ডেঙ্গি প্রতিরোধের অভিযানে এখন অন্যতম ‘ভিলেন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে শহর জুড়ে পড়ে থাকা খালি জমি। এমনটাই মনে করছে পুর প্রশাসন। তাই শহরে খালি পড়ে থাকা জমির জঞ্জাল সাফাই করলে তার খরচ জমির মালিকের কাছ থেকে নেওয়ার কথা ভাবছে পুরসভা। এ নিয়ে পুরবোর্ডে প্রস্তাব তোলা হবে বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে বহু খালি জমি পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। আর তার পাশে যাঁরা বাস করছেন, তাঁরা ওই খালি জমিগুলিকে ময়লা ফেলার জায়গা করে তুলছেন। খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে শুরু করে প্লাস্টিকের কাপ, থালা, ভাঙা কৌটো, মগ, বোতল— চার দিকে ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা। সেখানে জমা জলই ক্রমাগত এডিস ইজিপ্টাই মশার বংশবৃদ্ধির জায়গা হয়ে উঠছে। আর জমিগুলি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হওয়ায় সেগুলি পুর কর্মীদেরও দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাচ্ছে। শহর জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার এটি অন্যতম কারণ বলে মনে করছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। তাই খালি জমিতে জমে থাকা জঞ্জাল সাফাই করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
কিন্তু বেসরকারি জমির জঞ্জাল সাফাই করার উপায় কী? সাফাই করার পরে আশপাশের বাসিন্দারা যে সেখানে ফের আবর্জনা ফেলবেন না, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?
গত ৩০ অক্টোবর বিকেলে নবান্নে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন মশা মারার কাজে জঞ্জাল সাফাইয়ে অগ্রাধিকার দিতে। সেই নির্দেশ মেনে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে পুর প্রশাসন। রাস্তার পাশে জমা জঞ্জাল পুর কর্মীরা নিয়মিত সরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু খালি জমির আবর্জনা সরানোর কাজ পুরসভার নয়। এ বিষয়ে কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তারকেশ্বর চক্রবর্তী জানান, তাঁর নিজের ওয়ার্ড ১০৪ নম্বরেই প্রায় ১৪০টি খালি জমি পড়ে রয়েছে। আশপাশের বাসিন্দারা নিয়মিত বাড়ির জঞ্জাল ওই সব খালি জমিতে ফেলতেই অভ্যস্ত। একই বক্তব্য ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ এবং ৩ নম্বর বরোর অনিন্দ্যকিশোর রাউতেরও। তাঁদের কথায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে খালি জমির মালিক শহরের বাইরে থাকেন। পুরসভা ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা জমির জঞ্জাল তোলে না। তাই কিছু করাও যায় না।
ওই জঞ্জাল পুরসভা তুলতে পারে না কেন?
তারকেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘এক একটি জমিতে ৪-৫ লরি জঞ্জাল রয়েছে। লরি পিছু খরচ ২ হাজার টাকা। জমি পিছু ১০-১২ হাজার টাকা খরচ পড়বে। এত টাকা পুরসভা কেন দেবে অন্যের জমি পরিষ্কার করতে?’’ সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘কখনও কখনও পুরসভা এমন করে থাকে। কিন্তু তা তো আর সারা বছর ধরে হতে পারে না।’’
তা হলে উপায়?
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, খালি জমি নিয়ে সরকারি পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দেখা গিয়েছে, কিছু জমি বছরের পর বছর ধরে খালি পড়ে রয়েছে। সেগুলি মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। তার পরেও সেখানে জঞ্জাল ফেলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এটা বন্ধ করতে খালি জমি বেশি দিন ফেলে রাখলে তা অধিগ্রহণ করার কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে।
স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ওই সব জমির জঞ্জাল খালি করতে যে খরচ হবে, তা জমির মালিকের কাছে আদায় করার কথা ভাবছে পুরসভা। প্রয়োজনে সম্পত্তিকর বাবদ যে টাকা পুরসভা নেয়, তার সঙ্গে ওই খরচ জুড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব আনা হবে। আর যে জমির মিউটেশন এখনও হয়নি, বা মালিকানা অজ্ঞাত সে ক্ষেত্রে পুরসভায় তা নথিভুক্ত করাতে এলেই জঞ্জাল অপসারণের টাকাও যুক্ত করা হবে। তিনি জানান, পুরসভা বার বার ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল না ফেলতে আর্জি জানিয়ে বোর্ড লাগিয়েছে। তাতেও কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি কেন? তার ব্যাখ্যা পুরসভার কোনও কর্তা দেননি। তবে ডেঙ্গির প্রকোপ যে দেশ জুড়েই বাড়ছে, তা জানিয়ে পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘১৯৭০ সালের আগে বিশ্বে মাত্র ৯টি দেশে ডেঙ্গি ছিল। বর্তমানে তা ছড়িয়ে পড়েছে ১২৮টি দেশে।’’