আর জি করের ইএনটি বিভাগের সামনে ঘুরছে কুকুর। —নিজস্ব চিত্র।
পানের পিক ফেলে ফেলে রাঙিয়ে গিয়েছে দেওয়াল। পাইপ ফুটো হয়ে ঝরঝরিয়ে জল পড়ছে। রোগী যাতায়াতের পথে, হাসপাতালের বারান্দায় অবাধ যাতায়াত পথকুকুরের। ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে আসছে বেড়ালও। পরিচ্ছন্নতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে কলকাতা শহরের সরকারি কয়েকটি হাসপাতাল যেন নিজের শরীরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সেই পুরনো রোগকেই বহন করে চলেছে। ব্যতিক্রম বলতে এক-দু’টি হাসপাতাল, যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিশিষ্টদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে।
অনেক বছর আগে কলকাতার একটি হাসপাতালে সদ্যোজাতের পা কামড়ে নিয়েছিল বেড়াল। রোগীর চোখ খুবলে নিয়েছিল ইঁদুর। সম্প্রতি এক দুপুরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের উপরে উঠতে উঠতে দেখা গেল, ইএনটি ওয়ার্ডের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর। এক কর্মী জানালেন, খাবারের টানে কুকুর আসে। তবে কুকুর কাউকে কামড়ায় না। একই ভাবে দেখা গেল, ওই ওয়ার্ড বেড়ালদেরও বিচরণক্ষেত্র। ওয়ার্ডের বাইরের এক কোণে জমে রয়েছে ভাত-ডাল-তরকারির অবশিষ্টাংশ। জনৈক নার্স জানান, বেড়াল ঘুরলেও কাউকে এ পর্যন্ত কামড়ায়নি। হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে বেড়ালের উপদ্রবের অভিযোগ অনেক রোগীর পরিজনেরাই করেছেন।
অবশ্য রোগীদের পরিবারের পক্ষ থেকে দু’ধরনের মতামত উঠে এসেছে। একাংশের মতে, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরও সতর্কতার প্রয়োজন। অপর অংশের মতে, সরকারি হাসপাতালে রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে। তাঁরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষেরই উচিত হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
পার্ক সার্কাসে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল চত্বরে এক জায়গায় দেখা গেল দেওয়ালে লেখা, ‘থুতু ফেললে ৫০ টাকা জরিমানা’। অথচ তার পাশেই আকাশি রঙের দেওয়াল পানের পিকে লাল হয়ে রয়েছে। দেওয়ালের অবস্থা দেখে বোঝা যায়, বহু দিন তা জল দিয়ে ধোয়া পর্যন্ত হয়নি। কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী জানালেন, লোকজনকে এ নিয়ে সতর্ক করেও লাভ হয় না। কিন্তু জরিমানা ক’জনকে করা হয়েছে, তার উত্তর পাওয়া গেল না। হাসপাতালের দাবি, সেই জরিমানা কার নেওয়ার কথা, সেটাই ঠিক নেই!
অসুস্থ কবীর সুমনকে দেখতে সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে যান স্বাস্থ্যকর্তারাও। সেই সময়ে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের অপরিচ্ছন্নতা ধরা পড়ে সকলের চোখে। সূত্রের খবর, এর পরেই সেখানে পরিস্থিতি বদলের চেষ্টা চলছে। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। আরও যে সব সরকারি হাসপাতালে রোগ নিরাময়ের জন্য বিপুল সংখ্যায় মানুষ প্রতিদিন ভিড় করছেন, সেখানেও সেই চেষ্টা করা হবে না কেন?
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে চোখে পড়ল, পুকুরের ধারে বহির্বিভাগের ভবনের বাইরে জমে রয়েছে জল। অদূরে জেনারেটর রাখার জায়গার ভিতরে ডাঁই হয়ে পড়ে ভাঙা টিউবলাইট, লোহার তার, বস্তা-সহ নানা বর্জ্য। ওই হাসপাতালের অ্যাকাডেমি ভবনের বাইরে জড়ো হয়ে রয়েছে বস্তা, প্লাস্টিক, থার্মোকল-সহ নানা বর্জ্য। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এক্সটেন্ডেড সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে রোগীদের অপেক্ষা করার জায়গায় স্তূপ করে রাখা রোগীদের পরিত্যক্ত পোশাকের বোঁচকা। খানিক দূরেই তরল অক্সিজেনের সিলিন্ডারের পিছনে স্তূপাকার হয়ে পড়ে রয়েছে ভাঙা আলমারি, টায়ার, প্লাস্টিকের বস্তা-সহ নানা আবর্জনা।
শহরের এই সব হাসপাতাল এক দিকে যেমন রোগ নিরাময়ের কেন্দ্র, তেমনই এ শহরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত এক একটি প্রতীক। সেখানে দৃশ্যদূষণ ঠেকানোর প্রয়োজনীয়তা যে রয়েছে, তা মানছেন অনেকেই। এ নিয়ে রাজ্যের কার্যনির্বাহী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অনিরুদ্ধ নিয়োগী বলেন, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ঘটনার পরে সব মেডিক্যাল কলেজের সুপারদের বলা হয়েছে, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার দিকে জোর দিতে। আবারও বলা হবে। যে কোনও সময়ে স্বাস্থ্য দফতরের আচমকা পরিদর্শন হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy