হামলার পর আহত দীপিকা সর্দার। শুক্রবার, আদালত চত্বরে। নিজস্ব চিত্র
বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের ভিড়ে তখন ভর্তি আদালত চত্বর। হঠাৎই ১০-১৫ জন এসে বছর আঠেরোর এক তরুণীকে মারধর করতে শুরু করলেন। তরুণীকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেলেন তাঁর শাশুড়ি ও ননদ। এরই মধ্যে মেয়েটির শাশুড়ির গলায় ব্লেড জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ উঠল।
কোনও সিনেমার দৃশ্য নয়। শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনার সাক্ষী রইল আলিপুর জাজেস কোর্ট চত্বর। পুলিশ সূত্রের খবর, বিষ্ণুপুরের দৌলতাবাদের বাসিন্দা দীপিকা সর্দার এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই আদালতের এক আইনজীবী গোপাল হালদারের সেরেস্তায় অপেক্ষা করছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেয়ে ও পুত্রবধূ জেসমিনা। দীপিকার অভিযোগ, আচমকাই জনা পনেরো যুবককে নিয়ে সেখানে হাজির হন জেসমিনার বাবা। তাঁরা এসেই মেয়েকে সকলের সামনে মারধর করতে শুরু করেন। দীপিকা আরও অভিযোগ করেছেন, জেসমিনাকে বাঁচাতে গেলে তাঁকে ও তাঁর মেয়েকেও মারধর-শ্লীলতাহানি করা হয়। এরই মধ্যে কেউ তাঁর গলায় ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করে।
ভরা আদালত চত্বরে এই দৃশ্য দেখে ছুটে আসেন সেরেস্তায় থাকা আইনজীবী ও আশপাশের সেরেস্তার আইনজীবীরা। তখনই হামলাকারীরা পালাতে চেষ্টা করে। সে সময়েই মেহবুব শেখ এবং শামিম নামে দু’জনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তাঁরা। খবর পেয়ে আলিপুর থানার পুলিশ এসে মেহবুব ও শামিমকে আটক করে। রাতে মেহবুবকে গ্রেফতার করা হয়।
হঠাৎ এমন আক্রমণ কেন? পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের অক্টোবরে। বাড়ি থেকে পালিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন জেসমিনা। প্রথমে তাঁর পরিবার বিষ্ণুপুর থানায় অমিত সর্দার নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে। এর পরেই জেসমিনা এবং অমিত বাড়ি থেকে পালান। শেষে মেয়েকে না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় জেসমিনার পরিবার।
সম্প্রতি জেসমিনা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে অমিতকে বিয়ে করেন। ছেলে অমিতের আগাম জামিন নিতে এ দিন মেয়ে এবং জেসমিনাকে নিয়ে আলিপুর জাজেস কোর্টে গিয়েছিলেন দীপিকা। তাঁর আসার খবর কোনও ভাবে পৌঁছে গিয়েছিল জেসমিনার মা-বাবার কাছে। এ দিকে, অমিতের আগাম জামিনের শুনানি হওয়ার আগেই এমন হামলার পরে অন্য আইনজীবীরা জেসমিনা এবং দীপিকাকে নিয়ে সোজা চলে যান আদালত কক্ষে।
অমিতের তরফের এক আইনজীবী রাজীবকুমার ঝা জানান, আদালত কক্ষে কয়েক জন গিয়ে তাঁদের বলেন, সেরেস্তার সামনে গোলমাল হচ্ছে। রাজীববাবু এবং অন্য আইনজীবীরা ছুটে এসে দেখেন, জেসমিনাকে ঘিরে ধরেছেন তাঁর মা-বাবা এবং আরও কয়েক জন। এরই মধ্যে কেউ দীপিকার গলা লক্ষ্য করে ব্লেড জাতীয় কিছু চালিয়ে দেয়।
ভিড়ের মধ্যে এমন দেখে প্রথমে হকচকিয়ে যান রাজীববাবুরা। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই জেসমিনা ও দীপিকাকে নিয়ে তাঁরা সোজা পৌঁছে যান এজলাসে। পরে ওই আইনজীবী বলেন, ‘‘জেসমিনার বয়ানের ভিত্তিতে অমিতের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।’’ ছেলের আগাম জামিন নিতে এসে হামলার মুখে পড়ায় আলিপুর থানায় অভিযোগ করেছেন দীপিকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy