Advertisement
১৯ মে ২০২৪

জঙ্গি নিশানায় হাইকোর্ট, প্রশ্ন সুরক্ষা নিয়ে

ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর নয়া নিশানায় এ বার কলকাতা হাইকোর্ট! সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশের বিভিন্ন আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এক সতর্কবার্তা দিয়েছে। তাতেই কলকাতা হাইকোর্টে জঙ্গিহানার ব্যাপারে সতর্ক করেছে নর্থ ব্লক। বার্তা পাওয়ার পরই কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার (২) সোমেন মিত্রের নেতৃত্বে পদস্থ পুলিশ অফিসারেরা হাইকোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে মঙ্গলবার বিকেলে জরুরি বৈঠকে বসেন।

অরুণোদয় ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২০:৩৩
Share: Save:

ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর নয়া নিশানায় এ বার কলকাতা হাইকোর্ট! সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশের বিভিন্ন আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এক সতর্কবার্তা দিয়েছে। তাতেই কলকাতা হাইকোর্টে জঙ্গিহানার ব্যাপারে সতর্ক করেছে নর্থ ব্লক। বার্তা পাওয়ার পরই কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার (২) সোমেন মিত্রের নেতৃত্বে পদস্থ পুলিশ অফিসারেরা হাইকোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে মঙ্গলবার বিকেলে জরুরি বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন হাইকোর্টের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির দায়িত্বে থাকা বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইকোর্টের নিরাপত্তার নানা খামতি নিয়ে কলকাতা পুলিশ বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে। শ’খানেক সিসিটিভি, ডোরফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর বসানোর পাশাপাশি আদালতের নিরাপত্তায় পুলিশবাহিনীও মোতায়েন হয়েছে। কিন্তু তার পরেও নিরাপত্তার অনেক ফাঁকফোঁকর রয়েছে। পুলিশের আশঙ্কা, আধুনিক প্রযুক্তি এবং অস্ত্রশস্ত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা হানা দিলে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তাদের সামলানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।

বছর তিনেক আগে দিল্লি হাইকোর্টে বিস্ফোরণের পরই অন্য আদালতগুলির নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে এর পর হাইকোর্টের নিরাপত্তার খামতির দিকগুলি চিহ্নিত করা হয়। তাতে বলা হয়েছিল, হাইকোর্ট চত্বরের সবচেয়ে বড় সমস্যা গাড়ি পার্কিং। পুলিশের হিসেবে পাঁচশোরও বেশি গাড়ি হাইকোর্টের আশপাশে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতি দিন ওই চত্বরে বারোশো থেকে পনেরোশো গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশ বাবুঘাট অঞ্চলে বা গঙ্গার ধারে গাড়ি রাখার প্রস্তাব দিলেও আইনজীবীরা তাতে রাজি হননি। এক পুলিশকর্তা মনে করেন, পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক যে হাইকোর্টে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, হাইকোর্টে বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ রয়েছে। তার মধ্যে জাজেস গেট দিয়ে বিচারপতিরা, সেন্ট্রাল গেট দিয়ে আইনজীবীরা, শেরিফ’স গেট দিয়ে সরকারি আইনজীবী এবং অন্য আইনজীবীরা প্রবেশ করেন। সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন ই-গেট দিয়ে। সে জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এই পদ্ধতি যে বাস্তবে মেনে চলা সম্ভব হয় না তা জানাচ্ছেন ওই কর্তাই। কেন? পুলিশ সূত্রের খবর, হাইকোর্টে অধিকাংশ আইনজীবীর পরিচয়পত্র নেই। কাউকে বাধা দিলেই পুলিশকর্মীদের সঙ্গে আইনজীবীদের তর্কাতর্কি রোজকার ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। পুলিশ প্রবেশপথ নির্দিষ্ট করে দিলেও সেখান দিয়ে কে ঢুকছেন তা নিশ্চিত করা যায় না। পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, হাইকোর্টের অ্যাকসেস-কন্ট্রোল সিস্টেম পুলিশের হাতে না এলে নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা সম্ভব নয়।

সেই কারণে বেশ কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে পুলিশ। হাইকোর্টের চারপাশ বেড়া দিতে চায় কলকাতা পুলিশ যাতে অন্তত আদালত থেকে বেরিয়েই ফুটপাথ পর্যন্ত কোনও ভিড় না থাকে। পাশাপাশি, হাইকোর্টের প্রতিটি কর্মী এবং আইনজীবীদের জন্য বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র চালুর প্রস্তাবও দিয়েছে পুলিশ। আদালত চত্বর থেকে গাড়ি পার্কিংও তুলে দিতে চায় পুলিশ। কিন্তু হাইকোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিচারপতিদের কমিটি এবং বার অ্যাসোসিয়েশনকেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছে তারা।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিন হাইকোর্টে হাজার সাতেক আইনজীবী ছাড়া অসংখ্য আবেদনকারী, আদালতের কর্মী, আদালতের কাজে নিযুক্ত বেসরকারি কর্মীরা যাতায়াত করেন। হাইকোর্টের তিনটি ভবন। সবটাই ছড়ানো। হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় প্রয়োজনে দমকল ঢোকারও ব্যবস্থা নেই। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে দমকল সহজে ঢুকতে পারবে না।

হাইকোর্টের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি কর্মীদের জন্য বায়োমেট্রিক কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তী ধাপে আইনজীবীদেরও পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। বার অ্যাসোসিয়েশন এই কার্ড বিলির ভার পেয়েছে। এক বার কর্মী এবং আইনজীবীদের কার্ড দেওয়া হয়ে গেলে কেবলমাত্র তা দেখিয়েই আদালতে ঢোকা যাবে। নির্দিষ্ট গেটে পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিচারপ্রার্থীদের যাওয়ার ব্যবস্থাও কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হবে বলে হাইকোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

terrorist attack terget highcourt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE