জমে আছে আবর্জনা। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
টলটলে জলের পাশেই ডাঁই করা রয়েছে জঞ্জাল। কোথাও প্লাস্টিকের প্যাকেট, কোথাও জলের বোতল। ‘জাতীয় সরোবর’-এর মর্যাদা পাওয়ায় রবীন্দ্র সরোবর প্লাস্টিক-নিষিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে অনেক আগেই চিহ্নিত হয়েছে। সরোবর চত্বরে জঞ্জাল ও প্লাস্টিক ব্যবহার রুখতে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল অনেক দিন আগে। তার পরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হল না। মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ গড়ার ডাকে দেশ জুড়েই শুরু হয়েছে সাফাই অভিযান। অথচ জনসচেতনতা এবং পরিকাঠামোর অভাবে জাতীয় সরোবর যেন আবর্জনা ফেলার মুক্তাঞ্চল।
পরিবেশ দফতরের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সরোবরের কোথাও প্লাস্টিক এবং আবর্জনা পড়ে থাকবে না। সেই সঙ্গে সৌন্দর্যায়নের উপরেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। কলকাতা উন্নয়ন সংস্থা (কেআইটি) এই সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। সরোবরের প্রবেশ পথে বড় সাইনবোর্ডে লেখা, ভিতরে প্লাস্টিক ব্যাগ বা বোতল নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। তবু কেন প্লাস্টিক এবং আবর্জনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না? রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “রবীন্দ্র সরোবরে প্লাস্টিক ব্যবহারের নিয়ম নেই। নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কারও করা হয়। জনসচেতনতার অভাবে সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হচ্ছে না।”
কেআইটি কর্তৃপক্ষ জানান, সরোবরকে প্লাস্টিক এবং জঞ্জালমুক্ত করতে যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা এখনও পুরো হয়নি। তাঁদের দাবি, সরোবরের চার দিকই এখনও কার্যত খোলা। বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে ঢুকে যত্রতত্র জঞ্জাল এবং প্লাস্টিকের প্যাকেট অনেকেই ছুঁড়ে ফেলে যান। চার দিকে যত ক্ষণ না পুরো পাঁচিল দেওয়া হচ্ছে, তত ক্ষণ সমস্যা থাকবে। এত বড় সরোবর চত্বরে নজরদারির ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। তবে কেআইটি-র দাবি, পাঁচিল দেওয়ার কাজ চলছে। নিরপত্তারক্ষীদের সজাগ করা হয়েছে, প্লাস্টিক নিয়ে সরোবরে কাউকে প্রবেশ করতে দেখলেই তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে।
কেআইটি সূত্রে খবর, বর্তমানে এখানে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা ৫৩। এ ছাড়া ছ’জন সুপারভাইজার এবং এক জন সিকিউরিটি অফিসার রয়েছেন। চত্বর সাফাইয়ের জন্য প্রায় ৯০ জন সাফাইকর্মী আছেন। তবে তা যথেষ্ট নয়। কেআইটির এক আধিকারিক জানান, আবর্জনা দ্রুত সরানোর ব্যাপারেও যে পরিকাঠামো থাকা দরকার, তা নেই। কলকাতা পুরসভাকেই এই আবর্জনা সরানোর জন্য আবেদন করতে হয়। সেই কারণে আবর্জনা সরানো যথেষ্টই সময়সাপেক্ষ। কর্মীসংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ফিরহাদ হাকিম জানান, রবীন্দ্র সরোবরের পরিকাঠামো উন্নয়নে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকী, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে রবীন্দ্র সরোবর দেখভালের জন্য একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। সংস্থা সূত্রের খবর, কমিটিতে কলকাতা পুরসভার স্থানীয় দু’জন কাউন্সিলর, পরিবেশরক্ষা কর্মী এবং লেক থানার ওসি-সহ মোট সাত জন আছেন। তাঁরা সমস্ত বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করবেন এবং সরোবর দূষণমুক্ত রাখতে পরামর্শ দেবেন। অন্য দিকে, জঞ্জাল না ফেলার জন্য প্রশাসন থেকেও মাঝেমধ্যেই জন সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হবে। ইতিমধ্যেই আবর্জনা ফেলার গাড়ি এবং যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। কমিটির এক সদস্যা স্থানীয় কাউন্সিলর চৈতালী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “লেক পরিষ্কার রাখাই এই কমিটির মূল উদ্দেশ্য। সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। খুব তাড়াতাড়ি আমরা আলোচনায় বসব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy