Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
নজরে পুরভোট

ধাপা জলপ্রকল্পের কাজ চলতি বছরেই শেষ করতে চায় পুরসভা

ধাপা জলপ্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য দু’বার সময় দিয়েও তা পিছিয়েছে। অবশেষে, আগামী বছরের পুর-নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। এ দিকে এই প্রকল্প শেষ না হওয়ার ফলে এই গ্রীষ্মের দাবদাহে জলসঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন পূর্ব কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, ২০১১ সালে ধাপা জলপ্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

ধাপায় নির্মীয়মাণ জলপ্রকল্প। —ফাইল চিত্র।

ধাপায় নির্মীয়মাণ জলপ্রকল্প। —ফাইল চিত্র।

কৌশিক ঘোষ
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০১:৩৮
Share: Save:

ধাপা জলপ্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য দু’বার সময় দিয়েও তা পিছিয়েছে। অবশেষে, আগামী বছরের পুর-নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। এ দিকে এই প্রকল্প শেষ না হওয়ার ফলে এই গ্রীষ্মের দাবদাহে জলসঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন পূর্ব কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা।

প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, ২০১১ সালে ধাপা জলপ্রকল্পের কাজ শেষ হবে। পরে এই সময়ের পরিবর্তে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি এই প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়। বছরখানেক আগে পেরিয়ে গিয়েছে সেই সময়সীমাও। এ বার নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই বছরের মধ্যেই শেষ করা হবে ওই জলপ্রকল্পের কাজ।

কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা জল সরবরাহ দফতরের মেয়র পারিষদ শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পরিকাঠামোজনিত এবং আইনগত কিছু সমস্যা থাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা যায়নি। তবে বর্তমানে কাজ পুরোদমে চলছে। এই বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে।”

প্রকল্পটি রূপায়ণে এত দেরি হল কেন? কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, এই জলপ্রকল্পের জন্য পুরসভা ২০০৬ সালে পরিকল্পনা নেওয়া হয়, বাগবাজারের ‘মায়ের ঘাট’ থেকে অপরিশোধিত জল তুলে পাইপের মাধ্যমে ধাপার ‘ট্রিটমেন্ট প্লান্টে’ নিয়ে গিয়ে পরিশোধন করে পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হবে। কিন্তু সমস্যা দেখা যায় তার পরেই।

ধাপার জলপ্রকল্পের জমি পূর্ব কলকাতার জলাভূমির অন্তর্গত বলে বিতর্ক ওঠে। তৈরি হয় আইনি জটিলতা। এই সমস্যা কাটিয়ে এই প্রকল্প শুরু করতেই দেরি হয়। ২০০৬ সালের পরিবর্তে এখানে কাজ শুরু করা হয় ২০০৯ সালের শেষে।

এর পরে সমস্যা দেখা দেয় জেটি নির্মাণ নিয়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাগবাজারের ‘মায়ের ঘাট’ থেকে অপরিশোধিত জল ভুগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্যানাল ওয়েস্ট রোড, ধাপা এবং বাইপাস হয়ে সরাসরি যুক্ত হবে ধাপা জলপ্রকল্পের সঙ্গে। পুরসভা সূত্রের খবর, জল তোলার জন্য মায়ের ঘাটের যেই জায়গায় জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়, সেখানেই চক্ররেল সম্প্রসারণের জন্য ‘ডবল লাইন’ পাতার সিদ্ধান্ত নেন রেল কর্তৃপক্ষ। এর পরে, কলকাতা পুরসভা বিকল্প জায়গার জন্যও বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায়। অবশেষে, দুই দফতরেরই হস্তক্ষেপে জমির সমস্যা মিটলেও রাস্তার ধারে বেআইনি ঝুপড়ি উচ্ছেদ করে প্রস্তাবিত কাজে হাত দিতে অনেক দেরি হয়।

ইতিমধ্যে, রাজ্য সরকার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প নেয়। ফলে জল সরবরাহ করার জন্য ভূগর্ভস্থ পাইপ পাতার ক্ষেত্রে পুরসভা সমস্যার সম্মুখিন হয়। পুরসভা এই ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন পাতার যে নকশা করেছিল, সেটি নতুন করে করতে হয়। এ ছাড়া, ধাপা জলপ্রকল্পের জন্য পুরসভা ১১টি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিলেও জমি পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল।

কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল বিভাস মাইতি বলেন, “ধাপা জলপ্রকল্পের অন্তর্গত বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের জন্য বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি না করলে জলপ্রকল্প বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। সেই জমি পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা ছিল। সেগুলি পাওয়ার পরে কাজও শুরু হয়েছে পুরোদমে।” পুরসভার বর্তমান সমীক্ষা অনুযায়ী, সমগ্র প্রকল্পের প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে বলে বিভাসবাবুর দাবি। অন্য দিকে, কলকাতা পুরসভার বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক অমল মিত্র বলেন, “এটি শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। শহরের বহু প্রকল্পই শেষ করতে পারেনি তারা। গার্ডেনরিচের নতুন একটি জলপ্রকল্পের কথা বর্তমান পুরবোর্ড ঘোষণা করেছিল, শেষ হয়নি সেটিও। ধাপা প্রকল্প আদৌ শেষ হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে।”

এই জলপ্রকল্প শেষ হলে গড়ফা, তপসিয়া, তিলজলা, কসবা, ঢাকুরিয়া, প্রিন্স আনোয়ার শাহ কানেক্টর-সহ পূর্ব এবং দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নাগরিকেরা উপকৃত হবেন।

বর্তমানে উত্তর কলকাতার টালা এবং দক্ষিণে গার্ডেনরিচ থেকে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। কলকাতা পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, পলতা জলপ্রকল্প থেকে শহরে জল সরবরাহ হয় দৈনিক প্রায় ১৮ কোটি গ্যালন। অন্য দিকে, গার্ডেনরিচ প্রকল্প থেকে দৈনিক দক্ষিণ কলকাতায় সরবরাহ হয় প্রায় ১০ কোটি গ্যালন জল। কিন্তু পুরসভার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা জলকষ্ট রয়েই গিয়েছে। এই প্রকল্প শেষ হলে পূর্ব কলকাতায় দৈনিক তিন কোটি গ্যালন জল সরবরাহ করা যাবে। ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার এবং কলকাতা পুরসভার প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ অর্থে এই প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kaushik ghosh dhapa corporation election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE