রাজাবাজার থেকে বেহালা যাওয়ার পথে আলিপুরের জাজেস কোর্ট রোডে ঘটে এই দুর্ঘটনা। যাত্রীরা রক্ষা পেলেও চালক গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে। শনিবার। ছবি: অরুণ লোধ
তার আসার আগাম কোনও খবর ছিল না। তাই প্রস্তুতিরও বড় একটা দরকার পড়েনি। কিছুক্ষণ আগে জানান দিয়েই শহর জুড়ে সে নামল হুড়মুড়িয়ে। তাতেই নাস্তানাবুদ শহর ২০ মিনিটের মধ্যেই কার্যত অগোছালো হয়ে গেল।
শনিবার বিকেলের ঝড়বৃষ্টিতে শহরের পাওনা অনেক একাধিক জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়া, ক্যানসার হাসপাতালে কাচ ভেঙে দুই রোগিণীর আহত হওয়া, বেশ কিছু জায়গায় জল জমে যান চলাচল ব্যাহত হওয়া, ঘণ্টাখানেক বিমানের ওঠানামা বন্ধ থাকা। এ দিন ঝড়বৃষ্টিতে নাকাল হতে হয়েছে পুরসভা, দমকল, পুলিশ, এমনকী অফিসফেরত লোকজনকেও।
আবহাওয়া দফতর জানায়, এ দিন ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৬ কিমি। তারই দাপটে ময়ূরভঞ্জ রোড, জাজেস কোর্ট রোড, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যাভিনিউ, গোরাগাছা রোড, স্কুল রো, মহিম হালদার স্ট্রিট, বেলভেডিয়ার রোড, মহানির্বাণ রোড, মনোহরপুকুর রোড, পার্ক স্ট্রিট-সহ ২২টি জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে।
পুলিশ জানায়, আলিপুরে জাজেস কোর্ট রোডে রাজাবাজার থেকে বেহালাগামী একটি মিনিবাসের উপরে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। যাত্রীরা রক্ষা পেলেও গুরুতর জখম হন চালক। পায়ে চোট নিয়ে তিনি এসএসকেএমে ভর্তি। তারাতলাতেও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আহত হন এক মহিলা।
চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ঝড়ে হাসপাতালের তিনতলার বারান্দার কাচ ভেঙে ছিটকে যায়। মহিলা ওয়ার্ডের একাংশের সংস্কার হচ্ছিল বলে কয়েক জন রোগিণীকে বারান্দায় শয্যা পেতে রাখা হয়েছিল। তাঁদের দু’জনের গায়ে কাচ ছিটকে আসে। গায়ত্রী বাহাদুর নামে এক রোগিণীর পিঠে ও কপালে ক্ষত তৈরি হওয়ায় তিনটি সেলাই করতে হয়। কবিতা মাইতি নামে অন্য জনের পায়ে আঘাত লাগে। তবে হাসপাতাল সূত্রে খবর, দু’জনেই এখন বিপন্মুক্ত।
পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, ডালপালা সরিয়ে যানবাহন ও লোজনের চলাচল স্বাভাবিক করতে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে কাজে লাগানো হয়। রাস্তায় নামেন কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরাও। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “বৃষ্টি কিছুটা কমতেই কর্মীদের গাছ কাটতে লাগানো হয়”।
পুর-কর্তৃপক্ষ আরও জানান, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, বেহালা ফ্লাইং ক্লাব, মিন্টো পার্ক, কলেজ স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, মির্জা গালিব স্ট্রিট-সহ কয়েকটি জায়গায় জল জমে যায়। তবে দ্রুত জল সরাতে হাইড্র্যান্ট খুলে দেন পুরকর্মীরা।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, বৃষ্টি, জল জমা, তার উপরে অন্ধকার হয়ে আসা সব মিলে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। জল জমায় পথের গতিও কমে যায়। বিভিন্ন জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়, যা স্বাভাবিক হতে প্রায় রাত হয়ে যায়।
এ দিনের ঝড়বৃষ্টিতে শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখায় গাছের ডাল পড়ে ওভারহেড তার ঝুলে যায়। এ জন্য ওই শাখায় দেড় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর শাখায় দু’দফায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। এ ছাড়াও হাওড়া-খড়্গপুরের আমতা শাখায় এক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। শিয়ালদহ মেন ও বনগাঁ শাখায় ঝড়ের সময়ে মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ট্রেন ২০-২৫ মিনিট দেরিতে চলে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারেনি বিমানও। বহু বিমান আকাশে চক্কর কাটতে থাকে। অনেকগুলির নামতে দেরি হয়। মোহনবাড়ি থেকে কলকাতামুখী ইন্ডিগোর বিমানকে রাঁচিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আগরতলা থেকে কলকাতামুখী স্পাইস জেটের বিমানকে ফের আগরতলায় পাঠান কর্তৃপক্ষ। একই ভাবে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বাগডোগরা থেকে কলকাতাগামী একটি বিমানকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভুবনেশ্বরে। তবে আবহাওয়া কিছুটা ভাল হওয়ার পরে সন্ধ্যায় ওই তিনটি বিমানকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় কলকাতা বিমানবন্দরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy