বছর পাঁচেক আগে ডাফরিন রোডে বেসরকারি দু’টি বাসের রেষারেষির জেরে হাত কেটে গিয়েছিল তিন যাত্রীর। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল ওই দুই চালককে। বৃহস্পতিবার তাদের পাঁচ বছর সশ্রম কারাবাসের নির্দেশ দিলেন কলকাতার নগর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত বিচারক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের ২৫ অগস্ট সকালে বেহালা থেকে হাওড়াগামী একটি মিনিবাসের সঙ্গে পৈলান থেকে হাওড়াগামী একটি বেসরকারি বাসের রেষারেষি হচ্ছিল ডাফরিন রোডে। হঠাত্ই দু’টি বাসের মধ্যে পাশাপাশি ধাক্কা লাগে। যার জেরে মিনিবাসের জানলার পাশে বসে থাকা যাত্রী বরুণ চক্রবর্তী, তাঁর স্ত্রী জয়শ্রী চক্রবর্তী ও গুয়াহাটির বাসিন্দা আশিস পালের হাত কাটা পড়ে। পুলিশ প্রথমে চিকিত্সার জন্য তাঁদের এসএসকেএম-এ নিয়ে যায়। পরে আশিসবাবুকে সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
আদালতের রায় শুনে বরুণবাবু বৃহস্পতিবার বলেন, “আমাদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, আমরাই জানি। যারা এই ক্ষতি করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছিলাম। তা না হলে বিচার ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যেত। এটা যে শেষ পর্যন্ত হয়েছে, তা জেনে আমরা খুশি।
ময়দান থানার পুলিশ অবশ্য তদন্তে নেমে ঘটনার কয়েক দিন পরেই গ্রেফতার করেছিল মিনিবাসের চালক সোমনাথ মণ্ডল এবং অন্য বেসরকারি বাসটির চালক বিক্রম সিংহকে। তাদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ জানায়, কিছু দিন জেল হেফাজতে থাকার পরে জামিনে ছাড়া পায় তারা। বৃহস্পতিবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ মধুমিতা রায় ওই দুই চালককে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, বরুণবাবু যাদবপুরের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিন্টিং টেকনোলজির গ্রন্থাগারিক। তাঁর স্ত্রী শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে ভুগছিলেন। দুর্ঘটনার দিন তিনি স্ত্রীকে নিয়ে মিনিবাসে করে হাওড়ার রামরাজাতলায় ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁদের পাঁচ বছরের ছেলে শুভদীপ। সে অবশ্য জখম হয়নি। দুর্ঘটনায় জখম আশিসবাবু পেশায় ব্যবসায়ী। ঘটনার চার দিন আগে ব্যবসার কাজে তিনি কলকাতায় আসেন।
বৃহস্পতিবার স্বামীর শাস্তির মেয়াদ শুনে চালক সোমনাথ মণ্ডলের স্ত্রী লক্ষ্মী আদালত চত্বরে বলেন, “স্বামীর রোজগারেই সংসার চলে। এখন একরত্তি ছেলেকে নিয়ে কী করে চালাবো বুঝতেই পারছি না। এ দিকে অন্য চালক বিক্রমের স্ত্রী শীলা জানান, তাঁর দু’টি শিশুপুত্র। জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের বাস চালাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী। বললেন, “কী করে সংসার চলবে জানি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy