Advertisement
০৮ মে ২০২৪

সরছে তিন জেল, প্রশ্ন হেরিটেজ নিয়ে

কলকাতা শহরের কেন্দ্রে আর কোনও জেল থাকবে না। শতাব্দী-প্রাচীন আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার এবং আলিপুর মহিলা জেলকে তাই সরতে হবে কলকাতা সংলগ্ন এলাকায়।

সোমনাথ চক্রবর্তী ও অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:২০
Share: Save:

কলকাতা শহরের কেন্দ্রে আর কোনও জেল থাকবে না। শতাব্দী-প্রাচীন আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার এবং আলিপুর মহিলা জেলকে তাই সরতে হবে কলকাতা সংলগ্ন এলাকায়। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের কারা দফতর।

তার মধ্যে আলিপুর এবং আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার সরানোর ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি মিলেছে। তবে প্রেসিডেন্সি জেলের ক্ষেত্রে এখনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি আদালত। অনুমোদন পেলে বছরখানেকের মধ্যে তিনটি জেলকেই সরানোর কাজ চূড়ান্ত করে ফেলা হবে বলে জানাচ্ছেন কারা দফতরের শীর্ষ কর্তারা। তবে জেল স্থানান্তরিত হলেও ওই জায়গায় কী করা হবে, তা নিয়ে এখনও দ্বিধায় নবান্ন। কারণ, এর মধ্যে আলিপুর এবং প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার ‘গ্রেড ওয়ান’ হেরিটেজ ভবন। তাই, জেল খালি হলেও ওই প্রাঙ্গণে অন্য কিছু করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে প্রায় তিনশো বিঘার কাছাকাছি ফাঁকা জায়গা নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। তবে এ নিয়ে যা-ই সিদ্ধান্ত হোক, তিনটি জেলের বন্দিদের অন্যত্র সরানোর বিষয়টি প্রায় পাকা বলে জানাচ্ছেন কারা-কর্তারা।

কারা দফতর সূত্রের খবর, চলতি মাস থেকে বারুইপুরে প্রস্তাবিত নতুন জেলের সীমানা প্রাচীর গড়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। জেল তৈরির কাজও প্রায় শেষের পথে। কাজ শেষ হলে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের বন্দিদের বারুইপুরের জেলে নিয়ে যাওয়া হবে। কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার হওয়ার পাশাপাশি আলিপুর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলারও জেল। তাই আলিপুর জেলকে ওখানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই।’’

একই ভাবে, প্রেসিডেন্সি জেল এবং আলিপুর মহিলা জেল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সরকার। প্রাথমিক ভাবে প্রেসিডেন্সি জেলকে রাজারহাট বা নিউ টাউনের দিকে কোথাও সরানোর কথা ভাবা হয়েছে। অন্য দিকে, আলিপুর মহিলা জেলকে সাঁতরাগাছিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এ জন্য রাজ্য সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে মনে করছেন কারা-কর্তারা।

নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘তিনটি জেল স্থানান্তর হবে, তা নিশ্চিত। তবে বিকল্প জায়গায় পুরোদস্তুর জেল তৈরি না হলে স্থানান্তরের কাজ শুরু করা যাবে না। তাই বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।’’

কেন এই ভাবনা?

রাজ্য কারা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এর পিছনে মূলত দু’টি কারণ রয়েছে। এক, নিরাপত্তা এবং দুই, শহরের কেন্দ্রে অনেকটা জমি একসঙ্গে পাওয়ার সুযোগ। আলিপুর এবং প্রেসিডেন্সি এ রাজ্যের সব চেয়ে ‘হাই প্রোফাইল’ জেল। আফতাব আনসারি, সুদীপ্ত সেন, তেলুগু দীপকের মতো ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিরা রয়েছেন এই দু’টি জেলে। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের মতে, শহরের কেন্দ্রস্থলে এমন বন্দিদের রাখার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের ঝুঁকি রয়েছে।

নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘দেশের বেশির ভাগ শহরের কেন্দ্র থেকে জেল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার প্রধান কারণই হল নিরাপত্তা। আলিপুরের মতো ব্যস্ত এলাকায় একেবারে রাস্তার উপরে দু’টি জেল থাকাটা নিরাপত্তার দিক থেকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।’’

ওই কর্তা বলেন, ‘‘আলিপুর এবং প্রেসিডেন্সির আশপাশে মুখ্যসচিব, মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন শীর্ষ কর্তা-মন্ত্রীদের বাড়ি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জেলে জ্যামার লাগালেও ভিআইপি-দের বাড়ির উপস্থিতির কারণে তা ঠিকমতো কার্যকরী করা যায় না। সব কিছু ভেবেই জেল অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।’’

তবে নবান্ন সূত্রের খবর, আলিপুর জেল বারুইপুরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আদালতের সবুজ সঙ্কেত মিললেও প্রেসি়ডেন্সির ক্ষেত্রে তা এখনও মেলেনি। কোর্টের অনুমোদন না মিললে শেষ পর্যন্ত জেল স্থানান্তর আটকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা নবান্নে। অন্য আশঙ্কাও রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি প্রেসিডেন্সি ও আলিপুর জেলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ওই দু’টি জেলে বন্দি ছিলেন জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসুর মতো নেতারা। এমন হেরিটেজ ভবনকে ভেঙে ফেলা যাবে না। তবে নবান্নের ওই কর্তার কথায়, ‘‘সরকারি হেরিটেজ কমিটিকে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষণের উপরে ভিত্তি করেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jail shifting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE