Advertisement
০৫ মে ২০২৪
বাগুইআটি কাণ্ড

ডিম-ভাত খেয়ে পাড়ার পিসির মাথায় নোড়ার ঘা

যাঁর শিল, তাঁরই নোড়া। তবে সেই নোড়া দিয়ে দাঁতের গোড়া নয়, একেবারে পিসির মাথাটাই ভেঙে দিল পাড়াতুতো জোড়া ভাইপো। পিসি মানে বাগুইআটির তরুণী সুভদ্রা হালদার। পাড়ার সম্পর্কে পিসি। কিন্তু আদরে-মমতায় তিনি যে আসল পিসির থেকে কম যান না, অভিযুক্ত দুই ভাইপোর বয়ানেই তার প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। জেরার মুখে দুই তরুণ স্বীকার করেছে, রবিবার রাতে সুভদ্রাকে খুন করে তারা। তার আগে বাগুইআটি অশ্বিনীনগরের অমরাবতী এলাকায় ওই তরুণীর ফ্ল্যাটে অতিথি হিসেবে ছিল দু’জনেই। পিসি তাদের আদরযত্ন করেছেন। রবিবার, খুনের রাতেও যত্ন করে নিজের হাতে ডিমের ঝোল, পোস্ত রান্না করে খাইয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৫ ০৩:৪৯
Share: Save:

যাঁর শিল, তাঁরই নোড়া। তবে সেই নোড়া দিয়ে দাঁতের গোড়া নয়, একেবারে পিসির মাথাটাই ভেঙে দিল পাড়াতুতো জোড়া ভাইপো।

পিসি মানে বাগুইআটির তরুণী সুভদ্রা হালদার। পাড়ার সম্পর্কে পিসি। কিন্তু আদরে-মমতায় তিনি যে আসল পিসির থেকে কম যান না, অভিযুক্ত দুই ভাইপোর বয়ানেই তার প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। জেরার মুখে দুই তরুণ স্বীকার করেছে, রবিবার রাতে সুভদ্রাকে খুন করে তারা। তার আগে বাগুইআটি অশ্বিনীনগরের অমরাবতী এলাকায় ওই তরুণীর ফ্ল্যাটে অতিথি হিসেবে ছিল দু’জনেই। পিসি তাদের আদরযত্ন করেছেন। রবিবার, খুনের রাতেও যত্ন করে নিজের হাতে ডিমের ঝোল, পোস্ত রান্না করে খাইয়েছেন।

পাড়ার ভাইপোদের খাইয়েদাইয়ে শোয়ার বন্দোবস্ত করে পাশের ঘরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন সুভদ্রা। ঘুমের মধ্যেই ভাইপোদের হাতে খুন হন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে কুলতলিতে ওই তরুণীর গ্রাম গরানকাটি থেকেই গ্রেফতার করা হয় সুবীর মণ্ডল ও রথীন মণ্ডল নামে বছর আঠারোর দুই তরুণকে। অভিযুক্তেরা পুলিশকে জানিয়েছে, শেষ রাতে তারা রান্নাঘর থেকে নোড়া এনে সেটিকে কাপড় দিয়ে মুড়ে নেয়। পরে ওই নোড়া দিয়ে তিন বার মারে সুভদ্রার মাথায়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দু’টি বালিশ দিয়ে তাঁর শ্বাস রোধ করে। তার পরে মৃতদেহটি টেনে নিয়ে যায় চানঘরে।

পিসিকে তারা খুন করল কেন?

জবাবে দুই তরুণ যা বলেছে, তা চমকে দিয়েছে দুঁদে গোয়েন্দাদেরও। তাঁরা জানান, দুই তরুণকে জেরা করে জানা গিয়েছে, পিসিকে খুন করলে তাঁর ফ্ল্যাট থেকে অনেক টাকা মিলবে বলে মনে করেছিল তারা। সুভদ্রা যে পানশালায় নর্তকীর কাজ করে অনেক টাকা রোজগার করেন, গ্রামের সকলেই তা জানতেন। ওই তরুণী যখন কুলতলির গ্রামে যেতেন, তাঁর ঝাঁ-চকচকে গাড়ি আর ঠাটবাট দেখে অবাক হতেন বাসিন্দারা। দুই তরুণের ধারণা হয়, পিসিকে মারলে অনেক টাকা হাতে আসবে। সেই জন্যই তারা ছক কষে শনিবার রাতে সুভদ্রার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল।

কত টাকা পেয়েছিল সুভদ্রার ঘরে?

তরুণদের জবাব শুনে ফের বিস্মিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, খুনের কথা কবুল করার পরে দুই তরুণই আক্ষেপ করেছে, এত কাণ্ড করে সুভদ্রার ফ্ল্যাটে মিলেছে মাত্র ৪২০ টাকা, একটি সোনার নথ, হাতঘড়ি আর তাঁর মোবাইল!

টাকা যত কমই হোক, পুরো ঘটনায় সুভদ্রার মোবাইলটির ভূমিকা সামান্য, এমন কথা বলা যাচ্ছে না। কারণ, ওই মোবাইল থেকেই অভিযুক্তদের সূত্র মিলেছে বলে জানান তদন্তকারীরা।

কী করে?

পুলিশ জানায়, সুভদ্রার ফোনের তথ্য নিয়ে দেখা যায়, ৩০ মে, শনিবার ওই ফোনে যে-সব নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, তার মধ্যে দু’টি নম্বর রাতে বাগুইআটি এলাকাতেই ছিল। ওই নম্বর দু’টির অবস্থান জানতে গিয়ে দেখা যায়, খুনের পরের দিন থেকে সেগুলি রয়েছে কুলতলির গরানকাটি গ্রামেই। কিন্তু যে-নামে সিম তোলা হয়েছে, সেই নামের সঙ্গে সুভদ্রার পরিচিত কারও নাম মিলছে না। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কুলতলি থানার সোর্স মারফত ওই দু’টি নম্বরের খোঁজ করা হয়। ওই এলাকায় যাঁরা মোবাইলের সিম বিক্রি করেন, তাঁরা এই ধরনের নম্বরের খোঁজ দিতে পারেন— এই ধারণা থেকে পুলিশ সুবীর মণ্ডল নামে এক সিমকার্ড বিক্রেতার কাছে পৌঁছয়।

পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা সুবীরের কাছে গিয়েছিলাম ওই দু’টি নম্বরের মালিকের খোঁজ নিতে। কিন্তু পুলিশ দেখেই হাবভাব পাল্টে যায় সুবীরের। চাপ দিতেই সুবীর আমাদের পায়ে পড়ে কবুল করে, সে আর রথীন মিলে সুভদ্রাকে খুন করেছে।’’ এর পরেই পুলিশ ওই পাড়া থেকে রথীনকে গ্রেফতার করে।

রথীন দিনমজুর। সে সুভদ্রার ছোট ভাই খোকনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সেই সুবাদে ওই তরুণীর পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সুবীর পুলিশকে বলেছে, খুনের ছক কষে রথীনই। দেড় হাজার টাকার লোভ দেখিয়ে সুবীরকে রাজি করায় সে। কাজ শেষ করে রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ তারা বাইরে থেকে ফ্ল্যাটে তালা-চাবি দিয়ে বেরিয়ে যায়। শিয়ালদহ থেকে ধরে দক্ষিণ শহরতলির ট্রেন। এবং ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথেই সুভদ্রার ফ্ল্যাটের চাবিটি তারা বাইরে ফেলে দেয়।

বিধাননগরের গোয়েন্দা-প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘সুবীরের কাছে সুভদ্রার মোবাইল ফোনটি পাওয়া গিয়েছে। দু’জনেই খুনের কথা স্বীকার করেছে।’’ শুক্রবার অভিযুক্ত দুই তরুণকে বারাসত আদালত তোলা হয়। আদালত তাদের আট দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE