Advertisement
০৭ মে ২০২৪

আবার সার্জেন্ট-নিগ্রহ, এ বার অভিযুক্ত কিশোর

বেলা সওয়া ১১টা। সিগন্যাল ভেঙে ইএম বাইপাস থেকে একটি গাড়িকে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের দিকে যেতে দেখেই পিছু নিলেন মোটরবাইক-আরোহী ট্রাফিক সার্জেন্ট। কিছু দূর গিয়ে সিগন্যাল ভেঙে গাড়িটি ইউ-টার্ন করে ফের বাইপাসের দিকে যেতে শুরু করল। ধাওয়া করে কালিকাপুর মোড়ের কাছাকাছি গিয়ে গাড়িটিকে থামালেন সার্জেন্ট। লাইসেন্স দেখতে চাইলেন চালকের কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

বেলা সওয়া ১১টা। সিগন্যাল ভেঙে ইএম বাইপাস থেকে একটি গাড়িকে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের দিকে যেতে দেখেই পিছু নিলেন মোটরবাইক-আরোহী ট্রাফিক সার্জেন্ট। কিছু দূর গিয়ে সিগন্যাল ভেঙে গাড়িটি ইউ-টার্ন করে ফের বাইপাসের দিকে যেতে শুরু করল। ধাওয়া করে কালিকাপুর মোড়ের কাছাকাছি গিয়ে গাড়িটিকে থামালেন সার্জেন্ট। লাইসেন্স দেখতে চাইলেন চালকের কাছে।

পুলিশের অভিযোগ, চালক লাইসেন্স দেননি। উল্টে গাড়ির সামনের আসনে বসে থাকা এক কিশোর ড্যাশবোর্ডের উপরে পা তুলে সার্জেন্টকে বলে, ‘‘তুই দাঁড়িয়ে থাক।’’ অভিযোগ, এর পরে ওই কিশোরের নির্দেশেই চালক গাড়ি দিয়ে ঠেলতে থাকেন সুজয় প্রামাণিক নামে ওই সার্জেন্ট এবং ঘটনাস্থলে থাকা গরফা থানার এসআই অম্লান ভট্টাচার্যকে।

ওই সার্জেন্ট সঙ্গে সঙ্গেই পদস্থ কর্তাদের খবর পাঠান। অভিযোগ, পুলিশকর্তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরেও ওই কিশোরের নির্দেশে চালক গাড়ি দিয়ে দুই অফিসারকে ঠেলতেই থাকেন। পরে গাড়ি থেকে নেমে ট্রাফিকের ওসি-র ওয়্যারলেস সেট কেড়ে আছড়ে ভেঙে দেন।

পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন ওই কিশোরের মা বৈশালী ডালমিয়া। তিনি ভারতীয় ক্রিকেট সংস্থা বিসিসিআই এবং এ রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থা সিএবি-র সভাপতি জগমোহন ডালমিয়ার মেয়ে। বুধবারের এই ঘটনার পরে বৈশালীদেবী বলেন, ‘‘পুলিশই আমার ছেলে এবং গাড়িচালককে মারধর করেছে।’’ ওই মহিলার বক্তব্য, চালক গাড়ির পিছনের দিকে রাখা লাইসেন্স দেখানোর চেষ্টা করছিলেন। তখন পুলিশ দুর্ব্যবহার করে। প্রতিবাদ করায় তাঁর ছেলেকেও পেটায়। যথেচ্ছ চড়-কিল-ঘুষি মারে। ওয়াকিটকি দিয়েও আঘাত করে। ঘাড়ে-হাতে-পায়ে-চোখে আঘাত লাগে তার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করেছেন।

সম্প্রতি বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝি দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায়কে আটকেছিলেন চন্দন পাণ্ডে নামে এক ট্রাফিক কনস্টেবল। অভিযোগ, দেবপ্রিয়া এবং তাঁর সঙ্গীরা চন্দনবাবুকে হেনস্থা করেন। তাঁর হাতের নোটবুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে জামিন-অযোগ্য ধারায় একটি মামলা করলেও দেবপ্রিয়া বা সংশ্লিষ্ট অন্য কাউকে গ্রেফতার করেনি লালবাজার। তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা।

এ দিন অবশ্য ডালমিয়ার দৌহিত্রের গাড়িচালক জামির হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো, পুলিশকে মারধর-সহ জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করে পাঠানো হয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে। পুলিশ জানায়, জুভেনাইল বোর্ড ওই কিশোরকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরও দু’টি কিশোর ছিল গাড়িতে। কিন্তু পুরো বিষয়টির সঙ্গে তাদের যোগ না-থাকায় ঘটনার পরেই দু’জনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

মেয়রের ভাইঝি দেবপ্রিয়াও সম্প্রতি একই ভাবে পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। পুলিশের একাংশ বলছেন, এ দিন ওই কিশোর এবং তার গাড়িচালকের ঔদ্ধত্য দেখে তাঁরা বিস্মিত হয়ে গিয়েছেন। তবে লালবাজারেরই অনেকে এতে অবাক হওয়ার কিছু দেখছেন না। তাঁদের বক্তব্য, শহরের প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালীদের পরিজনেরা নিয়ম ভাঙার পরে প্রায়শই এমন উদ্ধত আচরণ করে থাকেন। যে-সব পুলিশকর্মী পথেঘাটে কাজ করেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাও তেমনই।

ট্রাফিক পুলিশের একাংশ বলছেন, অনেক সময়েই প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কর্তাদের রোষে পড়তে হয় নিচু ও মাঝারি স্তরের পুলিশকর্মীদের। তেমন অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই হয়তো পূর্ব যাদবপুর ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট সুজয়বাবু এ দিন ঘটনার পরে নিজের বিভাগীয় ওসি এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।

ঘটনার কথা জানতে পেরেই গরফা থানায় হাজির হন ডালমিয়ার মেয়ে বৈশালীদেবী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-ও। গরফা থানার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, তাঁর ছেলের স্কুলে খেলা আছে। তাই দুই বন্ধুকে নিয়ে প্র্যাক্টিসে গিয়েছিল। চালক হয়তো আইন ভেঙে গাড়ি ঘুরিয়েছিল। ‘‘তার জন্য পুলিশ লাইসেন্স জমা নিতে পারত। কিন্তু মারধর করল কেন,’’ প্রশ্ন বৈশালীদেবীর। তাঁর দাবি, কোনও ‘কেস’ না-দিয়ে অত ‘বাচ্চা ছেলে’‌কে সামনে হাজির করায় পুলিশকে তিরস্কার করেছে জুভেনাইল বোর্ড।

এক পুলিশকর্তা অবশ্য জানান, তিরস্কার-টিরস্কার নয়। কিশোরটিকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বোর্ড বলেছে, পুরো ঘটনার রিপোর্ট তাদের কাছে পেশ করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

EM by pass Traffic sergeant police signal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE