চৈতালী গঙ্গোপাধ্যায়।
পুরসভা বলছে, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে জোরকদমে কাজ চলছে। বাসিন্দারা বলছেন পুরসভা তৎপর নয়।
আর এই চাপানউতোরের মধ্যেই বেড়ে চলেছে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ। তা যে নিয়ন্ত্রণে আসার নামগন্ধ নেই, রবিবার দমদম এবং দক্ষিণ দমদমে ফের ডেঙ্গি এবং অজানা জ্বরে দুই মহিলার মৃত্যু সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এর পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসেচতনতার ছবিটা বহাল ছিল এ দিনও। তালিকায় নয়া সংযোজন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এ দিনও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু জায়গায় রোগবাহী মশার লার্ভা মিলেছে। পরিদর্শনে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে এসেছেন কলকাতার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ।
ডেঙ্গি-মৃত্যু নিয়ে বিধাননগর পুরসভার তুমুল সমালোচনা শুরু হওয়ার পরে দক্ষিণ দমদমের পুরকর্তারা দাবি করেছিলেন, বহু দিন আগে থেকেই প্রতিটি ওয়ার্ডে জোরকদমে কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। যার ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সেই দাবি যে কতটা অন্তঃসারশূন্য ছিল, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাপ্রশাসনের বক্তব্যই— ‘উত্তর ২৪ পরগনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকা। এখানে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি।’
ব্যর্থতা নিয়ে ওঠা অভিযোগ স্বীকার দূর অস্ত্, এ দিন দক্ষিণ দমদমের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সুভাষনগরে চৈতালী গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক মহিলার মৃত্যুর পরেও উল্টে বাসিন্দাদের উপরেই পরিস্থিতির দায় চাপিয়েছেন পুরকর্তারা। এই নিয়ে এই পুর-এলাকায় মোট চার জনের মৃত্যু হল ডেঙ্গিতে। পুরকর্তাদের দাবি, চৈতালীদেবীর বাড়ি গিয়ে একাধিক জায়গায় জমা জল দেখতে পেয়েছেন পুরকর্মীরা। অর্থাৎ, বাড়ির সদস্যদের সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) গোপা পাণ্ডে বলেন, ‘‘পুরসভা সাধ্যমতো কাজ করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডকে ঘিরে পরিকল্পনা করে কাজ করা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে সচেতনতা। কিন্তু বাসিন্দারা সচেতন নন। ফলে কাজ করলেও সুফল মিলছে না।’’
কী বলছে বাস্তব পরিস্থিতি?
সূত্রের খবর, চৈতালীর মা তৃপ্তি ঘোষালও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনিও সুভাষনগরের বাসিন্দা। এ দিন তৃপ্তিদেবীর বাড়িতে যান চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য)। এ ক্ষেত্রেও ঘুরিয়ে বাসিন্দাদের সমালোচনা করে তাঁর অভিযোগ, ওই বাড়ির আশপাশেই প্রচুর আইসক্রিমের কাপ, মাটির ভাঁড়ে জল জমে রয়েছে। যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর, সিপিএমের শিশির বলের অভিযোগ— ‘‘আমার ওয়ার্ডে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের কাজ হচ্ছে না। ওয়ার্ডে ৩১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। সেই তথ্য পুরসভার কাছে জমা করেছি। তার পরেও কাজ হচ্ছে না। মশার তেল, ব্লিচিং পাউডার মিলছে না।’’
বিরোধী দলের কাউন্সিলরের এই অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান পারিষদের (স্বাস্থ্য) দাবি, ‘‘অযথা রাজনীতি করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য ২০ লিটার তেল, ব্লিচিং পাউডার পাঠানো হয়েছে।’’
শাসক-বিরোধীর এই তরজার মাঝে কী বলছেন বাসিন্দারা? তাঁদের একাংশেরও অভিযোগ, পুরসভার তৎপরতা অন্তত তাঁদের চোখে পড়ছে না। বহু জায়গায় জল জমে। মশার তেল ছড়ানো, কামান দাগা, জঙ্গল সাফাই— কোনও কাজই হচ্ছে না।
দমদমের ছবিটাও কমবেশি ছবিটা একই রকম। শনিবারও অজানা জ্বরে মৃত্যু হয়েছে দমদমের শান্তিকুঞ্জের বাসিন্দা প্রৌঢ়া শ্যামলী সেনগুপ্তের।
অন্য দিকে, পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে অবশেষে রবিবার মশাবাহিত রোগ নির্ণয়ে যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে বিধাননগরের মাতৃ সদনে। তবে পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা উন্নত হলেও এখনও অনেক জায়গা থেকে জ্বরে সংক্রমণের খবর আসছে বলে পুরসভা সূত্রের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy