Advertisement
E-Paper

‘আমার বাড়িতে মশার লার্ভা, আপনার তাতে কী সমস্যা?’

দোতলা বাড়ির নকশা অনুযায়ী একতলায় বড়জোর চারটি ঘর থাকার কথা। কিন্তু তার জায়গায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৮ খানা ঘর। প্রায় প্রতিটি ঘরে পার্টিশান লাগানো। সেই ছোট ছোট ঘরের জানলাও ছোট ছোট। আলো-বাতাস খেলার উপায় নেই। প্রতিটি ঘরে চৌকি পাতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৭
সল্টলেকের আই এ ব্লকের বিভিন্ন বাড়িতে চলছে মশা তাড়াও অভিযান। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।

সল্টলেকের আই এ ব্লকের বিভিন্ন বাড়িতে চলছে মশা তাড়াও অভিযান। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।

দোতলা বাড়ির নকশা অনুযায়ী একতলায় বড়জোর চারটি ঘর থাকার কথা। কিন্তু তার জায়গায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৮ খানা ঘর। প্রায় প্রতিটি ঘরে পার্টিশান লাগানো। সেই ছোট ছোট ঘরের জানলাও ছোট ছোট। আলো-বাতাস খেলার উপায় নেই। প্রতিটি ঘরে চৌকি পাতা। কোনও ঘরে তিন জন, কোনও ঘরে চার জন করেও থাকছেন। রান্নাঘরেও চৌকি পাতা!

এটা আপাত সাজানো-গোছানো নগর বলে পরিচিত সল্টলেকের ছবি। তিন নম্বর সেক্টরের আই এ ব্লকের ৬৭ নম্বর বাড়ির একতলায় এমন ভাবে প্রায় ১৫ জন যুবক নিয়মিত থাকেন। সকলেরই বয়স ২০ থেকে ২৪-এর মধ্যে। তাঁদেরই এক জন রীতেশ সিংহের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। অভিযোগ, এমন চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে থাকতেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন রীতেশ।

খবরটি স্থানীয় ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিনু চক্রবর্তীর গোচরে আসে শনিবার। তিনি জানতে পারেন, সল্টলেকের এক যুবকের সল্টলেকেরই একটি ক্লিনিক থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জানতে পেরেছেন যে, তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। তখনও তিনি জানতে পারেননি সেই যুবকের নাম রীতেশ। পরে রীতেশের পরিচয় ও নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করেন তাঁর সঙ্গে। রীতেশ পটনার বাসিন্দা। শুক্রবার রক্তের রিপোর্ট পেয়ে রীতেশ ততক্ষণে সল্টলেকের ওই ডেরা ছেড়ে পত্রপাঠ পটনা রওনা হয়ে গিয়েছেন। পটনার পথে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয় কাউন্সিলরের। রীতেশের কাছ থেকেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা জানতে পেরে পুরসভার কর্মীদের নিয়ে রবিবার সকালে সেই বাড়িতে হানা দেন মিনুদেবী।

কাউন্সিলরের অভিযোগ, ‘‘ছোট ছোট ঘুপচি ঘরে, নোংরার মধ্যে ছেলেগুলোকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। আমরা পুরসভার পক্ষ থেকে সকলকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। বারবার বলা হচ্ছে, বাড়ির ভিতর ও বাগান পরিষ্কার রাখুন। কোথাও যেন জল জমতে না পারে। কিন্তু এই বাড়ির মালিকের কোনও হুঁশ নেই। আমি এই ভাড়াটে যুবকদের বলেছি, স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানাতে।’’

ওই বাড়ির একতলায় দেড় বছর ধরে ভাড়ায় থাকছেন পটনার আর এক যুবক বিনায়ক কেডিয়া। এদের বেশির ভাগই সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন। বিনায়ক ও তাঁর দুই সঙ্গী অভিজিৎ, অঙ্কুর একযোগে এ দিন জানান, তিন দিন অন্তর এক জন করে এসে ঘর পরিষ্কার করে চলে যান। ভিতরে দমবন্ধ করা পরিবেশ। কিন্তু ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয় বলেই তাঁরা সেখানে থাকেন। সল্টলেকেএত কম ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা পাওয়া মুশকিল।

ওই বাড়ির কর্ত্রী কৃষ্ণা মণ্ডলের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আমি তো কাউকে জোর করে রেখে দিইনি। বাড়ি-ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। এ সব অভিযোগ মিথ্যা।’’

শুধু ওই বাড়ি নয়, এ দিন সকালে ওই ব্লকের আরও বেশ কয়েকটি বাড়িতে হানা দেন কাউন্সিলর। দেখা যায়, কোথাও বাড়ির পিছনের বাগানে রাখা প্লাস্টিকের বালতিতে জমা জলে মশার লার্ভা। কোথাও আবার বাগানের জায়গায় জঙ্গল হয়ে রয়েছে। কোনও কোনও বাড়িতে আবার বাগানের জঙ্গলে মাটির সরার মধ্যে জল জমে রয়েছে। সেখানেও মশার লার্ভা। নিজেই দায়িত্ব নিয়ে পুরসভার কর্মীদের দিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়ির বাগানের জঞ্জাল এ দিন সাফ করান মিনুদেবী। তিনি বলেন, ‘‘এখন তো দেখছি, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে হানা দিয়ে দেখতে হবে কে কতটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছেন!’’

ওই ব্লকেরই যে বাড়ির বাগানে জঙ্গল হয়ে রয়েছে এবং সেখানে মাটির সরার মধ্যে জমা জলে মশার লার্ভা ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই বাসিন্দার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমার বাড়ির বাগান পরিষ্কার থাকবে কি না, তা আমি ঠিক করব। যে মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে তা যে ডেঙ্গিরই মশা, সে বিষয়ে কী করে নিশ্চিত হচ্ছেন? আর তা ছাড়া সে মশা তো আমার বাড়ির বাগানে রয়েছে। অন্যদের তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’

Vector control programme salt lake
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy