নিউ টাউনে পানীয় জল ও বাণিজ্যপ্রকল্পের কাজে গতি আনার নির্দেশ দিল ‘হিডকো’। পাশাপাশি, সিদ্ধান্ত হয়েছে, উপনগরীর নির্মীয়মাণ বাণিজ্য প্রকল্পে কাঁচা-বাজারের দোকান ১০০ শতাংশ সংরক্ষিত হবে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য।
নিউ টাউনে ইতিমধ্যে ১৫ লক্ষ লোক বাস করছেন। সেই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু পানীয় জলের অভাবে সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা। হিডকো সূত্রের খবর, অ্যাকশন এরিয়া ওয়ানে জল শোধনের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরির কাজ প্রায় শেষ। গঙ্গার ধারে ‘ইঙ্কজেট প্লান্ট’ থেকে ১০.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ-সংযোগ করতে হবে। প্রতিটি পাইপের ব্যস ১.৮২৯ মিলিমিটার। হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার অংশে পাইপ পাতার কাজ হয়ে গিয়েছে। ‘ইঙ্কজেট প্লান্ট’-এ ৬৩টি পাইলিং হবে। এর মধ্যে প্রায় ৫০টি পাইলিং করা সম্ভব হয়েছে।” এই সংযোগ যেহেতু কলকাতা স্টেশনের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, তাই এ ব্যাপারে রেল-কর্তৃপক্ষের কিছু বক্তব্য রয়েছে। এ কারণে প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের ‘রাইটস’-এর সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন দেবাশিসবাবু।
বাম আমলে নিউ টাউনে পর্যায়ক্রমে জমি অধিগ্রহণের সময়ে বেশ কয়েক হাজার পরিবার জমিহারা হয়। এরা অধিকাংশই চাষবাস বা সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত ছিল। অভিযোগ, জমির বিনিময়ে সরকারি ক্ষতিপূরণের আর্থিক পরিমাণ ছিল যথেষ্ট কম। ক্ষুুব্ধ জমিহারাদের শান্ত করার চেষ্টায় সরকার সে সময়ে একগুচ্ছ কল্যাণ-প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে। সেগুলি রূপায়িত করার আগেই রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হয়। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, “নিউ টাউনে জমি অধিগ্রহণ করায় প্রায় ১৮ হাজার পরিবার সঙ্কটে পড়ে। বাম আমলে জমিহারাদের রুজির জন্য নির্মাণ-সামগ্রী সরবরাহের যে সব সিন্ডিকেট করা হয়, সেগুলি সিপিএমের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আমরা আসার পরে দফায় দফায় গ্রিন পুলিশ, স্থানীয় নানা প্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, প্রকৃতি উদ্যানের শ্রমিক প্রভৃতি কাজে জমিহারা কয়েক হাজারের রুজির ব্যবস্থা করেছি।”
এই অবস্থায় প্রস্তাবিত বাণিজ্য প্রকল্পে কাঁচা-বাজারের স্থান জমি-হারাদের জন্য সংরক্ষিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র সিইও গোপাল ঘোষ এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘হিডকো’ ১০টি বাণিজ্য-প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দোতলা বাণিজ্য কমপ্লেক্সগুলির প্রতিটির নীচ তলায় থাকবে গাড়ি রাখার জায়গা ও কাঁচা বাজার। দোতলায় থাকবে বিভিন্ন মাপের স্টল। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য ১৫ কাঠা থেকে দুই বিঘা নানা মাপের জমি বরাদ্দ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে তিনটি বাণিজ্য-প্রকল্প জুনে চালু হওয়ার কথা। বাকি সাতটির নির্মাণ চলতি বছরেই শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
প্রকল্পের জমির দাম দিচ্ছে হিডকো। নির্মাণব্যয়ের মূল অংশ সংগৃহীত হবে দোতলার স্টল বিলির মাধ্যমে। হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “স্টলের জন্য ধার্য করা হয়েছে ন্যূনতম ৩.৭৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু আবেদনপত্রের এমন চাহিদা, বণ্টনের গোড়াতেই আবেদনপত্র ফুরিয়ে যায়। চাহিদা পূরণ করতে ফের তা ছাপাতে হয়। ব্যাঙ্কের স্বাভাবিক পরিষেবা অক্ষুন্ন রাখতে বাণিজ্য-প্রকল্পের আবেদনপত্র বিলি হচ্ছে দুপুর আড়াইটের পরে।” তিনটি বাজারে বণ্টন হবে ১১২টি দোকান। পর্যায়ক্রমে ছাপানো হচ্ছে ১০ হাজার আবেদনপত্র। দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিউ টাউন শাখা থেকে ওই আবেদনপত্র দেওয়া হবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।
প্রথম পর্যায়ে অ্যাকশন এরিয়া ‘ওয়ান এ’, ‘ওয়ান বি’ এবং ‘ওয়ান সি’-তে হচ্ছে তিনটি প্রকল্প। দেবাশিসবাবু বলেন, “শিক্ষিত, অল্পবয়সীরাও স্টল নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন-- এটা দেখে ভাল লাগছে। ওঁদের মধ্যে একাধিক অনাবাসী ভারতীয় যেমন আছেন, তেমনই আছেন একগুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ার।” বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, “প্রস্তাবিত বাজারে জমিহারাদের স্থান বরাদ্দ ওঁদের বাড়তি সুযোগ দেবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy