বৃষ্টির পরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক ঘণ্টা। পূর্ব কলকাতার শ্রী নস্কর লেনে জল কিছুতেই নামছে না। মঙ্গলবার সকালেও সেখানে জল নামেনি। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বিজনলাল মুখোপাধ্যায় দলবল নিয়ে এলাকা সফরে বেরিয়ে দেখলেন, অনেক জায়গায় গালিপিট দিয়ে জলই নামছে না।
বিজনবাবুর মতে, ‘‘গালিপিটগুলি আটকে গিয়েছিল প্লাস্টিকে। তার জন্য পিকনিক গার্ডেন এলাকায় জল দেরিতে নেমেছে।’’
সোমবার সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টির জেরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মঙ্গলবার বেলা পর্যন্ত জল জমে ছিল। গল্ফগ্রিন, কসবার সুইনহো স্ট্রিট, মোমিনপুর, বাইপাসের পার্ক সার্কাস কানেক্টর, জে বি এস হ্যালডেন অ্যাভিনিউ, পিকনিক গার্ডেন, তপসিয়া, পঞ্চান্নগ্রাম, মুকুন্দপুর এবং বেহালার বিস্তীর্ণ এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। স্থানীয় পুর-প্রতিনিধিরা এর দায় অনেকটাই চাপিয়েছেন প্লাস্টিকের উপরে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহও প্লাস্টিক নিয়ে বিরক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘গালিপিট পরিষ্কার করার জন্য কর্মীরা তিনটি শিফ্টে কাজ করছেন। গালিপিট আর নিকাশি নালায় জমে থাকা প্লাস্টিক পরিষ্কার করতেই তাঁদের দিন কাবার।’’
সোমবারের বৃষ্টিতে সব থেকে বেহাল অবস্থা হয়েছিল বেহালার। তারকবাবু এবং মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বেহালার বাসিন্দা। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বেহালার বিধায়ক। কিন্তু বেহালার ১২৩, ১২৪, ১২৫, ১২৬, ১২৭, ১২৮ এবং ১২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অংশ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল। এমন ভাবে জল জমার জন্য মূলত প্লাস্টিককেই দায়ী করছেন ১২৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ঘনশ্রী বাগ। তাঁর কথায়, ‘‘নিকাশি নালা প্লাস্টিকে আটকে যাওয়ায় জল সরছে না। প্লাস্টিক বন্ধ করতে বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে কী করা যাবে?’’
নিকাশি বিভাগ সূত্রে খবর, বাইপাস লাগোয়া চায়না টাউনের খাল প্লাস্টিকে অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। একই হাল টালি নালারও। যার জেরে জল সরছে না।
প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে একাধিক বার পুরসভাগুলিকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি পুরসভা ছাড়া কেউ তাতে কান দেয়নি। রাজ্য
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘আইন থাকলেও মানুষ সচেতন না হলে কিছুই হবে না। কলকাতার লাগোয়া লেকটাউন, বাঙুরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় ওই সব এলাকায় জল জমার সমস্যা অনেকটাই কমেছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগে এটা সম্ভব হয়েছে।’’
পরিবেশমন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘নিকাশি নালার সব চেয়ে বড় শত্রু প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে নানা উপায়ে প্রচার করা হচ্ছে।’’
কিন্তু বেহালার জলবন্দি দশার জন্য শুধু প্লাস্টিককেই দায়ী করছেন না মেয়র। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘১২৩ থেকে ১২৭ ওয়ার্ডের নিকাশির জল বেরোনোর জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। এ বার সেই কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। বছর খানেকের মধ্যেই তা শেষ হবে। তার পরে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা চাঙ্গা হয়ে যাবে।’’ যদিও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোডে নিকাশি পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫-এর জানুয়ারিতে। এ বছর এপ্রিলে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও হয়নি। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত মাত্র ১১ শতাংশ কাজ হয়েছে। এই গতিতে কাজ হলে দেরি তো হবেই। ওই পাইপ বসানোর কাজ সময়ে শেষ হলে এ বার আর ওই এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হত না বলে মনে করেন কাউন্সিলরেরাও।