Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বাড়তি যাত্রী নিয়েই ডোবে ওয়াটার ট্যাক্সি

আট জনের জায়গায় উঠেছিলেন বারো জন। সেটাই কাল হল। শনিবার রাতে গোলাবাড়ি ঘাট থেকে ওয়াটার ট্যাক্সিতে (ছোট মাপের নৌকো) চেপে জন্মদিনের আনন্দে মেতেছিলেন বারো জন। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ব্রিজের নীচে ওই জলযান উল্টে মৃত্যু হয় বিশাল অগ্রবাল (২৬) নামে এক তরুণের। রবিবার রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি তাঁর মামা সতীশ অগ্রবালের (৪৫)। বাকিরা কোনও ক্রমে সাঁতরে পাড়ে ওঠেন।

এই ওয়াটার ট্যাক্সিতেই ঘটে দুর্ঘটনা। —নিজস্ব চিত্র।

এই ওয়াটার ট্যাক্সিতেই ঘটে দুর্ঘটনা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৫
Share: Save:

আট জনের জায়গায় উঠেছিলেন বারো জন। সেটাই কাল হল।

শনিবার রাতে গোলাবাড়ি ঘাট থেকে ওয়াটার ট্যাক্সিতে (ছোট মাপের নৌকো) চেপে জন্মদিনের আনন্দে মেতেছিলেন বারো জন। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ব্রিজের নীচে ওই জলযান উল্টে মৃত্যু হয় বিশাল অগ্রবাল (২৬) নামে এক তরুণের। রবিবার রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি তাঁর মামা সতীশ অগ্রবালের (৪৫)। বাকিরা কোনও ক্রমে সাঁতরে পাড়ে ওঠেন। ঘটনার পর থেকেই খোঁজ নেই জলযানের চালক ও দুই কর্মীর।

প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই জলযানে আট জনের বসার জায়গা রয়েছে। সেখানে উঠেছিলেন বারো জন। চালক-সহ আরও তিন কর্মীও ছিলেন। চালকের গাফিলতি ছিল বলেও তদন্তকারীদের দাবি। লালবাজারের এক কর্তা জানান, চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা চালক ও বাকিদের সাঁতরে পালাতে দেখেছেন। তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি সতীশের খোঁজেও গঙ্গায় তল্লাশি চলছে। পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার বন্দরের অফিস বন্ধ থাকায় ওই জলযান সংক্রান্ত তথ্য মেলেনি। আজ, সোমবার তা পেলে জলযানের মালিকের নাম-পরিচয় জানা যাবে।

বন্দর ও পুলিশ সূত্রের খবর, গঙ্গাবক্ষে ওয়াটার ট্যাক্সিগুলির চলাচলের পারমিট থাকে। সেগুলি কী কাজে ব্যবহার করা হবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে বলা থাকে। তবে কোনও অনুষ্ঠানের জন্য বন্দর পুলিশকে জানাতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেই অনুমতি নেওয়া হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর। কেন নেওয়া হয়নি, তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশ জানিয়েছে, নদীবক্ষে অনুমতিপ্রাপ্ত ওয়াটার ট্যাক্সি ছাড়াও বহু নৌকো ও জলযান বেআইনি ভাবে যাতায়াত করে। গঙ্গাবক্ষে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সুরক্ষার ফাঁকও থাকছে। এই ঘটনায় তার প্রমাণ মিলেছে বলেও পুলিশের একাংশের দাবি।

কী ঘটেছিল শনিবার রাতে?

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওয়াটার ট্যাক্সিটি রাত ১১টা নাগাদ জগন্নাথ ঘাটে এসে ঠেকে। তার পরে ফের হাওড়ার দিকে রওনা হয়। বাকি যাত্রীদের থেকে পুলিশ জেনেছে, চালক বেসামাল ভাবে এগোচ্ছিলেন। হাওড়া ব্রিজের নীচে আচমকা জলযানের মুখ ঘোরাতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওয়াটার ট্যাক্সিটি উল্টে যায়। জলে পড়ে যান সব যাত্রীই।

বড়বাজারের মতিশীল ঘাট এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ হঠাৎই চিৎকার কানে আসে। গঙ্গার পাড়ে গিয়ে দেখি, একটি ওয়াটার ট্যাক্সি উল্টো হয়ে ভাসছে। হাবুডুবু খাচ্ছেন কয়েক জন। উত্তর বন্দর থানা ও কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দশ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে। ইতিমধ্যে উল্টে যাওয়া নৌকোটি ভাসতে ভাসতে ঘাটে দাঁড়ানো দু’টি লঞ্চের মাঝে আটকে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, জলযানের গায়ে লাগানো দড়ির সঙ্গে বিশালের দেহ জড়িয়ে ছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, নৌকো উল্টে গেলে বিশাল দড়িতে জড়িয়ে যান। সেই অবস্থাতেই জলে ডুবে তাঁর মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, সালকিয়ার বাসিন্দা অরুণ সাহা নামে এক যুবকের জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল-সতীশেরা ওই জলযানে চাপেন। রবিবার দুপুরে গোলাবাড়িতে বিশালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, থমথমে পরিবেশ। শোকের ছায়া পাড়াতেও। বিশালের মেসোমশাই রোহিত খৈতান জানান, বছর দেড়েক বিবাহিত বিশালের মাস চারেকের একটি ছেলে রয়েছে। হাওড়াতেই তাঁর পারিবারিক লোহার ব্যবসা। এ দিন রোহিত বলেন, “কাল রাতে পুলিশ আমাকেই ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেয়। বিশাল যে আর নেই, তখনও জানতাম না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE