E-Paper

কলকাতার পথে ট্র্যাফিক সিগন্যালে বিজ্ঞাপন! ভুল সঙ্কেতে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কা

শহরের একাধিক রাস্তায় এখন ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলির এমনই অবস্থা লক্ষ করা যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ অভিযোগ না জানালে বা স্থানীয় ট্র্যাফিক গার্ডের নজরে না পড়লে তা ঠিকও হচ্ছে না।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৫৬
traffic Signal

রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাওয়া সংস্থাগুলির গাফিলতিতেই ট্র্যাফিক সিগন্যালের বেহাল অবস্থা। প্রতীকী ছবি।

কোথাও চার রাস্তার মোড়ে সব দিকের সিগন্যাল খুলে যাচ্ছে একসঙ্গে। কোথাও একটি সিগন্যালে একই সঙ্গে সবুজ ও লাল বাতি জ্বলছে। কোথাও আবার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সিগন্যাল লাল থেকে সবুজ হচ্ছে না! চালকেরা বুঝতেই পারছেন না, অপেক্ষা করতে হবে, না এগোতে হবে! অভিযোগ, অধৈর্য হয়ে তার মধ্যেই গাড়ি ছোটাতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। সব সিগন্যাল একসঙ্গে খুলে যাওয়ায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ।

শহরের একাধিক রাস্তায় এখন ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলির এমনই অবস্থা লক্ষ করা যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ অভিযোগ না জানালে বা স্থানীয় ট্র্যাফিক গার্ডের নজরে না পড়লে তা ঠিকও হচ্ছে না। কিন্তু এই রোগের কারণ কী?

জানা যাচ্ছে, ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলি পুলিশ যান নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করলেও সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করে না তারা। বেশ কিছু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে এই দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। সিগন্যালের গোলযোগ তাদের যেমন দেখার কথা, নতুন পোস্ট বসানো এবং বিকল হয়ে যাওয়া যন্ত্র বদলানোর কাজও তাদের। এর বদলে সিগন্যাল পোস্ট বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়ায় দেয় সংস্থাগুলি। পোস্টে কতটা জায়গা জুড়ে বিজ্ঞাপন লাগানো হচ্ছে এবং রাস্তাটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার উপরে নির্ভর করে বিজ্ঞাপনের খরচ। পোস্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সিইএসসি। বিজ্ঞাপনের আয় থেকেই আসে বিদ্যুতের খরচ।

অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাওয়া সংস্থাগুলির গাফিলতিতেই ট্র্যাফিক সিগন্যালের এই অবস্থা। এ নিয়ে বিরক্ত একটি ট্র্যাফিক গার্ডের পদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘সিগন্যাল পোস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার লোকজনকে দীর্ঘদিন ধরে বলেও কাজ হচ্ছে না। একসঙ্গে লাল আর সবুজ বাতি জ্বলছে।’’ দক্ষিণ কলকাতার অন্য একটি ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশকর্মীর আবার অভিযোগ, ‘‘কিছু বলতে গেলেই বলা হচ্ছে, বিজ্ঞাপন থেকে টাকা উঠছে না। লোক নেই। তাই অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে সিগন্যাল সারিয়ে দেওয়া মুশকিল।’’

দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার ট্র্যাফিক সিগন্যাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা একটি সংস্থার কর্তা জিতেন্দ্র কৌশিক এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার হাত থেকে এখন বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলির হাতেই বেশি চলে গিয়েছে। তাদের না আছে এই সংক্রান্ত শিক্ষা, না আছে পারদর্শিতা। বিজ্ঞাপনের টাকা বুঝে নেওয়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এক-একটি সিগন্যাল পোস্টে তিন-চারটে করে বাড়তি বাতি ঝোলানোর জায়গা তৈরি করা হচ্ছে। আদতে এটা হল, সেখানে বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে টাকা নেওয়ার কৌশল। এতে চালক বিভ্রান্ত হচ্ছেন, দুর্ঘটনা ঘটছে।’’ ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কলকাতার ট্র্যাফিক সিগন্যাল রক্ষণাবেক্ষণের কাজের সঙ্গে যুক্ত বিশ্বাশিস দত্ত আবার বললেন, ‘‘কলকাতার ট্র্যাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা বদলাতে দেখেছি। কিন্তু কোনও সিগন্যালেই বিজ্ঞাপন দেওয়ার পক্ষপাতী নই। শহরের কিছু এলাকা বিজ্ঞাপনহীন জায়গা হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও সর্বত্র হয়নি। অথচ, দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে মুম্বই বা দিল্লিতে হাই কোর্টের নির্দেশে ট্র্যাফিক সিগন্যালে বিজ্ঞাপন লাগানো নিষিদ্ধ। এই রাজ্যে সরকারি খরচে সিগন্যাল রক্ষণাবেক্ষণ হলে তবেই এ জিনিস এড়ানো সম্ভব।’’

লালবাজারের কোনও কর্তা এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। ট্র্যাফিক পুলিশ বিভাগের এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, ‘‘এটা অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সিগন্যাল পোস্টে সমস্যা আছে কি না, ট্র্যাফিক গার্ডগুলির কাছে জানতে চাওয়া হবে।’’ সিগন্যাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞাপন এজেন্সির তরফে সঙ্ঘমিত্রা বসু বললেন, ‘‘অতিমারির পর থেকে এমনিই বিজ্ঞাপন পাওয়া কঠিন হয়েছে। ফোর্ট উইলিয়াম বা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের মতো বিজ্ঞাপনহীন এলাকায় আমাদের পোস্ট রয়েছে। সেখানে নিজেদের টাকায় রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। অন্য জায়গাতেও যদি বিজ্ঞাপন না নিই, তা হলে কাজ করব কী করে!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Traffic Signal Kolkata Traffic Police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy