Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সম্পত্তি নিয়ে গোলমাল, ব্যবসায়ী ‘অপহরণে’ ধৃত ৩

তালতলার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে সম্প্রতি এই অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়েছে এন্টালির বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীকে। পুলিশ জানায়, তাঁর নাম রফিক সোহরাব। গত ২৭ জুলাই স্বামী নিখোঁজ বলে এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রফিকের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৯
Share: Save:

ঘরে টিমটিম করে জ্বলছে একটা ছোট বাল্‌ব। প্রবল দুর্গন্ধ। তার মধ্যেই কাঠের চেয়ারে বসিয়ে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে তাঁকে! নড়াচড়ার উপায় নেই। মুখেও ‘টেপ’ লাগানো। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওই চেয়ারে বসেই সারতে হয়েছে প্রাকৃতিক কাজ!

তালতলার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে সম্প্রতি এই অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়েছে এন্টালির বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীকে। পুলিশ জানায়, তাঁর নাম রফিক সোহরাব। গত ২৭ জুলাই স্বামী নিখোঁজ বলে এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রফিকের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। এর পরেই তদন্তে নেমে তালতলা থেকে রফিককে উদ্ধার করে এন্টালি থানার পুলিশ। এই ঘটনায় আগেই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে অনিল অগ্রবাল নামে আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে ৯ অগস্ট পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে পাঠান বিচারক।

উদ্ধারের পরেই রফিককে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর শরীরে জলের পরিমাণ একেবারে কমে গিয়েছিল। না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল বলেও হাসপাতাল সূত্রের খবর। তাঁর দেহে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন মিলেছিল। মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। পরে রফিকের
অভিযোগের ভিত্তিতেই অপহরণ এবং মারধরের অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

তালতলার বাড়িতে কী করে গেলেন রফিক?

পুলিশ জানায়, রফিক এবং তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জেনেছেন, রফিক নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। গত ২৬ তারিখ দুপুরে ব্যবসার কাজে এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে বেরোনোর মুখেই তাঁকে একটি গা়ড়িতে করে তুলে নিয়ে যান মহম্মদ হামজা ওরফে বাদশা নামে এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুস্তাফি আহমেদ, আলিম আখতার নামে আরও দু’জন। এ দিকে, স্বামী নিখোঁজ দেখে থানায় অভিযোগ করেন রফিকের স্ত্রী।

বাদশা রফিকের পূর্বপরিচিত। তাঁদের দু’জনের মধ্যে সম্প্রতি ব্যবসা নিয়ে ঝামেলাও হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। রফিকের দাবি, একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির একাংশ তাঁর নামে লিখে দেওয়ার জন্য রফিককে চাপ দিচ্ছিলেন বাদশা। রাজি না হওয়ায় তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে তালতলার ওই বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়। এমনকি, মারধর করে একটি স্ট্যাম্প পেপারে তাঁকে দিয়ে সই করিয়েও নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রফিকের।

রফিককে উদ্ধারের পরে তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে প্রথমে ধরা হয় বাদশাকে। তাঁকে জেরা করেই বাকিদের খোঁজ পায় পুলিশ। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এন্টালি থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘সূত্র মারফত খুব দ্রুত রফিকের খোঁজ মিলেছিল। আর কেউ জড়িত কি না, তা দেখা হচ্ছে। অপহরণের কারণ সম্পর্কেও আরও তদন্ত প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kidnap Arrest Businessman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE