Advertisement
০৬ মে ২০২৪

জলাভাবে ত্রাহি রব হাওড়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

পুরসভার একটি ওয়ার্ড-সহ আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুয যে সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল, গত ২০ দিন ধরে তা রয়েছে প্রায় নির্জলা অবস্থায়। অভিযোগ, পানীয় জল তো দূরের কথা, শৌচাগারে ব্যবহার করার মতো জলও না থাকায় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। জলের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এক্স-রে, প্যাথোলজিক্যাল বিভাগও।

জলের আশায়। বৃহস্পতিবার সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

জলের আশায়। বৃহস্পতিবার সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০০:১৩
Share: Save:

পুরসভার একটি ওয়ার্ড-সহ আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুয যে সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল, গত ২০ দিন ধরে তা রয়েছে প্রায় নির্জলা অবস্থায়। অভিযোগ, পানীয় জল তো দূরের কথা, শৌচাগারে ব্যবহার করার মতো জলও না থাকায় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। জলের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এক্স-রে, প্যাথোলজিক্যাল বিভাগও।

এমনই অবস্থা হাওড়া পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের জগদীশপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। কোনা হাসপাতাল নামে পরিচিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি হাওড়া পুর-এলাকায় হলেও বালি-জগাছা পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ এর উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। কিন্তু অভিযোগ, বহির্বিভাগে খানিক জল মিললেও ৪০ শয্যার এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত ২০ দিন কোনও জল নেই। রোগীদের অভিযোগ, জল চেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্লক মেডিক্যাল হেল্থ অফিসার বা বিএমএইচও-র কাছে বারবার আবেদন করেও ফল হয়নি।

ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসাধীন শুভ্রা শীল বলেন, ‘‘পানীয় জল তো নেই। এমনকী শৌচাগারে যাওয়ারও জল নেই। ফলে সেগুলি নারকীয় অবস্থায় রয়েছে। ভিতরে ঢোকা যায় না।’’ শুভ্রাদেবী জানান, তাঁর স্বামী তাঁকে বাইরে থেকে জল কিনে এনে দিচ্ছেন। একই অবস্থা পুরুষদের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অষ্ট প্রামাণিক, মন্টু কয়ালদের। মন্টুবাবু বলেন, ‘‘ক’দিন আগেও এই ওয়ার্ডে ৮ জন রোগী ছিলেন। জল না থাকায় সবাই চলে যাচ্ছেন। আমিও যাব।’’

রোগীদের অভিযোগ, প্রতিদিন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে তিন-চারশো রোগী আসেন। বহু রোগী এখানে ভর্তি রয়েছেন। তা সত্ত্বেও রোগী পরিষেবার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল ভবনটি নতুন হলেও নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে ভিতরে ও বাইরে নোংরা ও আর্বজনায় ভরা। তার উপরে বহির্বিভাগ ছাড়া সর্বত্র জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বেনারস রোডের পাশে প্রায় এক একর জায়গায় তৈরি জেলা স্বাস্থ্য দফতর পরিচালিত এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

কিন্তু এত দিন জল সরবরাহ বন্ধ থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি কেন?

ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএমএইচও রঞ্জন রায় বলেন, ‘‘একটি ট্যাঙ্ক খারাপ হয়ে যাওয়াতেই এই ঘটনা। কলের মিস্ত্রিকে খবর দিয়েছি। ওরা না আসাতেই সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য আমরা পুরসভাকে বলেছি জল সরবরাহ করতে।’’

যদিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদের অভিযোগ, কাল পর্যন্ত পুরসভা কোনও জলের গাড়ি পাঠায়নি। রোগীদের জল কিনে খেতে হচ্ছে। শৌচাগারে গেলে রোগীদের জন্য আত্মীয়েরা পাশের পুকুর থেকে বালতি করে জল নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

ঝিলিক ঘোষ নামে প্যাথলজি বিভাগের এক কর্মী বলেন, ‘‘জল না থাকায় ল্যাবরেটরি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে সব বন্ধ হয়ে রয়েছে।’’

হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ এবং জলের জন্য গঠিত টাস্ক ফোর্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য বিভাস হাজরা বলেন, ‘‘হাসপাতালে যে জল নেই, তা আমরা আজই জেনেছি। তার পরেই জলের গাড়ি পাঠানো হয়েছে।’’

তবে তাঁরই নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত প্রায় তিন সপ্তাহ যে জল নেই, তা জানতেন না হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম ঘটনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের লোকজন আমাকে জানাননি। কেন এত দিন জল সরবরাহ করা হয়নি, তা জানতে চেয়েছি। সদুত্তর না পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE