Advertisement
E-Paper

রাজশক্তির দখলে রাজপথ, দিনভর ভোগান্তি জনতার

ভরা কাজের দিনে শহরের কেন্দ্রস্থলে সমাবেশ হলে যেমনটা হওয়ার কথা, ঠিক তা-ই হল। শাসক দলের কর্মসূচি হলে যে ভাবে বেড়ে যায় ভোগান্তির কলেবর, ব্যতিক্রম হল না তারও। সোমবারও তাই যথারীতি ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে থমকে রইল পথ। আটকে পড়ল অ্যাম্বুল্যান্স, ভুগতে হল হাসপাতালমুখী রোগীদের। পথে বেরোলো না বেশির ভাগ বাস-ট্যাক্সি-অটো। মওকা বুঝে যথেচ্ছ ভাড়া হাঁকল ট্যাক্সি। যেমন আশঙ্কা নিয়ে পথে বেরিয়েছিলেন, গন্তব্যে পৌঁছতে ঠিক তেমনটাই হিমশিম খেলেন মানুষ।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৫
দুই ছবি। সমাবেশে এসে ভিক্টোরিয়া দর্শন, চত্বরের পুকুরে স্নানও। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দুই ছবি। সমাবেশে এসে ভিক্টোরিয়া দর্শন, চত্বরের পুকুরে স্নানও। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ভরা কাজের দিনে শহরের কেন্দ্রস্থলে সমাবেশ হলে যেমনটা হওয়ার কথা, ঠিক তা-ই হল। শাসক দলের কর্মসূচি হলে যে ভাবে বেড়ে যায় ভোগান্তির কলেবর, ব্যতিক্রম হল না তারও। সোমবারও তাই যথারীতি ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে থমকে রইল পথ। আটকে পড়ল অ্যাম্বুল্যান্স, ভুগতে হল হাসপাতালমুখী রোগীদের। পথে বেরোলো না বেশির ভাগ বাস-ট্যাক্সি-অটো। মওকা বুঝে যথেচ্ছ ভাড়া হাঁকল ট্যাক্সি। যেমন আশঙ্কা নিয়ে পথে বেরিয়েছিলেন, গন্তব্যে পৌঁছতে ঠিক তেমনটাই হিমশিম খেলেন মানুষ। হাজিরার হার তলানিতে ঠেকল সরকারি অফিসে। ঠিক আগের মতোই।

ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ছুটির দিন ছাড়া শহরের কেন্দ্রে সমাবেশ করবে না তাঁর দল। ২১ জুলাই যে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, সেটা অবশ্য তখনই বলেছিলেন তিনি। তবে গত দু’বছর শহিদ দিবসের সমাবেশ ব্রিগেডে সরিয়ে নিয়ে গেলেও এ বার বৃষ্টির কারণে তা ফিরে এল ভিক্টোরিয়ার হাউসের সামনে, পুরনো ঠিকানায়। শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে সেই সভাস্থল, শহরের নানা দিক থেকে আসা সমাবেশমুখী মিছিল আরও আষ্টেপৃষ্টে যানজটে বেঁধে ফেলল চারপাশের সমস্ত রাস্তাকে।

নাগরিকেরা বলছেন, ভোগান্তির এই ট্র্যাডিশন নতুন নয়। তবে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে লাগাম টানার কথা বলেও খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ফের এমন সমাবেশ করলেন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। যানজটের পাশাপাশি সমাবেশের শহরে যথারীতি পাওনা হয়েছে কিছু বিশৃঙ্খলার ঘটনাও।

বছর আটেকের ছেলের হাতে লাগানো স্যালাইনের সূচ। তাকে কোলে নিয়ে হাঁটছেন বাবা। আগে আগে চলেছেন কাকা, হাতে স্যালাইনের বোতল। পথ মিছিলের দখলে। তাই অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে এ ভাবেই এনআরএসে যাওয়া।

বাস-ট্যাক্সি যে মিলবে না, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তা আঁচ করেছিলেন সাধারণ মানুষ। সকাল থেকেই জেলা ও শহরতলির লোকাল ট্রেনগুলি ছিল ভিড়ে ঠাসা। তার উপরে সমাবেশমুখী দলীয় কর্মীরা উঠে সেই ভিড় আরও বাড়িয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, অটোচালকদের সমাবেশে যেতে নির্দেশ দেন ইউনিয়নের নেতারা। শহরের নানা প্রান্তে তাই অটোর দেখাও মেলেনি সে ভাবে। বিভিন্ন রুটে অটো পেতে যাত্রীরা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন এক-দেড় ঘণ্টা। বরাহনগরে শাটল গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে গাড়িগুলিকে সমাবেশে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সরকারি বাস পথে নামলেও দমবন্ধকরা ভিড়ে ওঠার পরিস্থিতি ছিল না বহু ক্ষেত্রেই। এই সুযোগে ট্যাক্সিচালকদের একাংশ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫০-১০০ টাকা বেশি ভাড়া চেয়েছেন বলে অভিযোগ। বেগতিক দেখে কেউ কেউ হেঁটেই রওনা দিয়েছেন অফিসের দিকে।

পথের হাল দেখে অনেকেই ভরসা রেখেছিলেন মেট্রোয়। পাতালেও গিজগিজে ভিড়ে নাভিশ্বাস উঠেছে। নিয়ম মেনে ভুগিয়েছে মেট্রোও। যান্ত্রিক বিভ্রাট এ দিনও পিছু ছাড়েনি। তার মধ্যেই শোভাবাজার স্টেশনে লাইনে ঝাঁপের ঘটনাও ঘটেছে।

এ দিন সকাল থেকেই হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে ভিড় করতে থাকেন সমর্থকেরা। সকাল দশটার পর থেকেই একের পর এক দল রওনা দিয়েছে সভাস্থলের দিকে। ব্যানার-পোস্টার, স্লোগান, গান-বাজনা-নাচ কিছুই বাদ যায়নি। একের পর এক মিছিল রওনা দিতেই শুরু হয়ে গিয়েছে যানজট। তা বাড়তে বাড়তে দুপুরে চরমে পৌঁছয়।

হেঁটেই হাসপাতালের পথে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছিল। ভিড় সামলাতে ১৮টি ক্যামেরা বসায় লালবাজার। সকাল ৯টার মধ্যেই শহরে ঢুকে পড়ে ১৮০০ গাড়ি। তা সত্ত্বেও তেমন বড় মাপের যানজট হয়নি বলে দাবি পুলিশের। যদিও পুলিশেরই আর একটি অংশের বক্তব্য, সমাবেশের জন্য বেশির ভাগ বাস তুলে নেওয়া হয়েছিল। পথে নামেনি বহু অটো-ট্যাক্সি। সাধারণ যাত্রিবাহী গাড়ি তুলনায় অনেক কম থাকায় যানজট কিছুটা এড়ানো গিয়েছে।

গাড়ির মতোই এ দিন কম উপস্থিতি চোখে পড়েছে সরকারি অফিস-কাছারিতে। নবান্ন-নব মহাকরণ-সল্টলেক, ছবিটা সর্বত্রই এক। শনি-রবি ছুটির পরে সোমবার সপ্তাহের শুরুতেই অনেকেই ছুটি নিয়ে নিয়েছিলেন। নবান্নে লিফ্টে ওঠার জন্য কর্মীদের লাইন চোখে পড়েনি বিশেষ। নব-মহাকরণের চেহারাও ছিল একই রকম। সকালে কিছুক্ষণের জন্য দফতরে গিয়েছিলেন পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং সমবায় মন্ত্রী জ্যোতির্ময় কর। সল্টলেকের সেচ ভবন, বিকাশ ভবন, জলসম্পদ ভবন-সহ বহু সরকারি অফিসেই হাজিরা ছিল খুবই কম। সরকারি সূত্রের খবর, কর্মীদের অনেকে এসে হাফ ছুটি নিয়ে গিয়েছেন। অনেকে আবার অফিসমুখোই হননি।

তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, “আমাদের কর্মীরা ছুটি নিয়েই জনসভায় গিয়েছেন। সেই অধিকার তাঁদের আছে। তবে জরুরি পরিষেবা চালু ছিল। অফিসেও অল্পবিস্তর কাজ হয়েছে।”

সমাবেশের দিন যানজটের পাশাপাশি শহরজুড়ে নানা বিশৃঙ্খলাও মানুষের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কলকাতায় সমাবেশে এসে ভিক্টোরিয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর থেকে আসা একদল সমর্থক। পুকুর দেখেই স্নান করতে নেমে পড়লেন তাঁরা! সুযোগ বুঝে ধর্মতলার ফুটপাথের উপরেই হোটেল সাজিয়েছিলেন অনেকে। ডিম-ভাত খাওয়া মানুষের ভিড়ে সেখান দিয়ে হাঁটা দায় ছিল দিনভর। একটু দূরেই রাস্তার ধারে সমাবেশের বিড়ের সারি দিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার ছবিটাও দেখা গিয়েছে যথারীতি।

বেলা দুটো। সভা তখন শেষ। ধর্মতলা, ময়দান চত্বর জুড়ে খাবারের উচ্ছিষ্ট, খালি প্যাকেট। সে সব মাড়িয়েই ঘরমুখো সমর্থকেরা। রাস্তা থেকে জঞ্জাল তুলতে সাফাইকর্মী নামিয়েছিল পুরসভা। তবে তা শুধু ধর্মতলা চত্বরেই।

দিনভরের ভিড়ে ঠাসা ছবিটা বদলে গেল বিকেল গড়াতেই! সকালে যেখানে শুধু মিছিল ও যানজট, বিকেলে সেখানেই ফাঁকা রাস্তা। বাস-ট্যাক্সি না থাকায় ভরবিকেলের লেনিন সরণি এবং এসএন ব্যানার্জি প্রায় সুনসান। সপ্তাহের প্রথম দিনে কার্যত ছুটির দিনের চেহারা। হাতেগোনা যে ক’টা বাস চলেছে, তাতেও ওঠার মতো লোক ছিল না। শিয়ালদহ-হাওড়া স্টেশনে রোজ বিকেলের ঠাসাঠাসি ভিড়ের বদলে ট্রেন অনেক ফাঁকা! তবে বিকেলের কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেনে সমাবেশ-ফেরত ভিড় চোখে পড়েছে।

কিন্তু লোকাল ট্রেন এত ফাঁকা কেন? অনেকেই বলছেন, সন্ধ্যার লোকাল ট্রেনে অধিকাংশ যাত্রীই সরকারি কর্মী। তাঁদের অনেকেই এ দিন আসেননি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাও বিকেল গড়ানোর আগেই বাড়িমুখো হয়েছেন।

kolkata tmc rally
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy