E-Paper

ডেঙ্গির দোসর ভাইরাল জ্বরও, ঘরে ঘরে বাড়ছে সংক্রমণ

ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাইরাসের প্রকোপও যে ভাল রকম ছড়িয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে শহরের একাধিক পরীক্ষাগারের পরিসংখ্যান দেখলেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:২১

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ঘরে ঘরে ধুম জ্বরে আক্রান্ত লোকজন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গির দোসর হয়েছে বিভিন্ন ভাইরাসও। আর সেই ভাইরাল জ্বরেই কাঁপছে শহর থেকে জেলা। চলতি বছরে যার প্রকোপ খানিকটা বেশিই।

অগস্ট থেকে রাজ্যে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। এক মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে হাজার দশেক। গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার জন। এক দিকে সেই সংখ্যাটা যেমন বাড়ছে, অন্য দিকে ভাইরাল জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে ডাক্তারদের চেম্বারে জ্বর-সর্দি-কাশির সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, তাঁরা সকলেই যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত, এমনটা একেবারেই নয়। বরং ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে তীব্র জ্বরে কাবু আট থেকে আশির একটি বড় অংশ। শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর কথায়, ‘‘ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যানেল পরীক্ষা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। তাই সব রোগীর পক্ষে সেটি করা সম্ভব নয়। তবে যে সমস্ত রোগীর ডেঙ্গি পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে, তাঁরা ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত ধরে নিয়েই চিকিৎসা করা হচ্ছে।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ফ্লুয়ে আক্রান্ত হলে পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত জ্বরের পাশাপাশি গলা ব্যথা ও মারাত্মক দুর্বলতার সমস্যা থাকছে। সঙ্গে ভোগাচ্ছে সর্দি-কাশিও।

ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাইরাসের প্রকোপও যে ভাল রকম ছড়িয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে শহরের একাধিক পরীক্ষাগারের পরিসংখ্যান দেখলেই। যেমন, ‘সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক’-এর মাইক্রোবায়োলজিস্ট পম্পি মজুমদার জানাচ্ছেন, দৈনিক ১০০টি নমুনা পরীক্ষা হলে তার মধ্যে ডেঙ্গি মিলছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশে। বাকি নমুনায় মিলছে ভাইরাসের অস্তিত্ব। যার মধ্যে সব থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ ভাইরাসের সাবটাইপ ‘এইচ ৩ এন ২’। এর পরেই রয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি-র আধিপত্য। এই দুই ভাইরাসের পাশাপাশি খুব অল্প হলেও রাইনো ও অ্যাডিনো ভাইরাসের অস্তিত্বও মিলছে বলে জানান পম্পি। আবার ‘রায় অ্যান্ড ত্রিবেদী ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি’র কর্তা তথা অভিজ্ঞ চিকিৎসক শুভেন্দু রায় জানাচ্ছেন, চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত তাঁদের পরীক্ষাগারে জ্বরে আক্রান্ত ৭০ জনের আইজিএম-অ্যান্টিবডি পরীক্ষা হয়েছে। তাতে ২১ শতাংশের ডেঙ্গি পজ়িটিভ এসেছে। আবার ২১১ জনের এনএস-১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ১৭ শতাংশের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। অগস্টে ২৪০ জনের আইজিএম-অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় নয় শতাংশের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছিল। এনএস-১ পজ়িটিভ এসেছিল ১০ শতাংশের।

শুভেন্দু বললেন, ‘‘এই হিসাবের বাইরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত বলেই বোঝা যাচ্ছে। সেই সংখ্যাটা যেমন কম নয়, তেমনই ডেঙ্গিও যে বাড়ছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে।’’ আবার ডেঙ্গি ও ভাইরাসের আক্রমণ একসঙ্গেও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন ঘরে ঘরে জ্বরের একমাত্র কারণ যে ডেঙ্গি, তা বলা ঠিক নয়। বরং ডেঙ্গি একটি অন্যতম কারণ। বার বার আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত হয়। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এড়িয়ে সংক্রমণ ঘটায়। সেটাই এখন ভাল রকম শুরু হয়েছে। তবে জ্বর হলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।’’ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি টাইফয়েড, ম্যালেরিয়ার প্রকোপও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজির চিকিৎসক সৌগত ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘১৫ অগস্টের পর থেকে ম্যালেরিয়ার অনেক রোগীও পাচ্ছি। আবার শহর-জেলা মিলিয়েই প্রকোপ বাড়ছে ডেঙ্গিরও। সঙ্গে খেলা দেখাচ্ছে ভাইরাস।’’

সব মিলিয়ে চিকিৎসকদের মতে, মশা ও ঘন ঘন আবহাওয়া পরিবর্তনের জোড়া ফলায় জ্বরে কাবু আমজনতা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dengue Kolkata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy