Advertisement
E-Paper

খামখেয়ালি আবহাওয়া খেল্‌ দেখাচ্ছে শরীরে

সকালে হাত-পায়ে ব্যাথা দিয়ে শুরু। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাথাটা বাড়তে লাগল। প্যারাসিটামল খেয়ে ঘুমোতে গেলেন উল্টোডাঙার রমেশ সেনগুপ্ত। ভোরের দিকে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। পাড়ার দোকাদারের নিদান, অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৭:৪৯

সকালে হাত-পায়ে ব্যাথা দিয়ে শুরু। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাথাটা বাড়তে লাগল। প্যারাসিটামল খেয়ে ঘুমোতে গেলেন উল্টোডাঙার রমেশ সেনগুপ্ত। ভোরের দিকে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। পাড়ার দোকাদারের নিদান, অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। জ্বর কমল বটে কিন্তু শুরু হল পেটের অসুখ। জ্বর-পেট খারাপ কমলেও নিস্তার নেই। এতটা দুর্বল যে, বিছানা ছেড়েই উঠতে পারছেন না রমেশবাবু।

টিউশন ক্লাসে পড়তে পড়তেই কাপুঁনি দিয়ে জ্বর কসবার ক্লাস নাইনের সোমাশ্রী মজুমদারের। বাড়ি ফিরে থার্মোমিটার দেওয়া হল। জ্বর লাফিয়ে উঠেছে ১০৪ ডিগ্রি। প্যারাসিটামল কাজেই লাগল না। বাড়ির চকিৎসক ফোনে জানালেন, ভাইরাল ফিভার। শুরু হল অ্যান্টিবায়টিক। তিন দিন কেটে গিয়েছে। জ্বর কমলেও দুর্বল হয়ে পড়েছে সোমাশ্রী। স্কুলে যেতে পারছে না। মাথা ব্যথা, কাশির জেরে জেরবার।

বছর ষাটেকের রজতশুভ্র নন্দী বাজারে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়েই যাচ্ছিলেন। বাজার থেকে রিকশা করে বাড়ি ফিরলেন নাগেরবাজারের স্কুল শিক্ষক। দেখা গেল ধুম জ্বর। চাদর চাপা দিয়ে শুয়ে পড়লেন রজতবাবু। মাথাই তুলতে পারলেন না তিন দিন। বুকে জমে গিয়েছে কফ। শ্বাস নিতে গেলে শোঁ শোঁ শব্দ বেরোচ্ছে। গা-হাত-পায় ব্যথা রয়েই গেল।

দক্ষিণবঙ্গেরর বৃষ্টি টেনে নিয়েছে উত্তর ভারত। তার জেরেই বিছানা নিয়েছেন কলকাতাবাসী। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে নানা রকম ভাইরাস। গরমে জেরবার মানুষকে সহজেই আক্রমণ করছে ওই জীবাণুরা। তাদের মধ্যে কোনটা নিউমোনিয়া, কোনটা টাইফয়েড, তা বোঝার সাধ্য নেই। কোনও কোনও ক্ষেত্রে জীবাণুটা যে কী, তা-ই ধরা পড়ছে না। আর বাড়িতে এক জনের হলে বাকিরা সাবধান। কারণ, এই সংক্রমণ ছড়ায় দ্রুত।

চিকিৎসকেরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগটা শুরু হচ্ছে মাথা যন্ত্রণা দিয়ে। তার পরে তা ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে। অনেকটা ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়ার মতো ব্যাথা। তবে উপরি পাওনা গলায় ব্যাথা। থার্মোমিটার দিলে দেখা যাচ্ছে তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগে জ্বর কমে যাচ্ছে বটে, কিন্তু কাশি কমছে না। পরজীবী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘এই সময়টায় গলা ও গায়ে ব্যাথা বোধ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’’

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধের দোকান থেকে কিনে যে কোনও অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অমিতাভবাবু। তিনি বলেন, ‘‘অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ প্রতিক্রিয়ায় পেটের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। যার জেরে শরীরে জলের পরিমাণ কমে গিয়ে খিঁচুনি পর্যন্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ইনফ্লুয়োঞ্জা জাতীয় ভাইরাস জ্বরের জন্য দায়ী। তার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। অথচ মানুষ ওষুধের দোকানির পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নিজেদেরই ক্ষতি করছেন।’’

বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্যের পরামর্শ, ‘‘যাঁরা হাঁপানি, ফুসফুসের অন্যান্য সমস্যায় ভোগেন তাঁদের আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। যাঁরা শ্বাসকষ্টে ভোগেন, জ্বর হলে তাঁদের সমস্যা বাড়ে।’’ জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, অমিতাভবাবুর সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত পার্থবাবু। তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘ভাইরাল জ্বরের পরে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার জেরে নতুন করে দেহে সংক্রমণ ঢোকার আশঙ্কা থাকে। ভাইরাসঘটিত জ্বর হলে ঠিক চিকিৎসা না হলে নিউমোনিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।’’

চিকিৎসক প্রবীর বিশ্বাসের অভিজ্ঞতা, ‘‘নানা পরজীবিবাহিত রোগও দেখা দিচ্ছে শিশুদের মধ্যে। উপসর্গ ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো হওয়ায় বিভ্রান্তি বাড়ছে। বৃষ্টিই হচ্ছে না এখনও। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই গরমেও শিশুদের ডেঙ্গি হচ্ছে।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য মানুষের নেই। কিন্তু নিজের চারপাশের পরিবেশকে পরিষ্কার রাখার সামর্থ্য মানুষের আছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যতটা সম্ভব এসি-র ব্যবহার কমানোই ভাল। সরাসরি এসি-র হাওয়া খাওয়া উচিত নয়। বিশেষত শিশুদের এসি ঘরে না রাখাই ভাল। ঘরের জানলা খোলা রাখা উচিত যাতে বাতাস ও আলো বাড়িতে প্রবেশ করে। এতে অনেক জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। ঘরে কোনও ভেজা জিনিস রাখা একদম ঠিক নয়। যেহেতু এই আবহাওয়ায় ভাইরাসঘটিত রোগ দেখা দিচ্ছে, তাই ভেজা কাপড় থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

চিকিৎসকদের আরও পরামর্শ, বেশি পরিমাণ জল, নুন মেশানো সরবত, লেবু ও ঘরের তৈরি হালকা খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যেহেতু গরমের জেরে পেটের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তাই দোকানের তৈরি বেশি মশলার খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি, গলার সংক্রমণ আটকানোর জন্য ঠান্ডা জল, আইসক্রিম না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

weather disease
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy