Advertisement
০১ মে ২০২৪
বিধাননগর কমিশনারেট

বাসিন্দাদের তথ্য পেতে মাইকে আর্জির ভাবনা

ভাড়াটে বা পেয়িং গেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে জানানোর কথা এ বার পাড়ায় পাড়ায় মাইকে ঘোষণা করতে চলেছে বিধাননগর কমিশনারেট। মাসখানেক ধরে ভাড়াটে সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দিতে কমিশনারেট এলাকায় ‘টেন্যান্ট ফমর্’ বিলি করা হয়েছে বাসিন্দাদের।

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৪ ০২:০৬
Share: Save:

ভাড়াটে বা পেয়িং গেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে জানানোর কথা এ বার পাড়ায় পাড়ায় মাইকে ঘোষণা করতে চলেছে বিধাননগর কমিশনারেট। মাসখানেক ধরে ভাড়াটে সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দিতে কমিশনারেট এলাকায় ‘টেন্যান্ট ফর্ম’ বিলি করা হয়েছে বাসিন্দাদের। এমনকী প্রতি ওয়ার্ড ধরে বেশ কয়েকটা মিটিংও হয়েছে থানায়। অভিযোগ, বেশির ভাগ বাসিন্দাই ওই ফর্ম পূরণ করে থানায় জমা দিচ্ছেন না। ফলে পরিস্থিতি পাল্টায়নি কিছুই। খুন বা চুরি ডাকাতির মতো ঘটনার তদন্তে নেমে বেশির ভাগ সময়েই পুলিশকে অন্ধকারে হাতড়াতে হচ্ছে। কমিশনারেটের এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণ মানুষের হুঁশ ফেরাতে টেন্যান্ট ফর্ম পূরণ করে থানায় জমা দিতে বলার বিষয়টি মাইকে ঘোষণার কথা ভাবা হচ্ছে।”

বিধাননগর কমিশনারেট গঠনের সময়েই এলাকায় পেয়িং গেস্ট, ভাড়াটে-সহ বহিরাগতদের সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার তৈরির কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো কাজও চলছে। কিন্তু বাসিন্দাদের কাছ থেকে এখনও যথেষ্ট পরিমাণ সাড়া না পাওয়ায় অগত্যা এই পথে হাঁটছে পুলিশ। তথ্যভাণ্ডার সে ভাবে তৈরি না হওয়ায় সল্টলেক ও সংযুক্ত এলাকায় অপরাধ ঠেকাতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানায় কমিশনারেট।

দিন কয়েক আগে বাগুইআটির জগৎপুর বাজারের কাছে অঞ্জনা নস্কর নামে এক তরুণীকে খুন করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতী। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে বাড়িওয়ালা অঞ্জনা সম্পর্কে কোনও তথ্যই রাখেননি। তদন্তে দেখা যায়, অঞ্জনা তাঁর পরিচয় থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সংক্রান্ত সব তথ্যই গোপন রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পুলিশ দুষ্কৃতীকে ধরে। এই ঘটনার পরেই পুলিশ ফের কমিশনারেটের মানুষকে ‘টেন্যান্ট ফর্ম’ পূরণ করে থানায় জমা দেওয়ার আর্জি জানায়। তাতেও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরপর ঘটে যাওয়া এ রকম ঘটনার পরেও এলাকার মানুষ সচেতন হচ্ছেন না।”

গত কয়েক মাসে বিধাননগর কমিশনারেটের বাগুইআটি, কেষ্টপুর, নিউ টাউন, বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় চুরি থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে। কিছু ঘটনার কিনারা হলেও বেশ কিছু ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। তদন্তকারীদের মতে, এই কমিশনারেট এলাকায় জনবসতির ঘনত্ব খুব বেশি। নিউ টাউনে তথ্যপ্রযুক্তির নানা অফিস থাকায় ভিন্ রাজ্য থেকে আসা প্রচুর কর্মী এলাকায় ভাড়াটে বা পেইং গেস্ট হিসেবে থাকেন। তাঁদের সম্পর্কেও সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না বলে পুলিশের অভিযোগ। নিউ টাউনের একটি সংস্থায় কর্মরত এমনই এক যুবকের মাস কয়েক আগে জলে ডুবে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। পুলিশ তাঁর বাড়িওয়ালার থেকে ওই যুবক সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্যই পায়নি। কমিশনারেটের এডিসি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “এলাকায় জনসংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে কোনও অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে স্থানীয়দের থেকেও সহযোগিতা দরকার। সে জন্য ভাড়াটে, পেইং গেস্ট বা পরিচারিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে আগে থেকে জানানো জরুরি।”

শুধু ভাড়াটে বা পেয়িং গেস্ট সম্পর্কে তথ্যই নয়, বাড়ির পরিচারিকা বা আয়া সম্পর্কেও কোনও রকম তথ্য পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাগুইআটি কেষ্টপুর এলাকায় রয়েছে এই ধরনের প্রচুর সেন্টার। অভিযোগ, সেন্টারগুলির বেশির ভাগই আয়া বা পরিচারিকাদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য রাখে না। আবার যে সব বাড়িতে ওই পরিচারিকা বা আয়ারা নিযুক্ত হন, সেই সব বাড়ির সদস্যরাও তাঁদের সম্পর্কে তথ্য রাখেন না। ফলে কোনও চুরি-ডাকাতির ঘটনায় পরিচারিকা জড়িত বলে সন্দেহ হলে সহজে কিনারা হয় না। তবে ব্যতিক্রমও যে নেই, তা নয়। কিছু দিন আগেই বাগুইআটির একটি বাড়িতে পরিচারিকা ফ্ল্যাটের আলমারির চাবি খুলে সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দেয়। ওই পরিচারিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ওই পরিবারের কাছে ছিল বলে সহজেই পুলিশ তাকে পাকড়াও করে। উদ্ধার হয় সোনার গয়নাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bidhannagar commissionerate aryabhatta khan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE