Advertisement
১৮ মে ২০২৪

চাহিদায় ভাটা, বিপন্ন শোলা শিল্প

বছর দশেক আগেও কুমোরটুলিতে তৈরি শোলার প্রতিমা বিদেশে পাঠিয়ে ভালই আয় করতেন পটুয়াপাড়ার শিল্পীরা। কিন্তু, তার পরে ধীরে ধীরে শোলার কাজের চাহিদা কমতে থাকে।

নিবিষ্ট: চলছে শোলার প্রতিমা গড়া। নিজস্ব চিত্র

নিবিষ্ট: চলছে শোলার প্রতিমা গড়া। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৩০
Share: Save:

তিন পুরুষ ধরে শোলার দুর্গা প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি মণ্ডপে শোলার কাজ করে আসছেন কুমোরটুলির রঞ্জিত সরকার, শম্ভুনাথ মালাকারেরা। ২০০০ সাল পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু তার পর থেকেই দোকানে বসে প্রায় মাছি তাড়ানোর জোগাড় পটুয়াপাড়ার শোলাশিল্পীদের। বাধ্য হয়ে এখন ফাইবার ও জরি-চুমকির বিকল্প কাজ বেছে নিচ্ছেন ওঁরা।

বছর দশেক আগেও কুমোরটুলিতে তৈরি শোলার প্রতিমা বিদেশে পাঠিয়ে ভালই আয় করতেন পটুয়াপাড়ার শিল্পীরা। কিন্তু, তার পরে ধীরে ধীরে শোলার কাজের চাহিদা কমতে থাকে। শোলাশিল্পী রঞ্জিতবাবু এক সময়ে বছরে ৩৪-৩৫টি শোলার প্রতিমা বিদেশে পাঠাতেন। কিন্তু এখন সংখ্যাটি নেমে এসেছে কুড়িতে। রঞ্জিতবাবুর কথায়, ‘‘দিন বদলের সঙ্গে মানুষের রুচিরও পরিবর্তন হচ্ছে। শোলার জায়গা নিয়েছে ফাইবার ও জরি-চুমকির মতো উপকরণ। তাই পেটের তাগিদে বাধ্য হয়ে আমাদেরও শোলার বিকল্প বেছে নিতে হয়েছে।’’

কুমোরটুলি পাড়ায় সব মিলিয়ে এমন ২০টি দোকান রয়েছে, যেখানে এক সময়ে শুধুই শোলার কাজ হত। কুমোরটুলি ঘুরে দেখা গেল, ওই সমস্ত দোকানে এখন শোলার কাজ হলেও তা খুবই নগণ্য। ফাইবার ও জরি-চুমকির কাজই বেশি হচ্ছে। প্রতিমার অলঙ্কার তৈরি হচ্ছে জরি-চুমকি ও আমেরিকান ডায়মন্ডে। শম্ভুনাথবাবুর কথায়, ‘‘১৯৯০ সাল পর্যন্ত শোলা ব্যবসায়ীরা কুমোরটুলিতে এসে শোলা দিয়ে যেতেন। কিন্তু এখন উল্টোডাঙার হাটে গিয়ে শোলা আনতে হয়।’’

উল্টোডাঙা রেল ব্রিজের কাছে প্রতি রবিবার সকালে শোলার হাট বসে। চার বছর আগে পর্যন্ত সপ্তাহে দু’দিন (বুধ ও শুক্রবার) সেই হাট বসত। কুমোরটুলির শোলাশিল্পীরা ওই হাটে গিয়েই শোলা কিনে আনেন। শোলার শিল্প যে প্রায় বিলুপ্তির পথে, তা মেনে নিলেন রাজারহাটের শোলা ব্যবসায়ী শেখ আসগর আলি। আসগর গত কুড়ি বছর ধরে শোলা বিক্রির কারবার করছেন। কিন্তু এখন কেবল শোলা বিক্রি করে তাঁর আর সংসার চলছে না। ‘‘আগে উল্টোডাঙায় সপ্তাহে দু’দিন এসে প্রায় তিরিশ হাজার টাকার শোলা বিক্রি করতাম। মাস গেলে আয় হত প্রায় আট হাজার টাকা। কিন্তু এখন হয় প্রায় তিন হাজার টাকা। সংসার চালাতে তাই বছর পাঁচেক আগে থেকে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করছি,’’ বললেন আসগর।

এখন আর আগের মতো শোলার চাষও হচ্ছে না। আগে রাজারহাট ও ভাঙড়ে শোলা চাষ হত ভালই। কিন্তু নগরায়ণের জেরে ওখানে শোলার চাষ এখন বন্ধ। তাই শহরতলির শোলা কুমোরটুলির শিল্পীরা পান না। এখন শোলা আসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর ও উত্তরবঙ্গের মালদহের ইটাহার থেকে। জয়নগরের শোলা চাষি হারান সর্দার ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বিঘা জমি জুড়ে শোলা চাষ করতেন। হারানবাবুর কথায়, ‘‘শোলার চাহিদা কমায় এখন মাত্র দু’বিঘা জমিতে চাষ করি। আগে শুধু শোলা চাষ করেই মোটা টাকা রোজগার করতাম। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে অন্য ফসলেরও চাষ করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Thermocol Industry Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE