Advertisement
E-Paper

পথে পড়ে দেহ, না-দেখে পরপর পিষে দিল গাড়ি

পুলিশের দাবি, ট্রাক, বাস ও ছোট গাড়ি মিলিয়ে অন্তত ৫০টি গাড়ি চলে গিয়েছে ওই যুবকের দেহের উপর দিয়ে। তাই খানিকটা অংশ ছাড়া দেহের বাকিটা সে ভাবে মেলেনি বলেই জানিয়েছে পুলিশ।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৪১
রাহুল দাস

রাহুল দাস

মধ্যরাতে কাজ শেষে মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বছর চব্বিশের এক যুবক। বারাসতের যশোর রোডে দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। এর প্রায় আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছল, তত ক্ষণে রাস্তার সঙ্গে কার্যত মিশে গিয়েছে ওই যুবকের রক্তাক্ত দেহ। পুলিশের দাবি, ট্রাক, বাস ও ছোট গাড়ি মিলিয়ে অন্তত ৫০টি গাড়ি চলে গিয়েছে ওই যুবকের দেহের উপর দিয়ে। তাই খানিকটা অংশ ছাড়া দেহের বাকিটা সে ভাবে মেলেনি বলেই জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার রাতে এমনই এক ভয়াবহ এবং অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল বারাসত। প্রশ্ন উঠেছে, যশোর রোডের উপরে এক যুবককে ওই ভাবে পড়ে থাকতে দেখেও তাঁর উপর দিয়ে পরপর এতগুলি গাড়ি চলে গেল কী ভাবে? কেউ গাড়ি থামিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন না কেন? পুলিশের কোনও টহলদার গাড়িও কি রাস্তায় ছিল না?

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম রাহুল দাস। তিনি বারাসতের বামনগাছির কুলবেড়িয়ায় থাকতেন। গত এক বছর ধরে বাইপাসের একটি হোটেলে চাকরি করছিলেন। ওই দিন রাত আড়াইটে নাগাদ বাইক

চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময়েই দুর্ঘটনাটি ঘটে। বারাসতের পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘টহলদার গাড়ি খবর পেয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে দেহটি উদ্ধার করে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, উল্টো দিক থেকে আসা কোনও গাড়ির সঙ্গে বাইকের ধাক্কা লাগার ফলেই রাস্তায় ছিটকে পড়েন রাহুল। রাত

তিনটে নাগাদ বারাসতের ডাকবাংলো মোড়ে দাঁড়ানো টহলদার গাড়ির অফিসার আবদুল্লা বিশ্বাসকে অন্য এক গাড়ির চালক জানান, রথতলার কাছে রাস্তায় এক যুবকের ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে ৫০০ মিটার দূরের ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বারাসত থানার ওই গাড়ি। তবে রাহুলের দেহ এমন ভাবে পিষে গিয়েছিল যে, কোনও ভাবেই তা রাস্তা থেকে তোলা যাচ্ছিল না। তাঁর হেলমেটও ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। পেট থেকে বুক পর্যন্ত কিছুটা অংশ ছিটকে পড়েছিল রাস্তার এক পাশে।

পুলিশ জানায়, আর কোনও গাড়ি যাতে ওই পিষে যাওয়া দেহের উপর দিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য গার্ডরেল দিয়ে দু’দিক ঘিরে দেওয়া হয়। শেষে বারাসত হাসপাতালের মর্গের এক কর্মী এসে কোনও মতে রাস্তা থেকে ছিন্নভিন্ন দেহটি তুলে নিয়ে যান। মৃতের ব্যাগে থাকা পরিচয়পত্র দেখে খবর পাঠানো হয় তাঁর বাড়িতে। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন তাঁর বাবা তারক দাস ও মা দীপাদেবী।

রাহুলের পরিজনেরা জানান, অটোচালক তারকবাবু খুব কষ্ট করে ছেলে ও মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। এক আত্মীয়ের আর্থিক সাহায্যে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়েছিলেন রাহুল। রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার যানবাহন পাওয়া যেত না বলে কয়েক মাস আগে বাইকটি কিনেছিলেন তিনি। সেই বাইকে ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মানবিকতাটুকুও দেখাননি।

‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’র ডিরেক্টর প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘বাজার অর্থনীতিতে ঢুকে মানুষ এখন স্বার্থপর হয়ে গিয়েছে। নিজের পরিবারের প্রতিও আমরা যথাযথ ভাবে মনোযোগী নই। সেখানে এক যুবক রাস্তায় পড়ে থাকলেও তাঁকে নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই, এটাই মনে করেন অনেকে। সেই মনোভাবের কারণেই সকলে গাড়ি চালিয়ে চলে গিয়েছেন।’’

তবে ছেলেহারা মায়ের আক্ষেপ, ‘‘এতগুলো গাড়ি ছেলেটার উপর দিয়ে চলে গেল। এক জনেরও কি একটু দয়া হল না!’’

Accident Death Barasat Jessore Road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy