Advertisement
০১ মে ২০২৪

বৃদ্ধদের অবাধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন

ষাট পেরোলে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। আবার জীবনে জু়ড়ে যায় হাজারো বিধিনিষেধ। বিজ্ঞানীরা বলেন, এটাই প্রকৃতির নিয়ম।প্রকৃতির এই নিয়ম অবশ্য লাগু হয় না পরিবহণ দফতরে। বৃদ্ধদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিধির কড়াকড়িও নেই।

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০২:২৬
Share: Save:

ষাট পেরোলে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। আবার জীবনে জু়ড়ে যায় হাজারো বিধিনিষেধ। বিজ্ঞানীরা বলেন, এটাই প্রকৃতির নিয়ম।

প্রকৃতির এই নিয়ম অবশ্য লাগু হয় না পরিবহণ দফতরে। বৃদ্ধদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিধির কড়াকড়িও নেই। অথচ বৃদ্ধদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দানে বিধির কড়াকড়ি যে কত জরুরি, বৃহস্পতিবার সেটাই আরও এক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল গড়িয়াহাটের দুর্ঘটনা। যে ঘটনায় বৃদ্ধ বিজয়প্রসাদ বসুর গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন এক বৃদ্ধা। আহত আরও দু’জন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানাচ্ছে, বিজয়বাবু বেপরোয়া গাড়ি চালাননি। তবে বয়সের কারণে কোনও ভাবে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, বৃদ্ধ বয়সে গাড়ি চালানো কতটা নিরাপদ? তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া বা পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা হয় কি?

পরিবহণ দফতরের নিয়ম কী? দফতরের শীর্ষ কর্তারা জানান, ১৮ বছর বয়স না হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স মেলে না। কিন্তু লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা নেই। তবে ৫০ বছর পেরোলে পাঁচ বছর অন্তর দৃষ্টিশক্তি ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে চিকিৎসকের শংসাপত্র দেখে লাইসেন্স নবীকরণ হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শংসাপত্র যথাযথ কি না, যাচাই করা হয় না। পাশাপাশি, দফতরের তরফে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়ারও ব্যবস্থা নেই।

চিকিৎসকদের মতে, ৬০ বছর পেরোলে প্রতি বছরই লাইসেন্স নবীকরণ করার নিয়ম থাকা উচিত। এবং সেই সময়ে ডাক্তারি পরীক্ষাও হওয়া উচিত। যেমন, বিজয়বাবু ২০১৪ সালে ডাক্তারি সার্টিফিকেট দাখিল করে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করেছেন। তার মেয়াদ ২০১৯ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এর মধ্যে যে বিজয়বাবুর শারীরিক কোনও অক্ষমতা তৈরি হয়নি— তার গ্যারান্টি কে দেবেন, প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসক থেকে শারীরবিজ্ঞানীরা।

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ তৃষিত রায় বলেন, সাধারণত ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সে স্নায়ুর সমন্বয়, প্রতিবর্ত ক্রিয়া কমতে থাকে। তাই নিয়মিত এ ধরনের পরীক্ষা করানো জরুরি। ‘‘আমার তো অবাক লাগে কত বৃদ্ধ ট্যাক্সি চালান! তাঁদের প্রতিবর্ত ক্রিয়া ঠিকমতো কাজ করছে কি না বা তাঁরা আংশিক ভাবে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত কি না, কেউ জানে না। এই অবস্থায় গাড়ি চালানো যথেষ্ট বিপজ্জনক’’, মন্তব্য তৃষিতবাবুর।

শারীরবিজ্ঞানীরা বলছেন, বয়স বাড়লে রিফ্লেক্স কমতে থাকে। এবং তা বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হারে। সে কারণেই ৩৫-৪০ বছর পেরোলে সাধারণত খেলোয়াড়েরা অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এন প্রধান সেন্টার ফর নিউরোসায়েন্স-এর অধ্যাপক তুষার ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘বয়স বাড়ার সঙ্গে রিফ্লেক্স কমে ঠিকই। তবে অনেক ক্ষেত্রে শরীরচর্চা এবং অনুশীলনের মাধ্যমে তা খানিকটা ধরে রাখা সম্ভব।’’ আমেরিকার মতো দেশে অনেক বৃদ্ধই গাড়ি চালান। তুষারবাবুর মতে, জীবনযাত্রার ধরনের উপরেও রিফ্লেক্স অনেকটাই নির্ভর করে।

তা হলে রাজ্যে ষাটোর্ধ্ব চালকের ক্ষেত্রে নিয়মিত শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষার কোনও নিয়ম নেই কেন? রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে গাড়ির ফিট সার্টিফিকেট কী ভাবে দেওয়া হবে— তা সাধারণত ঠিক করে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকার আগ বাড়িয়ে কিছু করলে তা আদালতে গিয়ে বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই এ নিয়ে রাজ্যগুলি কখনওই কিছু ভাবেনি।

তবে সম্প্রতি কেন্দ্র এ নিয়ে পদক্ষেপ করছে বলে জানান রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বের মধ্যে এ দেশেই দৈনিক সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পরিবহণ কর্তাদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। পথ-নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এ ধরনের আইনের ফাঁকফোকর নিয়ে আলোচনা করছেন তাঁরা। সব রাজ্যের মতামতও নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বয়স্কদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও আছে।’’ আলাপনবাবু জানান, কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব আকারে দেওয়ার জন্য রাজ্য পরিবহণ দফতরও একটি রিপোর্ট তৈরি করছে। যদিও অনেকের মতে, লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে এমনিতেই হাজারো অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সে ক্ষেত্রে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বাড়তি কড়াকড়ি আদৌ কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

driver license elderly people
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE