চলা শুরু হয়েছিল আগেই। এ বার তিন নিগমের সংযুক্তির পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল রাজ্য পরিবহণ দফতর।
কলকাতার তিনটি পরিবহণ নিগমকে একত্রিত করতে আগেই গড়া হয়েছিল অভিন্ন বোর্ড। এ বার অভিন্ন পরিচালন কর্তৃপক্ষ তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি, তিনটি নিগমের সংযুক্তিকরণ সুষ্ঠু ভাবে এবং যথাযথ পরিকল্পনা অনুযায়ী হওয়া নিশ্চিত করতে রাজ্যের পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্সও গঠন করেছে রাজ্য সরকার।
গত ৮ জুন কলকাতার তিনটি নিগম ডব্লিউবিএসটিসি, সিএসটিসি এবং সিটিসি-কে একত্রিত করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যে একটি অভিন্ন বোর্ডও ঘোষণা করেছিলেন তিনি। অভিন্ন পরিচালন কর্তৃপক্ষ গঠন তারই পরের ধাপ। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অভিন্ন পরিচালন কর্তৃপক্ষের মাথায় থাকছেন সিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) নারায়ণস্বরূপ নিগম। যুগ্ম এমডি পদে বাকি দুই নিগমের এমডি নীলাঞ্জন শান্ডিল্য। এ ছাড়াও, তিনটি নিগমে যুক্ত তিন ডব্লিউবিসিএস অফিসারকে ডেপুটি এমডি করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যেই নতুন পরিচালন কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করবেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
এর পাশাপাশি পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গড়া হয়েছে টাস্ক ফোর্স। কী করবে তারা? নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘সংযুক্তিকরণের পথে কী কী আইনি জটিলতা রয়েছে, কী ভাবে সবক’টি ডিপো একই ছাতার নীচে আনা যায়, সে সব ঠিক করবে টাস্ক ফোর্স। তিনটি নিগম একত্রিত হলে তার যৌথ লোগো বা ব্র্যান্ড নিয়েও ভাবনাচিন্তা করে সরকারকে প্রস্তাব দেবে তারাই।’’
রাজ্য সরকারের বক্তব্য, তিনটি নিগমকে একত্র করতে পারলে এক দিকে যেমন অযথা খরচ কমবে, তেমনই বাড়বে আয়, আবার সরকারের উপরে থাকা পরিবহণের আর্থিক বোঝাও অনেকটাই কমবে। যদিও এর উল্টো মতও রয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার ভাবনা থেকেই ‘জোন্স-লাঙ্গ-লাসাল’-এর মতো একটি পেশাদার সংস্থাকে সেই কাঠামো তৈরির দায়িত্ব দেয় সরকার। ওই সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছিল, আইনি বাধাবিপত্তি কাটিয়ে নিগমগুলিকে চটজলদি একত্রিত করা কঠিন। আবার, একত্রিত হলেই যে নিগমগুলি লাভের মুখ দেখবে— এমন নিশ্চয়তাও নেই। উল্টে, অধিক সন্ন্যাসীতে বাড়তি সমস্যা তৈরি হতে পারে বলেও মনে করেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশের কর্তারা। তাঁদের কথায়, ‘‘তিনটি নিগমের কর্মীদের বেতন কাঠামো ভিন্ন। অভিন্ন পরিচালন কর্তৃপক্ষ বা বোর্ড তৈরি করলেই সে সব মিটবে না।’’
সমস্যা আছে অন্যত্রও। ১৯৪৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের রোড ট্রান্সপোর্ট আইনের আওতায় উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর থেকে বরাদ্দ করা ২০০ কোটি টাকায় স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন তৈরি হয়েছিল। পরে ষাটের দশকে ওই নামের আগে ‘ক্যালকাটা’ জুড়ে তৈরি হয় কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি)। কেন্দ্রীয় আইনে তৈরি হওয়ায় ওই নিগমের সঙ্গে অন্য নিগমকে জুড়তে বা ওই নিগমকে অন্য কোনও সংস্থায় মিশিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় আইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সেই কাজও সময়সাপেক্ষ এবং জটিলও বটে।
এ বার নতুন করে কলকাতার তিনটি নিগমকে একত্রিত করার প্রক্রিয়া কী ভাবে হবে— তা ঠিক করতে একটি আইনি সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছে সরকার। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই সংস্থার রিপোর্ট পাওয়ার পরেই তিনটি নিগমকে সংযুক্ত করার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy