সেতু দিয়েই পারাপার করত স্কুলবাস। এক বছরেরও বেশি তা বন্ধ। কারণ নতুন করে তৈরির জন্য ভাঙা হয়েছে কংক্রিটের সেই সেতু। ফলে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে পড়ুয়াদের যেতে হচ্ছে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর বা বিজন সেতুর কাছে। কিন্তু কবে শেষ হবে সেই সেতুর কাজ? জানেন না স্থানীয় কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যান, এমনকী মেয়র পারিষদও।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাজ শেষ হতে কেন এত দেরি হচ্ছে এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই পুর প্রশাসনের। কলকাতা পুরসভার ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের গরফা মেন রোডের উপরে সাঁপুইপাড়া সেতুটি কারা করছেন, তা জানা নেই মেয়র পারিষদ (সড়ক) রতন দে-র। তথৈবচ অবস্থা কাউন্সিলরদেরও। একই দলের প্রতিনিধিত্ব থাকা সত্ত্বেও সরকারি কাজে দীর্ঘসূত্রিতার বড় কারণ যে সমন্বয়ের অভাব, তা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল এতে।
যাদবপুর পালবাজার এবং গরফা মেন রোডের মধ্যে সংযোগকারী এই সেতুটি এলাকাবাসীর বড় ভরসা বলে মানছে পুরসভাও। স্থানীয় বাসিন্দা প্রণতি মণ্ডল বলেন, ‘‘বহু বছরের পুরনো এই কংক্রিটের সেতু। আমার জ্ঞান থেকে এটি দেখে আসছি। বাবার কাছে শুনেছি, তার-ও আগে ওখানে একটি কাঠের সেতু ছিল।” এই সেতু দিয়ে পাশাপাশি দুটো গাড়ি অনায়াসে পারাপার করতে পারত। এমনকী, স্কুল বাসও এই সেতু দিয়ে যেত বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। সেতুর কাছেই রয়েছে গরফা বয়েজ হাইস্কুল-সহ বেশ কয়েকটি স্কুল এবং কলেজ। ফলে অসংখ্য পড়ুয়া প্রতিদিন এই সেতু পারাপার করে।
এই সেতু দিয়ে অটোও চলত। সেতু ভেঙে দেওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে অটো। দু’পাশের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অস্থায়ী ভাবে একটি লোহার সেতু করে দেওয়া হয়েছে। অপরিসর সেই সেতু দিয়ে হেঁটে যান মানুষ। সাইকেল ও মোটরসাইকেলও যায়। কমজোরি ওই সেতু দিয়ে অনবরত অটো চললে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাই দু’ধারে খুঁটি পুঁতে অটোর যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে অটো অনেকটা পথ ঘুরে যাওয়ায় ভাড়া বেড়ে গিয়েছে। নাজেহাল হচ্ছেন মানুষ। বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘উন্নয়নের কাজে সমস্যা কত দিন ভোগ করতে হবে? তার একটা নির্দিষ্ট সমসয়সীমা থাকা দরকার।’’ ব্রতীন সরকার নামে এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘদিন কাজ আটকে ছিল। কবে এই কাজ শেষ হবে— পুরসভার কাছে এই প্রশ্ন করেও যথাযথ উত্তর মেলেনি।’’
যেখানে সেতুর কাজ চলছে, তার সামনে পুরসভার ঝোলানো বোর্ডে লেখা, ১০৫ নম্বর ওয়ার্ড। কাউন্সিলর তরুণ মণ্ডলকে ফোন করা হলে তিনি জানান, সেতুটি ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডে পড়ছে। অতএব এ নিয়ে যাবতীয় তথ্য দিতে পারবেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তারকেশ্বর চক্রবর্তী। কিন্তু চেষ্টা করেও তাঁকে ফোনে না পেয়ে যোগাযোগ করা হয় মেয়র পারিষদ (সড়ক) রতন দে-কে। তিনি জানান, ‘‘ওই সেতু কারা করছে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারব না। সম্ভবত সেচ দফতর করছে ওই কাজ।’’
অবশেষে উত্তর মিলল ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষের কাছে। তিনি জানান, প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ বিডি-১ খাল। তার উপরে এই সেতু নতুন করে তৈরি করছে পূর্ত দফতর। তবে কোন ডিভিশন ওই কাজ করছে তা জানা নেই তাঁর। ১১ নম্বর বরোর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পূর্ত দফতর পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ না করেই কাজটা করছে। তাই আমরাও কোনও যোগাযোগ করিনি।’’ সব শুনে পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক ইঞ্জিনিয়ার জানান, ও ভাবে বলা সম্ভব নয়, ওই এলাকা কোন ডিভিশনের অধীন। কাজের গতি-প্রকৃতির বিষয়ে নির্দিষ্ট ডিভিশনই বলতে পারবে।