অনলাইন লাইসেন্সে সাফল্য মিলেছে। চলতি মাস থেকে তাই গাড়ির ট্যাক্স টোকেন থেকে স্মার্ট কার্ড— সব কিছু মিলবে অনলাইনে।
কোনও পুরনো গাড়ি কেনা যত সহজ, নিয়ম মেনে তা নিজের নামে করা ততটাই কঠিন। সমস্ত নথি নিজের নামে করতে গিয়ে কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হয় ক্রেতাকে। পরিবহণ দফতরে ঘুরে ঘুরে মাসের পর মাস কেটে যায়। কিন্তু নাম পরিবর্তন হয় না। বাধ্য হয়ে দালালের শরণ নিতে হয়। ফিটনেস সার্টিফিকেট পেতেও তা-ই। সময় বাঁচাতে শরণাপন্ন হতে হয় দালালের।
সেই ‘ট্র্যাডিশন’ এ বার ভাঙতে চান পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সে জন্য পরিবহণ দফতরের সব পরিষেবা অনলাইনে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। অনলাইন হলে দালালরাজও খতম হবে বলে দাবি পরিবহণ-কর্তাদের। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ বার থেকে ঘরে বসে বা সাইবার কাফেতে বসে অনায়াসে ওই সব পরিষেবা পাবেন আম জনতা।
দফতরের ওই কর্তা জানান, জুলাই মাসে কলকাতা থেকে শুরু হতে চলেছে ওই অনলাইন পরিষেবা। গত বছর অনলাইনে লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ওই প্রক্রিয়া সর্বত্র সফল হওয়ার পরেই সমস্ত পরিষেবা অনলাইনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই কর্তা জানান, http://www.vahan.nic.in ওয়েবসাইটে গেলেই ডুপ্লিকেট স্মার্ট কার্ড, গাড়ির ট্যাক্স জমা দেওয়া, অন্য রাজ্যের গাড়ি কলকাতায় রেজিস্ট্রেশন করা, ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং নিজস্ব গাড়ির সমস্ত বিবরণ-সহ সব কিছুই আবেদন করা বা ওই সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে। তার পরে সেখানে থাকা ফর্ম পূরণ করে অনলাইনেই টাকা জমা দিতে হবে। এমনকী, ফিটনেস সার্টিফিকেটও মিলবে অনলাইনেই।
ভুল তথ্য বা কম তথ্য দফতরে জমা করলে আবেদনকারীকে যে হ্যাপা পোহাতে হত, এ বার থেকে তাতেও ইতি টানবে অনলাইন ব্যবস্থা। অনলাইনেই একেবারে বিনা পয়সায় ফর্ম পূরণ করলে সঙ্গে সঙ্গেই নিজের গাড়ির সমস্ত বিবরণ পাওয়া যাবে। এর ফলে সময় বাঁচবে পাশাপাশি, আগে এই সব তথ্য পেতে যে ২৪০ টাকা জমা দিতে হত, তা-ও দিতে হবে না। একই ভাবে এক দিন মোটর ভেহিকল্স বিভাগে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করার তিন দিন পরে ওই ওয়েবসাইট থেকেই সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে নিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। কোনও ব্যক্তি অনলাইনে কোনও ভুল তথ্য দিলে বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ দিলে এসএমএসের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেও। তখন ওই ব্যক্তি ফের অনলাইনে তা জমা করে দিতে পারবেন।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, সময় বাঁচানোর জন্যে এবং সমস্ত নিয়ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার কারণে অনেকেই দালালদের কবলে পড়তেন। অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের উপকার তো হবেই, দাপট কমে যাবে দালালদেরও। ওই কর্তার কথায়, ‘‘বারবার দফতরে এসে কাজ করতে না হলেই দালালদের দাপট কমবে।’’
দফতর সূত্রের খবর, চলতি মাসেই প্রথমে কসবা মোটর ভেহিকল্স বিভাগ থেকে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হবে। প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে অফিসের কর্মচারীরাই অনলাইনে কাজ করবেন। পরে কলকাতার আশপাশের জেলাগুলির মোটর ভেহিকল্স বিভাগে তা চালু করা হবে। তার পরে ধাপে ধাপে আম জনতার জন্যে খুলে দেওয়া হবে অনলাইন ব্যবস্থা। তবে একই সঙ্গে পরিবহণ দফতরের একাংশের বক্তব্য, অনলাইন পরিষেবা চালু হলে দফতরের আয় কিছুটা হলেও কমবে। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘একে তো গাড়ির বিবরণ পেতে যে ২৪০ টাকা দিতে হত, সেটা আর দফতর পাবে না। পাশাপাশি, অনলাইনে কেউ ভুল তথ্য দিলে, তাঁদের ফোনে এসএমএস পাঠাতে গেলেও যে খরচ হবে সেটাও দফতরকেই মেটাতে হবে। তবে মানুষকে ঠিক সময়ে সর্বোত্তম পরিষেবা দিতে সরকারকে তো কিছুটা দায় নিতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy