Advertisement
০৫ মে ২০২৪
বাগুইআটি-কাণ্ড

পরিকল্পনা করেই কি খুন, সন্দেহ

অ্যালবামের পাতা ওল্টালে দেখা যাবে পরপর শুধু অঞ্জনারই ছবি। মাঝেমধ্যে সেই অ্যালবামের কয়েকটা জায়গা ফাঁকা। সেখানে কোনও ছবি ছিল। কেউ তুলে নিয়েছে। বাগুইআটির জগৎপুর এলাকার তরুণী অঞ্জনা নস্করের খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁর অ্যালবাম ঘাটতে গিয়ে এমনটাই দেখতে পেয়েছেন পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা। এই অ্যালবামের প্রতিটি পাতা খুঁটিয়ে দেখার পরে পুলিশের সন্দেহ, যে ছবিগুলি অ্যালবাম থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে, তাতে সম্ভবত তাপস নামে অঞ্জনার সেই সঙ্গীর ছবি ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০১:৪২
Share: Save:

অ্যালবামের পাতা ওল্টালে দেখা যাবে পরপর শুধু অঞ্জনারই ছবি। মাঝেমধ্যে সেই অ্যালবামের কয়েকটা জায়গা ফাঁকা। সেখানে কোনও ছবি ছিল। কেউ তুলে নিয়েছে।

বাগুইআটির জগৎপুর এলাকার তরুণী অঞ্জনা নস্করের খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁর অ্যালবাম ঘাটতে গিয়ে এমনটাই দেখতে পেয়েছেন পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা। এই অ্যালবামের প্রতিটি পাতা খুঁটিয়ে দেখার পরে পুলিশের সন্দেহ, যে ছবিগুলি অ্যালবাম থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে, তাতে সম্ভবত তাপস নামে অঞ্জনার সেই সঙ্গীর ছবি ছিল। অঞ্জনার খুনের পর থেকেই ওই যুবককে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের সন্দেহ, তাপস নামে এলাকায় পরিচিত ওই যুবক ইচ্ছে করেই নিজের ওই সমস্ত ছবি অ্যালবাম থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। অঞ্জনার জগৎপুরের বাড়িতে ওই যুবকের কোনও ছবি বা ব্যবহার্য জিনিস এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।

খুনের ঘটনার পর থেকেই অঞ্জনার ওই সঙ্গীকে হন্যে হয়ে খুঁজছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। কিন্তু তার সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনও খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের আসল নাম যে তাপস নয়, এ বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত তদন্তকারী অফিসারেরা। তা হলে ওই যুবকের আসল নাম কী? তা এখনও পুলিশের কাছে পরিষ্কার নয়।

খুনের ঘটনার পর থেকে অঞ্জনার তিনটি মোবাইল ফোনও গায়েব। ফলে অঞ্জনার ফোনের কল লিস্ট থেকে যে ওই যুবকের সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করবে পুলিশ, সে সম্ভাবনাও আপাতত নেই। বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অঞ্জনার ওই সঙ্গী নিখুঁত ভাবে পরিকল্পনা করেই নিজের সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য লোপাট করেছে। এই সব দেখে মনে হচ্ছে, খুনটি হঠাৎ করে হয়নি, রীতিমতো পরিকল্পনা করা হয়েছিল এই খুনের জন্য।” এমনকী, ১৬ তারিখ সকালে অঞ্জনা ও ওই যুবক বাজারের ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকেছিল বলে এলাকার লোকেরা জানালেনও অঞ্জনার ঘরে বাজারের কোনও জিনিস পায়নি পুলিশ।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, তাপস দুর্গাপুরে চাকরি করে বলে অঞ্জনার বাড়িওয়ালাকে জানালেও আদৌ সে সেখানে চাকরি করত না। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তাপস একাই নিজের নাম গোপন করেনি, পুরো নাম বাড়িওয়ালাকে জানাননি অঞ্জনাও। মৃতার আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই তরুণীর পুরো নাম অঞ্জনা বিশ্বাস নস্কর। যদিও প্রতিবেশীদের কাছে অঞ্জনা নস্কর নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। পুলিশের দাবি, অঞ্জনা নিজেকে সেক্টর ফাইভের একটি কল সেন্টারের কর্মী বলে পরিচয় দিলেও তিনি আদতে পার্ক স্ট্রিটের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন। কলকাতার একাধিক পানশালাতেও তার কর্মসূত্রে যাতায়াত ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

অঞ্জনার বাড়ি বালির নিশ্চিন্দায়। সেখানে যোগাযোগ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, অঞ্জনার অভিভাবক বলতে রয়েছেন তাঁর এক দাদা। তবে ভাই-বোনের বিশেষ যোগাযোগ ছিল না। দাদার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, এর আগে দু’বার বিয়ে হয়েছিল অঞ্জনার। বাগুইআটিতে পরিচয় হিসেবে ব্যবহার করা নস্কর পদবীটা সম্ভবত তাঁর আগের স্বামীর।

কেন খুন হতে হল অঞ্জনাকে? পুলিশের সন্দেহ, একাধিক সঙ্গী ছিল অঞ্জনার। এই নিয়ে কোনও টানাপড়েনের কারণেই এই খুন বলে অনুমান পুলিশের। অর্কবাবু বলেন, “তাপস নামে এলাকায় পরিচিত ওই যুবককে গ্রেফতার করতে পারলেই রহস্যের জট অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ ছাড়া, অঞ্জনার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী রয়েছেন, তাঁর অঞ্জনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। খোঁজ চলছে তাঁরও।”

অঞ্জনার দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর শরীরে যে রকম পচন ধরেছে, তা নিয়েও ধন্দে রয়েছে পুলিশ। বাড়িওয়ালার তথ্য অনুযায়ী, ১৬ মে রাত থেকে ওই ঘরের তালা বন্ধ ছিল। সতেরো তারিখ সন্ধ্যা থেকে বাড়িওয়ালা বিক্রমজিৎ হালদার ও তাঁর পরিবার কটু গন্ধু পয়েছেন। আঠেরো তারিখ সকালে সেই গন্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ায় দরজার তালা ভেঙে অঞ্জনার দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তকারী অফিসারদের মতে মাত্র দেড় দিনে একটা শরীরে যতটা পচন হয়, তার থেকে অনেক বেশি পচন ধরেছিল ওই মহিলার শরীরে। ওই মহিলার গায়ের চামড়া মশারির জালের মতো আটকে ছিল।

বিধাননগর কমিশনারেটের এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “যতই গরম পড়ুক না কেন দেড় দিনে শরীরে এতটা পচন হওয়া খুবই আশ্চর্যের। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তবে তার পরও কিছু করা হয়েছিল কি না, ময়না তদন্তের রিপোর্টের পাওয়ার পরেই তা জানা যাবে বলে জানায় পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anjana naskar baguiati murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE