Advertisement
E-Paper

বর্ষবরণের ভোজের থালায় থিম কলকাতা

এমন কাঠফাটা গরমে বছর শুরু করতে হবে, এমনটা কি ভাবনায় ছিল? তবু বচ্ছরকার দিনটায় তো কব্জি ডুবিয়ে খেতেই হবে। সে ব্যাপারে এ সব গরম-টরমের তোয়াক্কা করলে চলে? তাই পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনে কোমরবেঁধে তৈরি শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। ট্রামে চড়ে টই-টই করবেন নতুন বছরের শহরে? এই সফরের প্রত্যেকটা স্টপে পুরনো কলকাতার স্বাদ।

পরমা দাশগুপ্ত ও সোমঋতা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫৩

এমন কাঠফাটা গরমে বছর শুরু করতে হবে, এমনটা কি ভাবনায় ছিল? তবু বচ্ছরকার দিনটায় তো কব্জি ডুবিয়ে খেতেই হবে। সে ব্যাপারে এ সব গরম-টরমের তোয়াক্কা করলে চলে? তাই পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনে কোমরবেঁধে তৈরি শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো।

ট্রামে চড়ে টই-টই করবেন নতুন বছরের শহরে? এই সফরের প্রত্যেকটা স্টপে পুরনো কলকাতার স্বাদ। এই যেমন ধরুন, শ্যামবাজার থেকে একটু চেখে নিলেন চিংড়ির বাটি-চচ্চড়ি, বাগবাজার খাওয়াল পোস্ত দিয়ে হিঞ্চে শাক, চিৎপুর থেকে এক টুকরো ইলিশের গঙ্গা-যমুনা আর কুমারটুলি থেকে এক কামড় হাঁসের ডিমের ডেভিল চেখে বেলগাছিয়ায় শেষ করলেন ডাঁটা দিয়ে মাংসের সঙ্গে। ‘দ্য পার্ক’ হোটেলের ‘স্যাফ্রন’ রেস্তোরাঁ করেছে সেই বন্দোবস্ত। এই চড়া রোদ্দুরে সত্যি সত্যি ট্রামে চড়ে ঘুরতে হবে না। রেস্তোরাঁর ঠান্ডা ঘরে বসে মেনুটা ঘাঁটলেই বুঝবেন, ‘দ্য ট্রাম-জার্নি’ নামে নববর্ষের বাংলা প্ল্যাটার সাজিয়েছে ‘স্যাফ্রন’। চাখতে পারেন কাঁচা আম এঁচোড়ের কালিয়া, ডুমুরের কোফতা আর শেষ পাতে এসে কাঁচা পেঁপের মিষ্টি, নবান্ন মরসুমের খাস মিষ্টি ‘পাস’।

‘তাজ বেঙ্গল’-এর ‘সোনারগাঁও’-এ তৈরি থাকবে গন্ধরাজ লেবুর ঘোল, গোবিন্দভোগের ভাত, চিংড়ি মালাইকারি, সর্ষেবাটা বোয়াল, গোটা মশলায় মাংস, রাজভোগ আর দই। রুবি মোড়ে ‘দ্য গেটওয়ে’ নববর্ষের উদ্যাপন শুরু করাবে তেঁতুল আর ডাব-কমলার সরবতে। থাকবে শোল মাছের ভর্তা, মাছের মাখা সালোঁ, চিংড়িচিটা ভাজি। সঙ্গে পাঁচফোড়ন মুর্গি, সর্ষে মাংসের মতো পদ।

জমাটি আয়োজন ‘হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনাল’-এও। তাদের রেস্তোরাঁ ‘কলস’-এ আমপোড়ার সরবত, মোরগ ও পোড়া টোম্যাটোর সুরুয়া পেরিয়ে ডুব দিন ভাপা পাবদা, কচি পাঁঠার কষে কষা, বিক্রমপুরের মুরগির রোস্ট, হাঁসের ডাকবাংলো, বেক্ড মালাই দিয়ে রসগোল্লা, কালাকাঁদ দিয়ে পায়েস, ল্যাংচার স্বাদে। হায়াত রিজেন্সি-র রেস্তোরাঁ ‘গুচ্ছি’র ভাঁড়ারে হাজির ডাব চিংড়ি, এঁচোড়ের ডালনা, কষা মাংস।

ফোরামের ‘ওহ্ ক্যালকাটা’য় রয়েছে মোচা ও মাংসের চপ, মাছের কচুরির সঙ্গে রাজবাড়ির কোফ্তা কারি, তিল-লঙ্কার তরকারি, চিংড়ি আম-কাসুন্দি, কাঁচা লঙ্কা মুরগির জমাটি ব্যুফে। শেষ পাতে কাঁচাগোল্লা, মালপোয়া, চকোলেট পেস্ট্রি, নলেন গুড়ের আইসক্রিম।

আমপোড়ার সরবতে গলা ভিজিয়ে ভোজ শুরু করুন ‘মার্কোপোলো’-য়। এর পরে আসবে কাজু কিশমিশ পোলাও, পোস্তর বড়া, চিংড়ি ভাজা, বেগুন পোস্ত, সুগন্ধি ভেটকি, কিমার শামি কাবাব, শশা ও নারকেল দুধ দিয়ে চিংড়ি মাছ, সর্ষে ভেটকি। শেষমেশ মিহিদানার মিষ্টিমুখ। পার্ক সার্কাসের ‘চারকোল গ্রিল’ও মেনুতে আনছে অল্পস্বল্প বদল। রসনার বায়না দস্তুর মতো সামলাতে পারেন বাসন্তি পোলাও, পাবদার ঝাল আর কষা পাঁঠা দিয়ে। ঢাকুরিয়ার ‘বিবি অফ তাজাস’ সাদরে ডাকছে লাউ মালাইকারি, চিতলের মুইঠ্যা, ভাপা ইলিশ, চিংড়ির ভর্তা, পাবদার তেল-ঝোলে মজতে। পার্ক স্ট্রিটের ‘ফরচুন সিলেক্ট লাউডন’ মাছরান্নার রকমফেরে পালন করবে নতুন বছর। তাদের ভাঁড়ারে রয়েছে তোপসে-মৌরলা ভাজা, ভেটকি পাতুরি, সর্ষে পাবদা, বাটি চিংড়ি। পার্ক স্ট্রিটেরই ‘টিউলিপ ইন’-এর ‘পার্ক প্যাভিলিয়ন’ রেস্তোরাঁ মুর্শিদাবাদ মাটন বিরিয়ানি, মুর্গির দম, ছানার মহিমা পোলাও, রত্না মুগ, মোহিনী সর্ষে, বেগুনের মালাইকারি দিয়ে সাজিয়েছে বঙ্গভোজের তালিকা। আর সল্টলেকের হোটেল ‘দ্য স্ট্যাডেল’ বন্দোবস্ত করছে মুর্শিদাবাদি ভুনা মাংস, মরিচ মুর্গি, তেল ইলিশের।

তবে আপাদমস্তক বং উদ্যাপনেও কবেই বা বাদ পড়েছে অ-বঙ্গীয় খানা? তাজ বেঙ্গলের ‘সোনারগাঁও’-তেই হাজির নবাবি ভোজ। থাকছে গোলাপের সুবাসে ভরপুর দইয়ের সরবত, মুর্গ নবাবি কাবাব, সিগ্রি সে আলু, গোস্ত-আন্ডা চাঁপ, মছলি কে সালান, মুর্গ গিল্লি বিরিয়ানি, কাঁঠাল কালিয়া, বুরানি রায়তা, ডাল নবাবি, তাওয়া লাচ্ছা পরোটা, ইলাইচি জামুন এবং ফিরনি।

হোটেল হিন্দুস্থানের ‘মিথ’-এ দেশি ভোজেই মিলেমিশে গিয়েছে ভিনদেশি সুস্বাদ। মেনু-তে রয়েছে চিকেন স্ট্র্যাসিটেলা স্যুপ, স্যাফ্রন ফ্লেভার্ড ভেজিটেবল অ্যান্ড পাস্তা ব্রথ, স্যালাড, আড় মাছের ঝাল, মুর্গ বিরিয়ানি কলকাতা স্টাইল, মাটন কোর্মা, ওরিয়েন্টাল প্রন সেজুয়ান স্টাইল, সিঙ্গাপুরিয়ান ক্র্যাব, চিকেন ইন ব্ল্যাক বিন সস, কন্টিনেন্টাল রোস্ট চিকেন উইথ রেড ওয়াইন, গ্রিল্ড ফিশ উইথ কেপার বাটার সস। আর চকোলেট গ্র্যান্ড ট্রাফেল কেক, হট ফাজ ব্রাউনি, রসগোল্লার পায়েস, গুলাবজামুন, ট্রাসেলস কেকে মধুরেণ সমাপয়েৎ।

দেশপ্রিয় পার্কের ‘অওধ ১৫৯০’ মন ভরাবে অভিজাত সব বিরিয়ানি দিয়েই। রান, শাহি পায়া, কিমা, শিকারি কোয়েল, মুর্গ পর্দা, মাহি কোফতা বা মুলতানি বিরিয়ানি। মণি স্কোয়্যারের ‘বৈশাখী ব্লাস্ট’ মেনুতে নানা চেনা নামের সঙ্গে আনকোরা কিছু পদ। যেমন বেক্ড আলাস্কা, ক্রিস্পি চিকেন টারেকো, সেকুয়া গ্রিল্ড চিকেন, ব্লু বেরি ক্রাম্বেল।

সুখাদ্যের টানে এই গরমে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটোছুটি পোষাচ্ছে না? বেশ তো! বৈশাখী ভোজে এক ছাদের নীচে গোটা শহরের চেনা সুস্বাদ হাজির করছে বালিগঞ্জের ‘পার্ক প্লাজা’। তাদের রেস্তোরাঁ ‘কে ১৯’-এর লাইভ কাউন্টারে লুচি, রাধাবল্লভী, পরোটা, ঝুরি আলুভাজার সঙ্গে থাকছে কফি হাউসের পোস্ত ফ্রায়েড চিকেন, বেনফিশের ফিশ ওরলি, নিজামের মাটন টিকিয়া রোল, পিটার ক্যাটের চেলো কাবাব, ডেকার্স লেনের আলুর দম, ট্যাংরার হাক্কা নুড্ল, অলি পাবের চিকেন স্টেক, কিউপি-র ভেটকি কালিয়া, রয়্যালের মাটন চাঁপ, আরসালানের ল্যাম্ব বিরিয়ানি, চিত্তরঞ্জন পার্কের মাটন ঘুগনি। মিষ্টি স্বাদকোরকগুলোকে উস্কে দিতে থাকছে নাহুমসের পেস্ট্রি, কে সি দাসের রসগোল্লা, বেক্ড মিহিদানা, সেন মহাশয়ের ক্ষীরের চপ।

অতএব? রোদ উঠেছে? থোড়াই কেয়ার! আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

parama dasgupta somrita bhattacharjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy