প্রশিক্ষণে যদি শিক্ষকতার উপরে জোর না দেওয়া হয়, তা হলে সেই প্রশিক্ষণ ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে বলেই মনে হবে।’’
প্রশিক্ষণ দেওয়ার দলে রয়েছেন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকদের নেতৃত্ব দেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। প্রশিক্ষণে সবটাই বলা হয়েছে। শিক্ষকতার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। কোনও কিছুই ত্রুটিপূর্ণ নয়।’’ তবে স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কিছু জানানো হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy