Advertisement
E-Paper

‘ভুল গ্রুপের’ রক্ত শরীরে, প্রাণ সংশয়

‘এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি’ নিয়ে গত মে মাসের শেষে সল্টলেকের কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাজারহাটের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের বৈশাখী সাহাকে। সেখানে অস্ত্রোপচার হয় তাঁর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০২:৫৪
বৈশাখী সাহা

বৈশাখী সাহা

বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও ভুল রক্ত দেওয়ায় এক রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার অভিযোগ উঠল এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। রোগীর স্বামীর দাবি, তাঁর স্ত্রীর এমনই অবস্থা যে, গোটা শরীর হলুদ হয়ে গিয়েছে। কিডনি এবং ফুসফুসে সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাখতে হয়েছে ভেন্টিলেটরে। বিধাননগর পুলিশের পাশাপাশি এ নিয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন এবং মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানিয়েছে রোগীর পরিবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ দিন ভুল রক্ত দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

‘এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি’ নিয়ে গত মে মাসের শেষে সল্টলেকের কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাজারহাটের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের বৈশাখী সাহাকে। সেখানে অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। রোগীর স্বামী অভিজিৎ সাহার অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পরে তাঁর স্ত্রীকে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বৈশাখীর রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। তার বদলে বৈশাখীকে এবি পজিটিভ রক্ত দেওয়া হয়েছে। এর জেরেই বৈশাখীর শরীর হলুদ হয়ে গিয়েছে। ভেন্টিলেটরে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছে। মঙ্গলবার অভিজিৎ বলেন, ‘‘সুস্থ করে ফিরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে আমার স্ত্রীকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে ওই হাসপাতাল। ভেন্টিলেটরে রেখে দিয়ে এখন টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে আমাদের।’’

অভিজিৎ জানান, গত মে মাসের শেষে পেট ব্যথা শুরু হয় বৈশাখীর। ৫ জুন তাঁকে কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিজিৎ বলেন, ‘‘একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ওকে দেখে স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। তখন ওই হাসপাতালেরই স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক জয়িতা রায় মিত্রকে দেখাই আমরা। দেখেই বৈশাখীকে ভর্তি করিয়ে দিতে বলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য ছিল, বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে বৈশাখীর কিছু একটা হয়ে যেতে পারে! এ কথা শুনে আমরা আর দেরি করিনি।’’ ওই রাতেই অস্ত্রোপচার হয় বৈশাখীর।

অভিজিতের দাবি, সফল অস্ত্রোপচার হলেও রাত থেকে সমস্যা শুরু হয় বৈশাখীর। অভিজিতের অভিযোগ, ‘‘রাতে রক্ত দেওয়ার সময় দেখি বৈশাখীকে এবি পজিটিভ রক্ত দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, বৈশাখীর রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। বারবার
বলা সত্ত্বেও কেউ শোনেননি।’’ পরের দিন ভোর থেকেই স্ত্রীর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে বলে দাবি অভিজিতের। বৈশাখীর প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বার হতে শুরু করে। ক্যাথিটার রক্তে ভরে যায়। অভিযোগ, চিকিৎসকদের ডেকেও সাড়া মেলেনি। অভিজিতের কথায়, ‘‘চিকিৎসক জয়িতাকে ফোন করলে তিনি ছুটিতে রয়েছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে অন্য চিকিৎসকেরা দেখে বৈশাখীকে আইসিইউ-তে নিয়ে যেতে বলেন। এখনও ও ভেন্টিলেটরে রয়েছে।’’

রোগীর দেহে এ ভাবে ভুল রক্ত গেলে কী সমস্যা হতে পারে? হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘মারাত্মক ব্যাপার। এতে বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’’ তিনি জানান, রোগীর রক্তের গ্রুপ যদি এ পজিটিভ হয় তা হলে তাঁর দেহে প্রচুর অ্যান্টি বি অ্যান্টিবডি রয়েছে। সেখানে বি পজিটিভ বা এবি পজিটিভ রক্ত দিলে গ্রহীতার রক্তের অ্যান্টিব়ডিগুলি দাতা রক্তের অ্যান্টিজেনকে আক্রমণ করতে শুরু করবে। তাতে রক্ত ভেঙে গিয়ে প্রচুর বিলিরুবিন তৈরি হবে। এই রক্ত ভাঙার সময়েই কিডনি-সহ বাকি অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। প্রান্তরবাবু বলছেন, ‘‘সামান্যতম ভুল থেকে এই ধরনের বড় বিপদ ঘটতে পারে। বারবার দেখে নিলে এ জিনিস এড়ানো সম্ভব।’’

যদিও রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়ার কথা মানতেই চাননি চিকিৎসক জয়িতা। তাঁর দাবি, ‘‘ভুল রক্ত দেওয়ার কথা ঠিক নয়। একটা ট্রান্সফিউশন রিঅ্যাকশন হয়েছে শুনেছি।’’ হাসপাতালের তরফে অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভুল রক্ত দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘রক্ত ট্রান্সফিউশনের সময়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে ভেন্টিলেটরের বাইরে রাখা যাবে।’’ তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট চেয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন। কমিশনের সচিব আরসাদ ওয়ারসি বলেন, ‘‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Baisakhi Saha Wrong Blood group
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy