নিজেদের ‘সাফল্যের’ ঢাক পেটাতে কলকাতা পুরসভার তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নিল মেয়র পরিষদ। মেয়র চান, পুর বাজেটে বরাদ্দ হওয়া যে টাকা এখনও খরচ হয়নি, তার সিংহভাগই ওই প্রচারের কাজে ব্যয় হোক। পুরভোটের মুখে এটাই শাসক পুর-বোর্ডের অন্যতম রণকৌশল। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেও জানিয়ে দেন, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে প্রচার চলবে। তাঁর বক্তব্য, “এ সব দেখে হয়তো কেউ কেউ বলবেন টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে। তবে যে যা-ই বলুক, প্রচার চলবে।”
আনুমানিক হিসেবে খরচ না হওয়া টাকার পরিমাণ ১০-১৫ কোটিরও বেশি। ফলে প্রচারে টাকার যে অভাব হবে না, এমন ইঙ্গিতও পুর-কমিশনার এ দিনের বৈঠকে দিয়েছেন বলে মেয়র পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
‘পুরসভা ভাল কাজ করেছে’— মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওই সার্টিফিকেট পেয়ে বৃহস্পতিবার মেয়র পরিষদের বৈঠকে মূল আলোচনা হয় পুরভোটে দলের প্রচারের কৌশল নিয়েই। ভোটে তৃণমূলকে ফের ক্ষমতায় ফেরানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভাল কাজের তথ্য-নথি দিয়ে জোরকদমে প্রচারে নামবে পুর-বোর্ড। এতে ফেসবুক থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সব রকম প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যবস্থা হবে। এর জন্য যা খরচ হবে, তা পুরসভাই বহন করবে। এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পুর সূত্রের খবর।
এ বিষয়ে একাধিক মেয়র পারিষদ জানান, বৈঠকে ঠিক হয়েছে বিভিন্ন বরোয় যে টাকা খরচ হয়নি, তা থেকেই কেন্দ্রীয় ভাবে প্রচারের জন্য খরচ হবে। এক মেয়র পারিষদ জানান, বৈঠকে বরো চেয়ারম্যানেদের সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন মেয়র। কার বরোয় কত টাকা পড়ে রয়েছে, সংশ্লিষ্ট অফিসারদের তা জানাতে বলা হয়েছে। যে সমস্ত দফতরে কাজ না হওয়ায় টাকা পড়ে রয়েছে, তা-ও প্রচারে ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। অর্থাত্ এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করতেও পুরবোর্ড পিছপা হবে না বলে বৈঠকে হাজির একাধিক সদস্য সূত্রে জানা গিয়েছে।
বুধবার নিমতলায় শ্মশানঘাটের উন্নয়নে এক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পুরকর্তাদের পাশে বসিয়েই মমতা জানিয়ে দেন, কলকাতা পুরসভা ভাল কাজ করেছে। এর জন্য ফের তাঁর দলকে ভোটে জেতানোর ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার রেশ ধরেই মেয়র শোভনবাবু এ দিন বৈঠকে উপস্থিত সদস্যদের বলেন, তাঁরা নিজের দফতরে কী কী কাজ করেছেন তার তালিকা তৈরি করতে। ওই তালিকা নিয়েই সামগ্রিক ভাবে প্রচারে নামতে হবে বলে জানান তিনি।
দিন কয়েক আগেই পুরভোটে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রচারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। কোন ওয়ার্ডে কী কাজ হয়েছে, কোথায় গাফিলতি রয়েছে, কোথায় জল জমে— সব তথ্যই সংগ্রহ করে ওয়েবসাইট, ফেসবুকের মাধ্যমে ভোটের আগে এলাকাবাসীকে জানানো হবে। একই পথে নেওয়া হবে ভোটারদের মতামতও।
পুরভোটের আগে নিজেদের কাজকর্মের প্রচারে সেই একই পন্থা নিতে চায় তৃণমূল বোর্ডও। মেয়র শোভনবাবুর দাবি, বর্তমান পুর-বোর্ড ভাল কাজ করেছে। পানীয় জল থেকে জঞ্জাল অপসারণ— সবেতেই যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এ সবই শহরবাসীকে জানানো দরকার। পুরসভা সেই কাজটাই করবে বলে জানান মেয়র।
এর পাশাপাশি এ দিন পুর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আসন্ন পুরভোটের কথা মাথায় রেখে এ বারও ৪ বা ৬ মাসের জন্য ভোট অন অ্যাকাউন্ট করা হবে। এ জন্য রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ জুন পর্যন্ত। তার পরেই পূর্ণাঙ্গ বাজেট করা হবে বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy