Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ন’ঘণ্টা বহু বিমানের দেখাই পেল না এটিসি

শুক্রবার রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। হঠাৎই কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) মনিটর থেকে উধাও হয়ে গেল আকাশপথে উড়ে যাওয়া বহু বিমান! বিমানবন্দর সূত্রের খবর, পাঁচটি রেডারের সঙ্গে এটিসি-র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াতেই এমন ঘটনা। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ন’ঘণ্টা এটিসির মনিটরে কলকাতার আকাশসীমা দিয়ে উড়ে যাওয়া বেশির ভাগ বিমানের গতিবিধিতে নজরদারি করা যায়নি। মৌখিক ভাবে যোগাযোগ করে বহু বিমানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৭
Share: Save:

শুক্রবার রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। হঠাৎই কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) মনিটর থেকে উধাও হয়ে গেল আকাশপথে উড়ে যাওয়া বহু বিমান! বিমানবন্দর সূত্রের খবর, পাঁচটি রেডারের সঙ্গে এটিসি-র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াতেই এমন ঘটনা। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ন’ঘণ্টা এটিসির মনিটরে কলকাতার আকাশসীমা দিয়ে উড়ে যাওয়া বেশির ভাগ বিমানের গতিবিধিতে নজরদারি করা যায়নি। মৌখিক ভাবে যোগাযোগ করে বহু বিমানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কলকাতা এটিসি-র তিনটি রেডার কাজ করছিল। পাশাপাশি মৌখিক ভাবেই বিমানগুলির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন এটিসি অফিসারেরা। তবে খুবই সতর্ক থাকতে হয় তাঁদের। কারণ, মনিটরে বিমানের অবস্থান দেখা যাচ্ছিল না। ফলে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সামান্য ভুল হলেই দু’টি বিমান আকাশের একই জায়গায় এসে যেত পারত। ঘটতে পারত বড় দুর্ঘটনাও।

বিভিন্ন বিমানসংস্থার পাইলটেরাও জানান, তাঁদেরও এ সময় সতর্ক থাকতে হয়। দু’টি বিমানের দূরত্ব বেশি রাখতে গতিও কমাতে হয়। এটিসি সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে এই বিপত্তির পর দু’টি বিমানের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে কিছু বিমানের গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়েছে। তবে এটিসি-র তৎপরতার ফলে শুক্রবার রাতে ও শনিবার রাতে আকাশে বড় বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে।

কী হয়েছিল শুক্রবার রাতে?

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, রেডারের সঙ্গে এটিসি-র যোগাযোগ থাকে বিএসএনএল-এর পরিষেবা মারফত। সেই পরিষেবায় বিভ্রাটের ফলে কলকাতার আকাশসীমার আওতায় থাকা ৮ রেডারের মধ্যে ঝাড়সুগুদা, কাটিহার, বারাণসী, নাগপুর ও গুয়াহাটির রেডারের সঙ্গে এটিসি-র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হুদহুদের জেরে বিশাখাপত্তনমের রেডার আগেই বিকল হয়ে গিয়েছে। আরও পাঁচটি রেডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েন এটিসি-র অফিসারেরা। এটিসি সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে কলকাতার আকাশসীমার বাকি তিনটি (বাদু, ভুবনেশ্বর ও কলকাতার) রেডার ঠিক মতো কাজ করেছিল। ব্রহ্মপুরের রেডার থেকেও উড়ান সংক্রান্ত তথ্য আসায় বিষয়টি সামলানো গিয়েছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ী জানান, উড়ানের গতিবিধি নজরদারির জন্য এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের নতুন অটোমেশন পদ্ধতি কার্যকর করতে এখনও ডিজিসিএ-র (ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন) অনুমতি পাওয়া যায়নি। তাই নতুনের পাশাপাশি পুরনো পদ্ধতিও ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএসএনএলের নেটওয়ার্ক বসে যাওয়ায় প্রায় ন’ঘণ্টা নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়নি। পুরনো পদ্ধতি চালু থাকায় আকাশের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা গিয়েছিল। শুদ্ধসত্ত্ববাবু বলেন, “পুরনো পদ্ধতি ছিল বলে কিছুটা যোগাযোগ তা-ও রাখা গিয়েছিল। অটোমেশন পদ্ধতি চালুর পরে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে আরও বড় বিপদ হতে পারে। এই ধরনের বিপত্তি একেবারেই কাম্য নয় বলে বিএসএনএল-কে জানিয়েছি।”

তবে একই সঙ্গে দু’টি যোগাযোগ ব্যবস্থায় কাজ করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েছেন এটিসি অফিসারেরা। তাঁদের অভিযোগ, একেই কর্মী সংকট চলছে। তার মধ্যেই বিমানের গতিবিধি নজরে রাখতে দু’টি পদ্ধতি চালাতে হচ্ছে। এমন বিপত্তিতে পরিস্থিতি সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।

আচমকা এই বিপত্তি নিয়ে কী বলছে বিএসএনএল? কেনই বা বিমানবন্দরের মতো জরুরি পরিষেবা মেরামত করতে ন’ঘণ্টা সময় লাগল?

বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ জানান, এই পরিষেবা ব্যাহত হলে তা প্রাথমিক ভাবে ঠিক করতে আট-ন’ ঘণ্টা লাগাই স্বাভাবিক। বিএসএনএলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার অমিত ভট্টাচার্য বলেন, “শনিবার সকালে রেডার-এটিসি যোগাযোগের লাইন সারানো হয়েছে।” বিমানবন্দর সূত্রের খবর, মূল যোগাযোগের লাইন ঠিক করতে পারেনি বিএসএনএল। শুদ্ধসত্ত্ববাবুও বলেন, “এটিসি-র ব্যবহারের জন্য একটি বিকল্প লাইন চালু করে দিয়েছে বিএসএনএল। তবে মূল যে লাইনটিতে বিপত্তি, তা সারানো হয়নি।” বিএসএনএল সূত্রের দাবি, মূল লাইন সারানোর কাজও এ দিন শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

9 hours flight atc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE