পড়ে রয়েছে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য। ফাইল চিত্র
রাজ্যে প্লান্ট তৈরি না করেই কী ভাবে তারা বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্ব পেল, এই প্রশ্নের ভিত্তিতে গত ডিসেম্বরেই তাদের শো-কজ় করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তার ঠিক এক মাস পরে, অর্থাৎ জানুয়ারিতে সেই ‘শো-কজ়’ করা সংস্থাকেই পরিষেবা দেওয়া বাবদ প্রায় এক কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সেই সূত্রেই ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি অপারেটর’ (সিবিডব্লিউটিএফ) নিয়ে নতুন করে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ‘এসএনজি এনভায়রো-সলিউশন্স প্রাইভেট লিমিটেড’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে এখনও বৈধ সিবিডব্লিউটিএফ-এর স্বীকৃতি পায়নি। তা সত্ত্বেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নথিতে তাদের ‘সিবিডব্লিউটিএফ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং বারাসত জেলা হাসপাতাল, সাগর দত্ত হাসপাতাল, হাওড়া জেলা হাসপাতাল-সহ মোট ১৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ এবং তার প্রক্রিয়াকরণের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যত টাকা বকেয়া ছিল, তা-ও মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার পরিমাণ ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ৪ হাজার ৭৯৫ টাকা। সংশ্লিষ্ট সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘আমরা টাকা পেয়েছি।’’
কিন্তু শো-কজ় করা সত্ত্বেও কী ভাবে সংস্থাকে বকেয়া মেটানো হল?
ওই শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য দফতর তাদের কাছ থেকে প্লান্ট তৈরি সংক্রান্ত ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জানতে চেয়েছিল। সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিবিডব্লিউটিএফ হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার আগে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যে অনুমোদন দরকার হয়, সেটা এখনও পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র আবেদন করা হয়েছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘অনুমোদন পেতে সময় লাগে। এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট-সহ একাধিক ধাপ রয়েছে। আমরা সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।’’
অথচ ‘দ্য ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব হসপিটাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ (আইএসএইচডব্লিউএম) জানাচ্ছে, সিবিডব্লিউটিএফ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে গেলে আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের (এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ) দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে আবেদন জানাতে হবে। কারণ, এ ক্ষেত্রে তারাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা (রেগুলেটরি অথরিটি)। সংশ্লিষ্ট সংস্থা যেখানে প্লান্ট তৈরি করবে, তাদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রথমে সেখানে পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা করবে পর্ষদ। সব ঠিকঠাক থাকলে তবেই অনুমোদন মিলবে। তার পরেই সংশ্লিষ্ট সংস্থা বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ-সহ একাধিক কাজ করতে পারবে। আইএসএইচডব্লিউএম-এর এক কর্তার কথায়, ‘‘এই প্রক্রিয়া ছাড়াই যদি বায়োেমডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়, তা হলে সেটা পুরোপুরি বেআইনি।’’
সংস্থার প্রেসিডেন্ট অশোক আগরওয়াল জানাচ্ছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যদি বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের জন্য সাময়িক লাইসেন্সও (টেম্পোরারি লাইসেন্স) দেয়, তা হলেও পর্ষদের ওয়েবসাইটে তার উল্লেখ থাকার কথা। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইনে বলা রয়েছে, একমাত্র রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদন পেলেই সিবিডব্লিউটিএফ কাজ করতে পারবে। এটা বাধ্যতামূলক।’’
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিবিডব্লিউটিএফ বাছাইয়ে দরপত্র ডেকেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ওই বছরের মে মাসে রাজ্যে ন’টি জ়োনে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্ব পেয়েছিল এসএনজি সংস্থা। নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে দরপত্রে অংশগ্রহণ করার খবরটি প্রকাশ্যে আসে গত ডিসেম্বরে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে শো-কজ় করা হয়েছিল সংস্থাকে। কিন্তু তার পরেও তাদের কেন টাকা মেটানো হচ্ছে?
উত্তরে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, শো-কজ় করার প্রক্রিয়া ও পরিষেবা দেওয়ার জন্য টাকা দেওয়া দু’টি পৃথক বিষয়। কারণ, সিবিডব্লিউটিএফ-কে সরানোর কতগুলি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপ শো-কজ় করা (যা করা হয়েছে) এবং কয়েকটি বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া। ওই কর্তার কথায়, ‘‘তাতে সন্তুষ্ট না হলে বন্ধ করা হবে। তার আগে একটা বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এত দিন যে পরিষেবা তারা দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে টাকা দিতেই হবে। না হলে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে, বিশেষত এই করোনা-কালে সমস্যা তৈরি হবে।’’
যার পরিপ্রক্ষিতে এক আইনজীবী বলছেন, ‘‘যেখানে সংস্থার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ অনিয়মের, সেখানে ওই সংস্থাকে টাকা দিয়ে সেই অনিয়মকেই মান্যতা দেওয়া হল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy