Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Accident

তিলজলায় সাবান তৈরির তরলের ট্যাঙ্কারে ডুবে মৃত্যু দু’জনের, আঁকশি দিয়ে তোলা হল দেহ

দুর্ঘটনার পরে সাবান কারখানাটিতে সুরক্ষা-বিধি মানা হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধার করতে এত সময় লাগল কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

An image of the accident

উদ্ধার: ট্যাঙ্কার থেকে তুলে আনা হয়েছে একটি দেহ। শনিবার, তিলজলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১২
Share: Save:

তিলজলায় একটি সাবানের কারখানায় সাবান তৈরির তরল উপকরণ-বোঝাই ট্যাঙ্কারে ডুবে মৃত্যু হল দু’জনের। শনিবার বিকেলের এই ঘটনায় দু’টি মৃতদেহ ট্যাঙ্কার থেকে বার করতেই কেটে যায় প্রায় তিন ঘণ্টা। শেষে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও দমকলকর্মীরা মৃতদেহগুলি লোহার আঁকশি দিয়ে টেনে এবং পায়ে দড়ি বেঁধে ট্যাঙ্কার থেকে বার করেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম লোগাননাথন (৩৩) এবং কার্তিক হালদার (৪৩)। উত্তর বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা লোগাননাথন ট্যাঙ্কারের খালাসি ছিলেন। সোনারপুরের কার্তিক ছিলেন ওই কারখানারই কর্মী।

এই দুর্ঘটনার পরে সাবান কারখানাটিতে সুরক্ষা-বিধি মানা হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধার করতে এত সময় লাগল কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। দমকল ও পুলিশের তরফে যদিও এ বিষয়ে স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকলকর্তা নীহাররঞ্জন রায় শুধু বলেছেন, ‘‘সব দিক দেখে উদ্ধার করতে কিছুটা সময় লেগেছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ তিলজলার ওই সাবান কারখানায় দক্ষিণ ভারত থেকে একটি ট্যাঙ্কার এসে পৌঁছয়। তাতে একটি নির্দিষ্ট ধরনের সাবান তৈরির উপকরণ, নিম তেল ভরা ছিল। প্রায় ২৪ হাজার লিটারের ওই ট্যাঙ্কারের পেটে ছ’টি ঢাকনা রয়েছে। সেগুলি দিয়ে ট্যাঙ্কারে তরল ভরা এবং বার করা যায়। ট্যাঙ্কার খালি করার আগে একটি ঢাকনার সামনে ঝুঁকে তরলের উচ্চতা মাপতে যান লোগাননাথন। তখনই হঠাৎ ট্যাঙ্কারের তরলের মধ্যে পড়ে যান তিনি। তা দেখে অন্যেরা চিৎকার শুরু করলে ছুটে যান কার্তিক। কিন্তু তিনিও ট্যাঙ্কারের তরলে পড়ে যান। এর পরে আর কেউ এগোতে সাহস করেননি।

পুলিশের দাবি, এর পরে ওই কারখানার তরফে খবর দেওয়া হয় দমকলে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশও। শুরু হয় দু’জনকে উদ্ধারের তোড়জোড়। প্রথমে দমকলের কর্মীরা ঝুঁকে পড়ে চেষ্টা করলেও কারও নাগাল মেলেনি। তত ক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন পুলিশ এবং দমকলকর্তারা। খবর দেওয়া হয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। কিন্তু কী করে ওই দু’জনকে ট্যাঙ্কার থেকে তুলে আনা হবে, তা ঠিক করতেই কেটে যায় কিছুটা সময়। ট্যাঙ্কারের দেওয়াল কেটে দু’জনকে উদ্ধার করার কথাও এক বার ভাবা হয়। কিন্তু পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।

এর পরে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ স্থানীয় পুর কার্যালয় থেকে একটি লোহার আঁকশি নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং দমকলকর্মীরা মিলে মোট ছ’জনের একটি দল ট্যাঙ্কারের উপরে ওঠে। লোহার আঁকশি দিয়ে ওই দু’জনের শরীরের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা হয়। কিছু ক্ষণ আঁকশি দিয়ে ট্যাঙ্কারের ভিতরের তরলের মধ্যে নাড়াচাড়া করা হলে এক সময়ে এক জনের পায়ের নাগাল মেলে। উদ্ধারকাজে যুক্ত বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর এক সদস্য বলেন, ‘‘থকথকে ধরনের তেল। তাতে দু’জনেরই মাথাটা নীচের দিকে আর পা উপরের দিকে হয়ে ছিল। আঁকশি দিয়ে কোনও মতে পা টেনে কাছে আনা হয়। তার পরে পায়ের সঙ্গে কোনওক্রমে দড়ি বেঁধে টানা শুরু হয়। তাতেই ধীরে ধীরে দেহ উপরের দিকে উঠে আসতে থাকে। ওই দেহে প্রাণ খোঁজা নিরর্থক।’’ এর পরে তিনি বলেন, ‘‘একটি করে দেহ তুলে ট্যাঙ্কারের ছাদে ফেলা হয়েছে। সেখান থেকে গড়িয়ে নীচের দিকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভাবে দু’টি দেহ উদ্ধারের পরে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ময়না তদন্তের পরে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তা-ও দেখা হবে।’’ তবে ওই সাবান কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে রাত পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Soap tiljala Dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE