এ যেন পুলিশ হতে গিয়ে চোরের কবলে! ব্যাপারটা অনেকটা এ রকমই।
পরীক্ষা মিটেছিল নির্বিঘ্নেই। কিন্তু তার পরে জমা রাখা প্রায় দু’হাজার ব্যাগের মধ্যে নিজেদের জিনিস খুঁজে পাননি বহু পরীক্ষার্থী। সেই ক্ষোভে রবিবার দুপুরে শিয়ালদহের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য আসা পরীক্ষার্থীদের একাংশ ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ উঠল।
বাধা দিতে গেলে পরীক্ষা কেন্দ্রে মোতায়েন পুলিশদের সঙ্গে ওই পরীক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। প্রথমে পুলিশ কম থাকায় অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছিল। মুচিপাড়া ও বৌবাজার থানা থেকে বিশাল বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
পরে মুচিপাড়া থানায় ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের কর্মী মোনালিসা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পরীক্ষা শেষের পরে ২৫-৩০ জন ব্যাগ নেওয়ার সময়ে হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চেয়ার, টেবিল, ঘড়ি, কাচ ভাঙচুর করা হয়।’’
কলেজ সূত্রের খবর, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দু’হাজার পরীক্ষার্থী ২৭টি ঘরে বসেছিলেন। প্রতিটি ঘরের বাইরে ভাগ করে ব্যাগ রাখতে না দিয়ে মূল ফটকের সামনে সকলের ব্যাগ রাখা হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরীক্ষার শেষে ব্যাগ নিতে গিয়ে কেউ দেখেন, ব্যাগের ভিতরে থেকে মোবাইল উধাও, কারও ব্যাগটাই হাওয়া। কেউ আবার খুইয়েছেন ব্যাগে রাখা আধার কার্ড, অন্যান্য পরীক্ষার শংসাপত্র। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি, ছোটাছুটির সময়ে কেউ জুতো হারিয়েছেন।
কলকাতা পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সদস্য এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অ্যাডমিট কার্ডেই লেখা আছে, ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। ওঁরা ব্যাগ এনেছিলেন কেন?’’ আর এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এই পরীক্ষায় ব্যাগ নিয়ে ঢোকা বারণ, এটা নতুন নয়। পরীক্ষার্থীদের ব্যাগের দায়িত্ব পুলিশের নয়।’’ কিন্তু দূর-দূরান্ত থেকে পরীক্ষার্থীরা ব্যাগ না নিয়ে আসতেন কী ভাবে, তার সদুত্তর অবশ্য পুলিশকর্তারা দিতে পারেননি।
সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, ‘‘আমাদের কলেজে মাসের অধিকাংশ রবিবার কোনও না কোনও পরীক্ষা থাকে। সব সময়েই পরীক্ষার হলের সামনে ব্যাগ রাখেন পরীক্ষার্থীরা।’’ কিন্তু রবিবার পুলিশের নির্দেশেই সব পরীক্ষার্থীর ব্যাগ কলেজের মূল ফটকের সামনে রাখা হয়েছিল বলে জানান অধ্যক্ষ। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ ‘টোকেন’-এর ব্যবস্থা করলে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।’’
এ দিন দুপুর ১২টায় ওই পরীক্ষা শুরু হয়। ১টায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে পরীক্ষার্থীরা ব্যাগ নেওয়ার জন্য জড়ো হন গেটের সামনে। তখনই শুরু হয় গোলমাল। অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে প়ড়েন তাঁরা। এক পরীক্ষার্থী জানান, উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ির বাসিন্দা পবিত্র রায় তাঁর ব্যাগটি মুচিপাড়া থানা থেকে পেলেও ব্যাগে রাখা মোবাইল পাননি। বাঁকুড়ার জয়পুরের আফজল হক আবার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমার ব্যাগে আধার কার্ড, বিভিন্ন পরীক্ষার সার্টিফিকেট ছিল। ব্যাগটাই হারিয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy