Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছাড়তে হয়েছে স্কুল, তবু সফল সঙ্কল্প

সঙ্কল্প যে আসলে ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত, তা জানা গিয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণিতে, যখন পরীক্ষার খাতায় সব ভুল উত্তর দিয়েছিল ছোট্ট সঙ্কল্প।

লড়াকু: বাবা ও মায়ের সঙ্গে সঙ্কল্প। ফাইল চিত্র

লড়াকু: বাবা ও মায়ের সঙ্গে সঙ্কল্প। ফাইল চিত্র

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

ঈশানের মতো স্কুলে কোনও নিকুম্ভ স্যরকে পাননি সঙ্কল্প। উল্টে একাদশ শ্রেণিতে উঠে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমস্যা হওয়ায় স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত সঙ্কল্প দাস। সিবিএসই বোর্ডের অধীনে মুক্ত বিদ্যালয় থেকে এ বছর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ভাল ফল করেছেন তিনি। আইসিএসই পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে সল্টলেক স্কুলের অটিস্টিক পড়ুয়া ময়ূখ মিত্রও। তবে সঙ্কল্পের মতো তার দিক থেকে মুখ ফেরায়নি স্কুল। ময়ূখ-সঙ্কল্পের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের পাশে স্কুল এসে দাঁড়ালে তাঁদের লড়াইটা যে বেশ কিছুটা সহজ হয়ে যায়, তা জানাচ্ছে সঙ্কল্পের পরিবার থেকে মনোবিদ, সকলেই।

বালিগঞ্জ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধের জেরে ২০১৭ সালে আদালতে গিয়েছিল সঙ্কল্পের পরিবার। কোর্টের নির্দেশে স্কুলে ফের যেতে পারলেও পরে স্কুল বদলাতে বাধ্য হন সঙ্কল্প। জোকায় সিবিএসই-র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে এ বছর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেন সদ্য আঠেরোয় পা দেওয়া ওই তরুণ। গত সপ্তাহেই তাঁর ফল প্রকাশ হয়েছে। ভূগোল, ইংরেজি, হোম সায়েন্স, অঙ্কন এবং ডেটা এন্ট্রি নিয়ে ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে খুশি সঙ্কল্প। তিনি বলছেন, ‘‘এ বার ফোটোগ্রাফি আর মিউজিক নিয়ে পড়তে চাই।’’ ব্যান্ডে কি-বোর্ড বাজানো আর ছবি তোলাই নেশা এখন তাঁর। তাই গতানুগতিক উচ্চশিক্ষার পথে না হেঁটে বৃত্তিমূলক শিক্ষার দিকেই এ বার সঙ্কল্পকে এগিয়ে দিতে চাইছে তাঁর পরিবার।

ছোট থেকে বালিগঞ্জ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা সঙ্কল্প যে আসলে ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত, তা জানা গিয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণিতে, যখন পরীক্ষার খাতায় সব ভুল উত্তর দিয়েছিল ছোট্ট সঙ্কল্প। মা খুকু দাসের কথায়, ‘‘কী মনে হওয়ায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখনই জানতে পারলাম, ডিসলেক্সিয়া এবং ওসিডি-তে (অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজ়অর্ডার) আক্রান্ত ও। সেই থেকে লড়াই শুরু হয়েছিল আমাদের।’’ কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে উঠে হঠাৎই স্কুলে সমস্যা শুরু হয়। সঙ্কল্পকে তাঁর পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয় ওই পড়ুয়ার পরিবার। কোর্টের নির্দেশ মতো ফের স্কুলে ফিরে গেলেও পরিবেশটা আর আগের মতো ছিল না সঙ্কল্পের কাছে। খুকুদেবীর কথায়, ‘‘স্কুল থেকে ফিরে বলত নানা সমস্যা হচ্ছে। কোথাও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বন্ধুরাও ওকে বলত, তোর মা কেন কোর্টে যেতে গেলেন।’’ অতঃপর স্কুল বদলে মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় সঙ্কল্পকে। খারাপ লাগেনি? খুকুদেবীর দাবি, ‘‘ওই স্কুলে ওর আর ভাল লাগছিল না। একঘরে হয়ে পড়েছিল। আমাদেরও চিন্তা হত। স্কুল ছাড়তে ওর কষ্ট হয়নি।’’পরিবার-প্রতিবেশী-আত্মীয়দের পাশে পেলেও স্কুলকে পাশে পায়নি ডিসলেক্সিক সঙ্কল্প। বন্ধুরাও এক সময়ে মুখ ফিরিয়েছে। তাই ময়ূখের সাফল্যে তার স্কুলের ভূমিকার প্রশংসা করছেন খুকুদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের জন্য বাবা-মায়ের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্যটাও খুব দরকার। একটু সাহায্য পেলে ওরাও কিন্তু জীবনে এগোতে পারবে, আর পাঁচ জনের মতোই।’’ কিন্তু মুখে বলা হলেও আদৌ কি মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের? মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ভাল নম্বর নাকি ভাল মানুষ তৈরি— স্কুল কীসের উপরে জোর দিচ্ছে, সেটাই এ ক্ষেত্রে তফাত গড়ে দেয়। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্লাসরুমে পড়ুয়াদের বিশাল সংখ্যা। তাই সচেতনতা বাড়লেও আজও বহু স্কুল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের সহযোগিতা করে না।’’

সঙ্কল্পের ‘সাফল্য’ নিয়ে কী বলছে তাঁর পুরনো স্কুল? বালিগঞ্জ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল সুমন লতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও উত্তর দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dyslexia ICSE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE